×

সৌদিতে বাংলাদেশি দুই ভাইকে হত্যা

স্ট্রিম প্রতিবেদন 

সৌদি আরবের দাম্মাম শহরের একটি ফ্ল্যাটে বাংলাদেশি দুই ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। গত বুধবার সন্ধ্যায় সৌদি পুলিশ ফ্ল্যাট থেকে দুই ভাই কাকন ও সাগরের মরদেহ উদ্ধার করে। হত্যার খবর ওই রাতেই গাজীপুর মহানগরের উত্তর ভুরুলিয়ায় তাঁদের বাড়িতে পৌঁছে।

নিহত কাকন ও সাগরের স্বজনরা জানান, বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে কাকন চাকরির সন্ধান করছিলেন। এরই মধ্যে ঢাকার নয়াপল্টনের সামিয়া ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক বাহার উদ্দিনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরে ২১ লাখ টাকা চুক্তিতে চাকরি ভিসায় কাকনকে কানাডায় পাঠানোর প্রস্তাব দেন বাহার উদ্দিন। ৩ লাখ টাকা নিয়ে দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও তিনি কাকনকে কানাডা পাঠাতে পারেননি। পরে কাকননের ছোট ভাই সাগরকে সৌদি আরব পাঠানোর প্রস্তাব করেন বাহার উদ্দিন। ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে গত বছরের অক্টোবর মাসে সৌদি পাঠানো হয় সাগরকে।

নিহত ব্যক্তির স্বজনরা বলেন, কাজের পরিবর্তে তাকে দাম্মামে একটি ঘরে আটকে রেখে আরও ৪ লাখ টাকা দাবি করা হয় পরিবারের কাছে। ছেলের কথা ভেবে আরও ৪ লাখ টাকা দিতে বাধ্য হন সাগরের বাবা মোশারফ লম্বরি। মোশারফ হোসেন বলেন, টাকা নিয়েও ছেলেকে ভালো চাকরি না দিয়ে খাবার ডেলিভারির কাজ দেয়। পরে কাকনকেও সৌদির মদিনা ইউনিভার্সিটিতে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রস্তাব দেন বাহার উদ্দিন।

মোশারফ হোসেন লম্বরি বলেন, ‘নতুন করে ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর কাকনকে সৌদি নিয়ে যান বাহার। সেখানে কাজ না দিয়ে দুই ভাইকে একটি ঘরে আটকে রাখেন। বিষয়টি জানার পর বাহার উদ্দিন ওমরা ভিসায় সৌদি আরব গিয়ে দুই ছেলেকে দেখে আসার প্রস্তাব করেন। গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি বাহার উদ্দিনের সঙ্গে সৌদি আরব যান মোশারফ হোসেন। তিনি বলেন, গিয়ে দেখি খাবার ডেলিভারির কাজ দেওয়া হয়েছে ছেলেদের। ঠিকমতো খেতে দেওয়া হয় না। রাখা হয়েছে ছোট্ট ঘরে। ২২ ডিসেম্বর তিনি দেশে ফিরেন। তবে কাকন ও সাগরের কাগজপত্র ঠিক করার কথা বলে সৌদি আরব থেকে যান বাহার। আসার সময় বাহার পলিথিন মোড়ানো একটি ব্যাগ দিয়ে তা ঢাকার ঠিকানায় পৌঁছে দিতে বলেন মোশারফ হোসেনকে। ব্যাগে কি ছিল তিনি দেখেননি। সৌদি বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশ তল্লাশি করে একটি পুটলি উদ্ধার করে। পরে সেই পুটলি রেখে তাঁকে ছেড়ে দেয়। তিনি ফিরে আসার পরদিন বাহার উদ্দিন বাংলাদেশে চলে আসেন। ব্যাগে থাকা পুটলি ফেরত চান।

নিহত দুই ভাইয়ের বাবা অভিযোগ করে বলেন, ‘ইমিগ্রেশন পুলিশ পুটলিটি রেখে দিয়েছে জানালে সেটিতে ১৩ লাখ টাকার সোনা ছিল দাবি করে টাকার জন্য চাপ দেওয়া হয় বলে জানান মোশারফ। কয়েক দফা হুমকি দেন। বলেন টাকা না দিলে সৌদিতে থাকা ছেলেদের ক্ষতি হবে। এসব ঘটনায় তিনি গাজীপুর মহানগরের সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন। ৯ মে একটি মাইক্রোবাসে করে ঢাকা থেকে একদল সন্ত্রাসী নিয়ে এসে অস্ত্র উঁচিয়ে মোশারফকে খুঁজতে থাকেন। জিম্মি করে মোশারফরের বৃদ্ধ বাবা আবুল কাশেম লম্বরিকে তুলে নিয়ে যায় এবং দুই ছেলেকে হত্যার হুমকি দেয়। ঘটনার সময় মোশরফ বাড়িতে ছিলেন না। ৯৯৯ ফোন দিলে সদর থানা পুলিশ আবুল কাশেমকে উদ্ধার করে।

মোশারফ হোসেন বলেন, মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে দুই ভাই। দুপুরের পর দরজার নিচ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়তে দেখে ফ্ল্যাট মালিক পুলিশে খবর দেন। সিসি ফুটেজ দেখে মঞ্জু নামে বাংলাদেশি এক যুবককে পুলিশ শনাক্ত করেছে। তাঁকে দিয়েই বাহার তার দুই সন্তানকে খুন করে থাকতে পারে ধারণা মোশারফ হোসেনের।

এই ঘটনায় অভিযুক্ত বাহারের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

গাজীপুর মহানগরের সদর থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন,  পরিবারের পক্ষ থেকে এই হত্যার খবর তাঁদের জানানো হয়েছে।

এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:

Post Comment