×

যেভাবে টিকে থাকার জন্য লড়ছে চা-শ্রমিকের ভাষা

সজিব তুষার

বাংলাদেশের চা-বাগান এলাকায় বসবাসরত নানা জাতিগোষ্ঠীর ভাষা আজ টিকে থাকার জন্য লড়ছে। মুন্ডারি, সাদরি, খাড়িয়াসহ অন্তত ১৫টি ভাষা বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে, যেগুলোর বেশির ভাগই শুধু প্রবীণদের স্মৃতিতে টিকে আছে। মৌখিক ঐতিহ্য, প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের অভাব ও বড় ভাষার আধিপত্য এই সংকটের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত চা-বাগানগুলো শুধু চা-পাতার নয়, বরং একাধিক জাতিগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতির বিচিত্র ভান্ডার। তবে এসব জনগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি এখন অনেকটাই বিপন্ন। 

চা-শ্রমিক জনগোষ্ঠীর ভাষাগুলোর মধ্যে রয়েছে মুন্ডারি, সাদরি, ও খাড়িয়া। এগুলো এখনো কিছুটা ব্যবহার করা হলেও ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন কমছে। অধিকাংশ ভাষা মৌখিক হওয়ায় প্রজন্মান্তরে সেগুলো সংরক্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

চা-শ্রমিক ও আদিবাসী উন্নয়নকর্মী পিউস নানোয়ার জানান, বর্তমানে চা-শ্রমিকদের ব্যবহৃত অন্তত ১৫টির মতো ভাষার বেশিরভাগই আজ বিপন্ন।

পিউস নানোয়ার আরও বলেন, ভাষা আসলে অনেকটাই হারিয়ে গেছে, যা কিছু বেঁচে আছে, তা শুধুই প্রবীণদের স্মৃতিতে। তাঁর মতে, বড় ভাষার আধিপত্য এবং প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের অভাব এই পরিস্থিতির অন্যতম কারণ।

চা-শ্রমিকদের বসবাস মূলত সিলেট, মৌলভীবাজার ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায়। মূলত ভারতের ঝাড়খণ্ড, বিহার, উড়িষ্যা, ছত্তিশগড়, পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্রিটিশ উপনিবেশ আমলে তাঁদের এনে বসানো হয়। তাঁরা থেকে গেছেন সেখানেই। যার প্রভাব পড়েছে সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত পরিচয়ে।

চা-জনগোষ্ঠীর ভাষাগুলোর কোনোটিরই নির্ধারিত লিখিত রূপ নেই। পিউস নানোয়ার ও তাঁর দল ভারতের আসাম ও ঝাড়খণ্ড থেকে কিছু সাহিত্য ও ব্যাকরণের বই সংগ্রহ করেছেন, যা দিয়ে ভাষা শেখার একটি ভিত্তি গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। 

পিউস নানোয়ার বলেন, ‘আমরা এখনো সিদ্ধান্তে আসিনি, রোমান হরফে করব, না কি বাংলায়।’

২০১৩ সালের জাতীয় শিক্ষানীতির খসড়ায় মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার কথা থাকলেও চা-জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে এর বাস্তবায়ন খুব একটা দেখা যায়নি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গবেষণা ও রেকর্ড সংরক্ষণে সহায়তা করলেও, বৃহৎ পরিসরে কোনো রাষ্ট্রীয় কর্মপরিকল্পনা এখনও গৃহীত হয়নি।

পিউস নানোয়ার মনে করেন, ভাষা সংরক্ষণের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও অর্থায়ন জরুরি। 

সংস্কৃতির পরিবর্তনও লক্ষণীয়। বিভিন্ন পূজা-পার্বণ এবং ঐতিহ্যবাহী খেলা বর্তমানে অনেকাংশেই অনুপস্থিত। অনেক ক্ষেত্রেই এসব অনুষ্ঠান এখন স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে গেছে বা সীমিত পরিসরে চর্চা হচ্ছে।

এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:

Post Comment