আয়করে বিশেষ ছাড় পাচ্ছেন জুলাই যোদ্ধারা
২ জুন সোমবার অন্তর্বর্তী সরকার নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করছে। এ বাজেটের উল্লেখযোগ্য দিক হলো, ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ জন্য আয়করে বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা।
জুলাই যোদ্ধা কারা
জুলাই ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গেজেট আকারে ‘জুলাই যোদ্ধা’ তালিকা প্রকাশ করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার আহত ব্যক্তিদের জন্য এককালীন আর্থিক সহায়তা, মাসিক ভাতা, চিকিৎসা সুবিধা এবং পুনর্বাসনের সুযোগসহ আয়করে বিশেষ ছাড় দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আহতদের সুবিধা ও পরিচয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তাঁদের পরিচয়পত্র প্রদান এবং সরকারি সেবায় অগ্রাধিকার প্রদানের ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
আহত ব্যক্তিদের সুবিধা ও শ্রেণিবিন্যাস তিন ভাগে করা হয়েছে। ‘ক’ শ্রেণিতে ৪৯৩ জন অতি গুরুতর আহত ব্যক্তি আছেন, যারা চিকিৎসার পরও অন্যের সহায়তা ছাড়া জীবনযাপন করতে অক্ষম। তাঁদের জন্য এককালীন মোট পাঁচ লাখ টাকা অর্থ সহায়তা (২০২৪–২৫ অর্থবছরে দুই লাখ এবং ২০২৫–২৬ অর্থবছরে তিন লাখ), মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা, আজীবন চিকিৎসা সুবিধা, দেশি–বিদেশি হাসপাতালের চিকিৎসা ও কর্মসহায়ক প্রশিক্ষণ, পুনর্বাসন ও পরিচয়পত্র প্রদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ‘খ’ শ্রেণির ৯০৮ জন গুরুতর আহত ব্যক্তি আংশিক সহায়তার মাধ্যমে জীবন চালাতে সক্ষম। তাঁদের এককালীন তিন লাখ টাকা (২০২৪–২৫ সালে এক লাখ এবং ২০২৫–২৬ সালে দুই লাখ), মাসিক ১৫ হাজার টাকা ভাতা, প্রশিক্ষণ ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি চাকরির সুযোগ এবং সরকারি সেবায় পরিচয়পত্র প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। ‘গ’ শ্রেণিতে আহত ১০,৬৪৮ জন ব্যক্তির তালিকা এখনো গেজেট হয়নি। তবে তাঁদের এককালীন এক লাখ টাকা, মাসিক ১০ হাজার টাকা ভাতা এবং পুনর্বাসন ও পরিচয়পত্র পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জুলাই যোদ্ধাদের আয়করে বিশেষ ছাড়
অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণায় বলা হয়েছে, ২০২৬-২৭ ও ২০২৭-২৮ অর্থবছরের জন্য জুলাই যোদ্ধাদের করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়িয়ে ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সাধারণ করদাতাদের জন্য এ সীমা ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ জুলাইযোদ্ধারা ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বেশি করমুক্ত সুবিধা পাবেন।
রাষ্ট্রের এক সংকটময় সময়ে যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন এবং শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের জীবনে কিছুটা আর্থিক স্বস্তি এনে দেওয়া এ করছাড়ের মূল উদ্দেশ্য।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত কেবল করছাড় নয়, বরং জুলাই আন্দোলনের ইতিহাস ও শহীদদের প্রতি রাষ্ট্রের প্রতীকী সম্মান প্রদর্শন। যারা ওই ঐতিহাসিক ঘটনার সময় গুরুতরভাবে আহত হয়েছিলেন, তাঁদের উন্নত চিকিৎসা, পুনর্বাসন এবং জীবনমান উন্নয়নের জন্য এ ধরনের আর্থিক সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:
Post Comment