×

বকেয়া বেতন-বোনাস না পেয়ে ‘মার্চ টু যমুনা’

রাজধানীর শ্রম ভবনের সামনে হাজারো শ্রমিক ৯ দিন ধরে একপ্রকার নীরবেই অবস্থান করছিলেন। টিএনজেড গ্রুপের আটটি পোশাক কারখানার ৫ হাজার ২১৯ জন শ্রমিক ও কর্মচারী তাঁদের বকেয়া বেতন, ঈদ বোনাস ও অন্যান্য ভাতার দাবিতে টানা আন্দোলন চালাচ্ছিলেন। আজ (২০ মে) শ্রমিকেরা পথে নেমেছেন বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে ‘মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি নিয়ে। যে দাবিগুলো পূরণ হবার কথা ছিল ঈদুল ফিতরেই।

আশ্বাসে আশ্বাসে ন্যায্য পাওনা ভুলে যাওয়া দিন

গাজীপুরের টিএনজেড গ্রুপের আটটি কারখানার প্রায় ৫,২০০ পোশাক শ্রমিক ও কর্মচারীর দাবি, প্রতিষ্ঠানটির কাছে তাঁদের বকেয়া বেতন, ঈদ বোনাস, নোটিশ পে, সার্ভিস বেনিফিটসহ সবমিলিয়ে প্রায় ৫৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। ঈদুল ফিতরের আগে মালিকপক্ষ ৩ কোটি টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিলেও শেষ পর্যন্ত ২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা দেওয়া হয়। জনপ্রতি গড়ে ৯ হাজার ১০০ টাকা করে পাওয়া গেছে, যা ছিল তাঁদের প্রকৃত পাওনার একটি ক্ষুদ্র অংশমাত্র।

অনেক শ্রমিক একেবারেই কোনো টাকা পাননি। তারপরও টানা আশ্বাসে আশ্বস্ত হয়ে শ্রমিকেরা ঈদের আগে আন্দোলন স্থগিত করেছিলেন। কিন্তু আজ প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেছে, সামনে আরেকটি ঈদ। দাবিকৃত বকেয়ার বাকি অংশ মেটানো তো দূরের কথা, আবারও ফিরেছে আশ্বাস আর হেনস্তা।

যাব না রেযাব নাবেতন ছাড়া যাব না

আজ মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে বিজয়নগরের শ্রম ভবনের সামনে থেকে যাত্রা শুরু করে পোশাক শ্রমিকদের মিছিলটি। গন্তব্য ছিল কাকরাইলে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবন। কিন্তু কাকরাইল মোড়ে পৌঁছাতেই পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। সেখানে তাঁরা স্লোগানে স্লোগানে কাঁপিয়ে তোলেন গোটা এলাকা—‘যাব না রে, যাব না, বেতন ছাড়া যাব না’, ‘দুনিয়ার মজদুর, এক হও’, ‘বাঁচার মতো বাঁচতে দাও, নইলে গদি ছাইড়া দাও’।

শ্রমিক নেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ৯ দিন ধরে আন্দোলন করছি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও উপদেষ্টার দপ্তরে বহুবার কথা বলেছি। কিন্তু কেউ বেতন বুঝিয়ে দিতে পারেনি। তাই আজ বাধ্য হয়েই যমুনা ঘেরাওয়ের কর্মসূচি নিয়েছি। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা কাকরাইল ছাড়ছি না।’

ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাতবু সমাধান নেই

শ্রমিকদের দাবি বাস্তবায়নে সরকার ১২টি পোশাক কারখানার মালিকের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে গত ঈদুল ফিতরেই। বকেয়া নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা বিদেশে যেতে পারবেন না। শ্রমিকদের বেতন না দিয়ে মালিকরা এখনও নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন বলেই অভিযোগ।

আশ্বাসে শুরুআশ্বাসেই শেষ

এই আন্দোলন হঠাৎ করেই আসেনি। চলতি বছরের মার্চের ২৭ তারিখেও টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকরা একই দাবিতে শ্রম ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছিলেন। তখনকার প্রতিবেদনেও দেখা যায়, বেশিরভাগ আন্দোলনকারী নারী শ্রমিক, যাঁরা ভোর থেকে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তারপর ছিল ২২ এপ্রিলের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক, যেখানে ৭ মের মধ্যে বকেয়া পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নও হয়নি। বরং ৭ মে কারখানার সামনে জড়ো হওয়া শ্রমিকদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেননি। অতঃপর বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন, যেখানে পুলিশি হামলায় ২০ জনের বেশি আহত হন।

গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সত্যজিৎ বিশ্বাস এক সমাবেশে বলেন, ‘তিন মাস ধরে শ্রমিকরা রাস্তায়। কেউ পদক্ষেপ নেয়নি। এখন আর শ্রমিককে দোষারোপ নয়—রাষ্ট্রকে দায় নিতে হবে।’

এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:

Post Comment