×

সমুদ্র থেকে শিখরে: এক তরুণের স্বপ্নযাত্রা

পাড়ি দিয়েছেন সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে হিমালয়ের চূড়া—বাংলাদেশের তরুণ ইকরামুল হাসান শাকিল গড়েছেন এমন এক বিরল ইতিহাস, যা কেবল কল্পনাতেই মানায়। ২৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের ইনানি সৈকত থেকে হাঁটা শুরু করে ৮৪ দিনে ১৪০০ কিলোমিটার অতিক্রম করে গতকাল সোমবার সকালে তিনি পৌঁছান পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টে।

এই অসাধারণ অভিযানে শাকিল শুধু সপ্তম বাংলাদেশি হিসেবেই এভারেস্টে পা রাখেননি, বরং হাঁটার মাধ্যমে ‘সি টু সামিট’ পদ্ধতিতে সবচেয়ে কম সময়ে সবচেয়ে বেশি পথ পাড়ি দেওয়া কনিষ্ঠ পর্বতারোহী হিসেবে গড়েছেন অনন্য রেকর্ড। এর আগে কেবল একবার, ১৯৯০ সালে, অস্ট্রেলীয় অভিযাত্রী টিম ম্যাকার্টনি-স্নেপ একই পদ্ধতিতে সফল হয়েছিলেন। তবে শাকিল তাঁর পথকে দীর্ঘ করেছেন এবং সময়কে কমিয়েছেন।

নেপালের ‘এইটকেএক্সপেডিশনস’ অভিযানের সফলতা নিশ্চিত করেছে। ক্যাম্প-৪-এ বিশ্রামে থাকা শাকিল সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর সমন্বয়কারীরা।

গাজীপুরের কালিয়াকৈরের ছেলে শাকিল ছোটবেলা থেকেই পাহাড়ের প্রতি টান অনুভব করতেন। উচ্চমাধ্যমিক শেষে ভারতের নেহরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিং থেকে পর্বতারোহণের প্রাথমিক ও উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করেন এই সাহসী স্বপ্নের জন্য। ২০২৩ সালে ১৭০০ কিমি হিমালয় ট্রেইল হেঁটে দেশকে গর্বিত করেছিলেন তিনি।

এবারের অভিযানে তিনি হেঁটে পার হন বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল, কাটান দিনরাত নানা প্রতিকূলতায়। ইনানি থেকে ঢাকায় পৌঁছান ১২ দিনে, এরপর গাজীপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পঞ্চগড়, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং পেরিয়ে ৩১ মার্চ নেপালে প্রবেশ করেন।

শাকিল ইতিপূর্বে আরোহণ করেছেন কায়াজো রি, হিমলুং, দোলমা খাংয়ের মতো বিপদসংকুল শৃঙ্গ। তবে এবারকার জয় ছিল একেবারেই ব্যতিক্রমী—আত্মশক্তির পরীক্ষা, লাল-সবুজের মর্যাদার শপথ।

শাকিলের এ কীর্তিতে উৎসব গাজীপুরের জনতা উচ্চ বিদ্যালয়, তাঁর পরিবার ও বন্ধুমহলে। মায়ের কণ্ঠে ছিল উদ্বেগে মোড়ানো গর্ব, ‘ঘুম হয় না আমার। শেষ কথা হয়েছিল ১৬ তারিখ রাতে। এখন শুনছি ও শিখরে উঠেছে। আল্লাহ ওকে ভালো রাখুক।’

এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:

Post Comment