×

তেঁতুলিয়ায় অপরিকল্পিত সেতু, সংযোগ সড়কে জলাবদ্ধতার শঙ্কা

ট্রিম প্রতিবেদক
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তিরনইহাট খালের ওপর প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে একটি কালভার্ট-সেতু নির্মাণকাজ চলছে। তবে সেতুটির এক পাশে আগে থেকে কোনো সড়ক না থাকায় এটি জনসাধারণের কাজে আসবে না মনে করছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

এদিকে খালের দুই পাশে গাছপালা উপড়ে ফেলে সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এতে আবাদি জমির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পুরো এলাকা ডোবায় পরিণত হবে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তিরনইহাট খালটি উত্তর দিক থেকে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণে রণচন্ডি নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়নের মন্ডলপাড়া এলাকায় খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করছে স্থানীয় ঠিকাদার আবু তাহেরের মালিকানাধীন তানিয়ার কনস্ট্রাকশন। ‘দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের গ্রামীণ রাস্তা ১৫ মিটার দৈর্ঘ্য সেতুকালভাট নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প এতে অর্থায়ন করছে।

রবিবার (২৫ মে) প্রকল্প এলাকায় দিয়ে দেখা যায়, সেতু নির্মাণসংক্রান্ত প্রাক্কলিত মূল্য ও প্রকল্পের সময়সীমা উল্লেখ করে কোনো নোটিশ টাঙানো হয়নি। নির্মাণাধীন সেতুর ওপরে রড বিছানো হয়েছে। সঙ্গে সিমেন্ট ঢালাইয়ের কাজের প্রস্তুতি চলছে।

এদিকে সেতুর পূর্বাংশে আনুমানিক ৫০০ গজ কাঁচারাস্তা মূল সড়কে সংযুক্ত রয়েছে। তবে সেতুর পশ্চিমাংশে কোনো সেতু নেই, বরং ছড়ানো ফসলের মাঠ। ফলে সেতুটির কোনো ব্যবহার উপযোগিতা থাকছে না।

অপর দিকে সেতুর পশ্চিমাংশে সংযোগ সড়ক হিসেবে এক্সকাভেটর (ভেকু) দিয়ে খালের দুপাশে ‘হাঁটার পথ’ (ওয়াক ওয়ে) তৈরি করা হচ্ছে। এ জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের বাঁশঝাড় ও গাছ উপড়ে ফেলা হচ্ছে। এই উচ্ছেদ কার্যক্রমে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো বিষয়টি মৌখিকভাবে জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সরকারসহ উপজেলা প্রশাসনের আপত্তি জানিয়েছে।

মন্ডলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম জানান, সড়ক তৈরি করতে গিয়ে তাঁর চা-বাগানের প্রায় ২৫ ফুট চা-গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে। একইভাবে ২০-৩০টি পরিবারের গাছ ও বাঁশ ঝাড় উপড়ে ফেলে সড়ক সংযোগ তৈরির কাজ চলছে।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও জেলা প্রশাসন জমি অধিগ্রহণ করবে শুনেছি। আমরা এখনো কোনো নোটিশ পাইনি। এখন শুনছি জলধারা (খালটি) খাস জমি। কিন্তু ১৯৬২ সালের রেকর্ডে সেখানে কোনো খাস জমি ও জলধারা ছিল না। এই অবস্থায় প্রকল্পের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে আই-ওয়াশ হিসেবে খালের দুপাশে নতুন কাঁচা সড়ক তৈরির কাজ চলছে।’

মন্ডলপাড়া গ্রামের আকবর আলী জানান, ‘সেতু-কালভার্টের পশ্চিম জমি অধিগ্রহণ করে সড়কটি সম্প্রসারণ না হলে কোনো লাভ নেই। কালভার্টের পশ্চিমে ২০ ফুট গভীর গর্ত ও ফসলের মাঠ। এখন সেতু-কালভার্টে চলাচলে সিঁড়ি (মই) দিয়ে উঠানামা করতে হবে।’

এলাকাবাসীর মতে, নির্মাণাধীন সেতু-কালভাট থেকে পশ্চিমে প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন সড়ক তৈরির মাধ্যমে ফকিরপাড়া গ্রামীণ সড়কে সংযুক্ত করতে হবে। তাহলে দরগাসিং, হাকীমপুর, তিরনই, মন্ডলপাড়া এলাকার বাসিন্দারা উপকৃত হতো।
স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র রিয়াজুল জানায়, সেতুর পশ্চিমের সড়কটি নির্মিত হলে ফরিকাপাড়া উচ্চবিদ্যালয়, দাখিল মাদরারা, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও তিরনইহাট ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) এলাকাবাসীর চলাচলের পথ সুগম হবে।
জানতে চাইলে তিরনইহাট ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলমগীর হোসাইন বলেন, ‘সরকারি জলধারার (খাল) খাসজমি দীর্ঘদিন বেদখল ছিল। জমি উদ্ধার করে দুধারে জনসাধারণের চলাচলের রাস্তা করা হচ্ছে। সড়ক দিয়ে এলাকার মানুষ খেতের ফসলাদি বহন করতে পারবে। এ ছাড়া খালটি সংস্কার হলে দেশীয় মাছ চাষের অভয়ারন্যসহ সুন্দর একটি পরিবেশ তৈরি হবে।’

নতুন সড়কের ফলে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা নিয়ে জানতে চাওয়া হয় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মাইদুল ইসলাম শাহর কাছে। তিনি বলেন, ‘মাঠের ফসলি জমির পানি নিষ্কাশনের জন্য একাধিক স্থানে রিং ড্রেন স্থাপন করা হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, ‘সেতু-কালভার্ট প্রকল্পটির এক-তৃতীয়াংশ কাজ যেহেতু সম্পন্ন হয়েছে, এখন কীভাবে জনসাধারণের চলাচলে কাজে লাগানোর যায়, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:

Post Comment