কমলগঞ্জে রাস্তার পাশের জমি দখল করে দোকানপাট, নালার মুখ বন্ধ
স্ট্রিম প্রতিবেদক
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে একটি সরকারি রাস্তার জমি প্রায় বিশ বছর ধরে দখল করে বেশ কয়েকটি দোকান ও সমিতির কার্যালয় গড়ে তোলা হয়েছে। এসব দোকান ভাড়া ছাড়াও এককালীন সিকিউরিটির টাকা তোলেন দখলদারেরা। উপজেলার শমশেরনগর এলাকার হাজী মো. উস্তওয়ার বালিকা বিদ্যালয়ের বিপরীতের সড়কের পাশে এই দখলদারি চলছে। একই সঙ্গে দোকানপাটের পেছনে চা-বাগানের ঝিলের পানি প্রবাহের নালার মুখে ময়লা-আবর্জনার ফেলা হচ্ছে। ফলে বর্ষায় জলাবদ্ধতা হয়ে আবাসিক এলাকায় পানি ওঠার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন।
উপজেলার শমশেরনগর চৌমুহনা থেকে কমলগঞ্জ অভিমুখে গেছে সরকারি রাস্তাটি। এর মধ্যে হাজী মো. উস্তওয়ার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের বিপরীতে সরকারি জমি দুই দশক ধরে দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে বেশ কয়েকটি স্থাপনা। এর মধ্যে পর্যায়ক্রমে রাস্তার সরকারি জমিতে একটি ভলকেনাইজিং, দুটি রেস্তোরাঁ, দুটি স্ট্যাশনারি দোকান, সাইকেল মেকারের দোকান, সিএনজি অটোরিকশা চালক সমিতি, মাইক্রোবাস (লাইটেস) চালক সমিতি ও ট্রাক, পিকআপ চালক সমিতির অফিস স্থাপন করা হয়। এ পথে সরকারি অনেক কর্মকর্তা ও সড়ক জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা যাতায়াত করলেও এসব স্থাপনা উচ্ছেদে কোনো পদক্ষেপ নেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, কালীবাড়ি মার্কেটের বিপরীতে চা-বাগান ঝিলের সীমানাপ্রাচীরের বাইরে প্রায় ১৫ বছর আগে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি রাস্তার সরকারি জমি দখল করে। পরে সেখানে দোকান স্থাপন করা হয। এসব দোকান থেকে সিকিউরিটির টাকা নিয়ে ভাড়া দিয়েছেন।
সরেজমিনের যা দেখা গেল
দখলকৃত জমির পিছনে শমশেরনগর কাঁচাবাজারের ময়লা-আবর্জনা ফেলে চা-বাগানের ঝিলের পানি প্রবাহের নালার মুখ বন্ধ হয়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়। ময়লায় নালার মুখ বন্ধ হওয়ায় মাছ বাজারসহ বাসাবাড়ির ময়লা কালো পানি রাস্তার ওপরে চলে এসছে। ফলে এসব ময়লা পানি মাড়িয়ে চলাচলে এ এলাকায় জনদুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে দেখে গেছে, শমশেরনগর-কমলগঞ্জ সড়কের আইডিয়াল কিন্ডার গার্টেন স্কুল ও হাজী মো. উস্তওয়ার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মধ্যবর্তী চা-বাগানের ঝিল। গত টানা কয়েক মাস খরা ও অনাবৃষ্টি থাকায় ঝিল শুকিয়ে যায়। তবে দেয়ালের বাইরের অংশ দিয়ে মাছবাজারসহ আবাসিক এলাকার বাসাবাড়ির ময়লা পানি প্রবাহিত হয়। প্রতিদিন ময়লা ফেলে এ ঝিলের পানিপ্রবাহের দেয়ালের বাইরের ও ভেতরের নালার মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বাজারের নালার কালো ময়লা পানি এখন রাস্তা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে থাকে।
এ অবস্থায় এ পথে চলাচলকারী স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী, মসজিদের মুসল্লি ও সাধারণ মানুষজন ময়লা পানি মাড়িয়ে চলাচল করছেন। অনেক সময় এ পথে চলাচলকারী দ্রুতগামী যানবাহনের চাকায় ময়লা পানি মানুষজনের গায়ে ছিটকে পড়ে।
অনেকেই ভুক্তভোগী
হাজী মো. উস্তওয়ার বারিখা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরে আলম সিদ্দিক বলেন, তাঁর বিদ্যালয়ে এখন এসএসসি পরীক্ষা চলছে। নালার মুখ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা রাস্তার ময়লা পানি মাড়িয়ে কেন্দ্রে আসছে।
আইডিয়াল কিন্ডার গার্টেন স্কুলের শিক্ষক আইনুন নিশাত বলেন, ‘গত বছরও ভরা বর্ষায় এ নালার মুখ বন্ধ থাকায় স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে হয়ে ঝিলের পানি তাদের স্কুলের ও আশাপাশের বাসাবড়িতে উঠেছিল। পরে এলাকাবাসী মিলে নালার মুখ পরিষ্কার করলে আবারও নালায় স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ হলে পানি নেমে যায়।’
শমশেরনগর চা-বাগান ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইয়াকুব আলী বলেন, ‘প্রতিবছর বাজার ময়লা-আবর্জনা ফেলে ঝিলের পানিপ্রবাহের নালার মুখ বন্ধ করা হয়। গত এক সপ্তাহে দুবার চা-বাগান থেকে এ নালার মুখ পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে দেয়ালের বাইরের অংশের নালার মুখজুড়ে রাস্তার জমি দখল করে কিছু অবৈধ দোকার স্থাপন করায় তাঁরা আরও আবর্জনা পরিষ্কার করতে পারেননি।’
বাজার ইজারাদার আসাইদ মিয়া বলেন, ১৪৩২ বাংলার জন্য ৭২ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় বাজার ইজারা নিয়েছেন তিনি। মাত্র ১০-১৫ দিন হলো তিনি বাজারের দায়িত্ব নিয়েছেন। আগের ইজারাদার নালা নিয়মিত পরিষ্কার করে রাখেনি বলে এ ময়লা আবর্জনার স্তুপ হয়েছে। তারপরও তিনি দ্রুত নালার মুখের ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করিয়ে নালার মুখ পানি প্রবাহের জন্য মুক্ত করে দিবেন।
কী বলছেন দখলদার ব্যবসায়ী
দখলকৃত জায়গার পুরি-সিঙ্গা বিক্রি করেন সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এই জায়গার মালিক শিবলু মিয়া। তাঁর কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে দোকানদারী করছি। প্রতি মাসে তিন হাজার টাকা দিই। মালিক নিজে এসে ভাড়া তোলেন।’ একই জায়গার আরেক চা-ব্যবসায়ী মুমিন মিয়া বলেন, ‘মাহমুদ আলীর কাছ থেকে ঘর ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছি।’
ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কথা বলে মাহমুদ আলী, মঞ্জু মিয়া, শিবলু আহমেদ, আইয়ুব আলী ওই জায়গা দখল করে দোকান তুলে ভাড়া দেন বলে জানা গেছে। দখলদাদের মধ্য একজন মাহমুদ আলীর কাছে জায়গা দখলের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘এটা সরকারি জায়গা, ঠিক আছে। তবে আমি ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে জায়গা দখল নিয়ে ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছি।’
জানা গেছে, সাইফুল ইসলাম নামে একজনের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা বিনিময়ে জায়গা দখল নেন মাহমুদ আলী। তিনি আরও বলেন, ‘আমার মতো আরও কয়েকজন এভাবে দখল নিয়ে দোকানকোটা ভাড়া দিয়েছেন।’
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাখন চন্দ্র সূত্রধর এ সমস্যার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘দুই-একদিনের দিনের ভেতর এসব বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:
Post Comment