দুই পুত্রবধূকে সঙ্গে নিয়ে দেশে ফিরলেন খালেদা জিয়া
দুই পুত্রবধূ জুবাইদা রহমান ও সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথিকে সঙ্গে নিয়ে দেশে ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। লন্ডনে উন্নত চিকিৎসা শেষে দীর্ঘ চার মাস পর (৬ মে) সকালে দেশের মাটিতে পা রাখেন তিনি।
সকাল ১০টা ৪২ মিনিটে খালেদা জিয়া ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী কাতারের রাজপরিবারের বিশেষ বিমান (এয়ার অ্যাম্বুলেন্স) রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। দলের চেয়ারপারসনকে স্বাগত জানাতে আজ (মঙ্গলবার) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা বিমানবন্দরে পৌঁছান।
এর আগে সোমবার (৭ মে) খালেদা জিয়াকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্স লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দর ত্যাগ করে। পথে কাতারের রাজধানী দোহায় যাত্রাবিরতি হয়। লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গতকাল বিদায় জানান বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বাসা থেকে মাকে বিমানবন্দরে নিয়ে যান।
বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার প্রত্যাবর্তন দেশের গণতন্ত্র উত্তরণের পথ সহজ করবে। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া দীর্ঘকাল ফ্যাসিবাদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ফ্যাসিবাদ বিদায় নেওয়ার পর কারাবন্দিত্ব মুক্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়েছিলেন। সেখানে প্রায় ৪ মাস চিকিৎসা শেষে আজকে দেশে ফিরে আসছেন। এটা আমাদের জন্য, জাতির জন্য একটা আনন্দের দিন।’
আজ (মঙ্গলবার) সকাল থেকে প্রিয় নেত্রীকে অর্ভ্যথনা জানাতে অবস্থান নিতে শুরু করেন বিএনপি ও দলটির অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। খালেদা জিয়ার প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে দলীয় ও জাতীয় পতাকা নিয়ে এদিন ভোর থেকেই প্রায় ১০ কিলোমিটার পথের উভয় পাশে জড়ো হতে থাকেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
নির্ধারিত স্থান অনুযায়ী, বিএনপির ঢাকা উত্তর সিটি ইউনিটের নেতাকর্মীরা বিমানবন্দর থেকে লা মেরিডিয়ান হোটেল পর্যন্ত, ছাত্রদলের সদস্যরা লা মেরিডিয়ান থেকে খিলক্ষেত পর্যন্ত, যুবদল খিলক্ষেত থেকে হোটেল রেডিসন পর্যন্ত এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি ইউনিট বিএনপি রেডিসন থেকে আর্মি স্টেডিয়াম পর্যন্ত অবস্থান নিয়েছেন।
এছাড়া স্বেচ্ছাসেবক দল আর্মি স্টেডিয়াম থেকে বনানী কবরস্থান পর্যন্ত, কৃষক দল বনানী কবরস্থান থেকে কাকলী মোড় পর্যন্ত, শ্রমিক দল কাকলী থেকে বনানী শেরাটন পর্যন্ত এবং ওলামা দল, তাঁতী দল, জাসাস ও মৎস্যজীবী দল বনানী শেরাটন থেকে বনানী কাঁচাবাজার পর্যন্ত দাঁড়ান। মুক্তিযোদ্ধা দল ও অন্যান্য পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বনানী কাঁচাবাজার থেকে গুলশান-২ পর্যন্ত এবং মহিলা দল ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যরা গুলশান-২ থেকে গুলশান অ্যাভিনিউ পর্যন্ত অবস্থান নিয়েছেন।
এদিকে, দলটির নেতাকর্মীদের সমাগমের কারণে সড়কে যানজট দেখা দিয়েছে। এর ফলে বিশেষ করে এসএসসি পরীক্ষার্থী ও অফিসগামীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। গতকাল (সোমবার) রাস্তায় দাঁড়ানো থেকে সবাইকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেছিলেন, ‘যারা ম্যাডামকে স্বাগত জানাতে চান, তারা ফুটপাথে দাঁড়িয়ে পতাকা হাতে তাকে শুভেচ্ছা জানাবেন। আমরা নির্দেশনা দিয়েছি যেন কেউ রাস্তায় না দাঁড়ায়।’
এসএসসি পরীক্ষা থাকায় যানজট সৃষ্টি না করতে নেতাকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পরীক্ষার্থীদের যাতে কোনো ভোগান্তি না হয়, তা নিশ্চিত করতে আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব যাতে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছাতে কোনো সমস্যার সম্মুখীন না হন।’
খালেদা জিয়ার আগমনের সময় বিমানবন্দর থেকে কাকলী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করার জন্য তিনি জনসাধারণকে অনুরোধ করেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সোমবার জানায়, গুলশান-বনানী এলাকায় অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। জননিরাপত্তা নিশ্চিত ও শহরের যান চলাচলে বিঘ্ন না ঘটার জন্য সাংবাদিক ও আগত অতিথিদের যানবাহনের জন্য নির্ধারিত গাড়ি পার্কিংয়ের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের লন্ডনে যান বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তাঁর শারীরিক অসুস্থতার কথা জেনে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দিয়েছিলেন। সেটিতেই তিনি লন্ডনে যান। কাতারের আমিরের দেওয়া এয়ার অ্যাম্বুলেন্সেই আবার লন্ডন থেকে দেশে ফিরলেন তিনি।
লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসাধীন ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। টানা ১৭ দিন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি ২৫ জানুয়ারি থেকে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ছিলেন।
এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:
Post Comment