×

আ.লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের পর টুঙ্গীপাড়ায় প্রতিক্রিয়া নেই কেন?

বিচার না হওয়া পর্যন্ত রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার। সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সন্ত্রাস বিরোধী আইনে শনিবার (১০ মে) দলটিকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। পরে সোমবার (১২ মে) সরকারি আদেশ জারি করা হয়েছে। এতে কেউ সরকারের আদেশ অমান্য করলে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পেয়েছে পুলিশ।

গোপালগঞ্জ বরাবরই আওয়ামী লীগের আঁতুরঘর হিসেবে পরিচিত হয়। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান ও সমাধিস্থল জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলায়। এই আসনে ১৯৮৮ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সংসদ সদস্য নির্বাচন করেছেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে তিনি দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর বিক্ষোভ-প্রতিরোধ গুড়ে তুলে দলটি জেলার নেতাকর্মীরা। তবে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের পর কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি তারা।

আত্মগোপনে থাকা কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে জানিয়েছেন, (দলের) উচ্চমহল থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

অন্য সময়ের গোপালগঞ্জ

৫ আগস্টের পর প্রথমে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়। সন্ত্রাস বিরোধী আইনের (২০০৯) ১৮ ধারার (১) উপধারার ক্ষমতাবলে সংগঠনটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ২৩ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এ সময় গোপালগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করা হয়।

এর আগে শেখ হাসিনাকে ‘ক্ষমতাচ্যুত ও দেশত্যাগে বাধ্য করার’ অভিযোগ তুলে গত বছরের ৫ আগস্ট পরবর্তী কয়েকদিন গোপালগঞ্জে বিক্ষোভ-সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার দাবিতে সড়ক অবরোধও করে তারা। পরে ১০ আগস্ট আন্দোলনকারীদের মধ্যে থেকে সেনাসদস্যদের ওপর হামলা চালানো হয়। এতে দুই সেনাসদস্য ছাড়াও দুই শিশু গুলিবিদ্ধসহ ১৫ জন আহত হন। এ ঘটনায় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ১০৬ জনের নাম উল্লেখ ও ৩ হাজার ২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে সদর থানায় একটি মামলা হয়। এছাড়া দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা করা হয়েছে বিভিন্ন পক্ষ থেকে। এতে হামলা-মামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে গাঁ-ঢাকা দিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। 

শেখ হাসিনার দিকে তাকিয়ে

গোপালগঞ্জে বিভিন্ন মামলায় আসামি হওয়ায় আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মী আত্মগোপনে। অনেকে গ্রেপ্তারের পর জামিনে বের হয়ে এলেও মুখে কুলুপ এঁটেছেন। তবে তাঁদের কেউ কেউ বলছেন, বর্তমানে ভারতের আশ্রয়ে থাকা দলটির সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশের অপেক্ষা করছেন তাঁরা।

অন্তর্বর্তী সরকারের আদেশের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাতে শেখ হাসিনার নির্দেশনা দিকে চেয়ে আছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। জেলা আওয়ামী লীগের কমিটির সম্পাদকীয় পদধারী একজন নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের দল আওয়ামী লীগ। নিষিদ্ধের মাধ্যমে এই দলকে মানুষের মন থেকে মুছে ফেলা যাবে না। বর্তমান সরকার যা মন চাইছে, তা-ই করছে। কিন্তু এগুলো দেশের জনগণ মেনে নেবে না। নেত্রীর (শেখ হাসিনা) নির্দেশনা পেলেই সব কিছুর জবাব দেওয়া হবে।’

টুঙ্গিপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা বলেন, ‘আইনের নামে সাধারণ মানুষদের ভয় দেখিয়ে আওয়ামী লীগকে মুছে ফেলা সম্ভব নয়। আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা ও গ্রেপ্তার করে দমিয়ে রাখা যাবে না। আমরা একটি ডাকের অপেক্ষায় রয়েছি।’

বিএনপির প্রতিক্রিয়া সামান্যই

শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়া পর এলাকায় বিএনপিসহ বিভিন্ন দল আনন্দ মিছিল করেছিল। এ বার আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পর জেলার বিএনপি, জামায়াত, গণ অধিকার পরিষদ ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সহ কোন দল গোপালগঞ্জে উচ্ছ্বাস করেনি।

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধাদেশকে স্বাগত জানিয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রাফিকুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে সারা দেশের অর্থনীতি, সমাজ, ভোট ও গণমাধ্যমের ওপরে যে নগ্ন হস্তক্ষেপ করেছে, তাদের জন্য এমন (নিষিদ্ধ) সিদ্ধান্ত হওয়াই উচিত ছিল। যেহেতু এগুলো রাজনৈতিক বিষয়, তাই বিএনপির কেন্দ্র থেকে যে সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা দেবে, আমরা সেভাবেই কাজ করব।’

এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:

Post Comment