তরমুজ যেভাবে বৈশাখের হলো
বৈশাখী দাবদাহে যেন জ্বলছে শাহবাগ। এক রিশকাচালক আবদুল মজিদ পথের ধার থেকে একফালি তরমুজ খাচ্ছিলেন। এর মধ্যে পিল পিল করে বৈশাখের ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’য় দেখা মিলল বিপুল মানুষের। ওই শোভাযাত্রায় আরও অনেক প্রতীকের সঙ্গে ছিল তরমুজও। সব দেখেশুনে মজিদ যেন অনেকটা স্বাগোক্তির স্বরেই বললেন, ‘তরমুজ তো গরমের ফল। সেজন্যই কি ওইখানে তরমুজ রাখা হইছে!’
মজিদের কথাটি কেউ শুনল, অনেকেই শুনল না। তবে মজিদ হয়তো জানেনই না, ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে এ বছর পয়লা বৈশাখের শোভাযাত্রায় প্রতীক হিসেবে তরমুজকে রাখা হয়েছে। গত কয়েক দশক ধরে তরমুজ ফিলিস্তিনিদের প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করা হলেও এই ফলকে প্রায়ই ফিলিস্তিনের পতাকা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।সেই তরমুজের প্রতিকৃতি এবার বৈশাখী শোভাযাত্রায় অন্তর্ভূক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রকৃতপক্ষে ফিলিস্তিনের লড়াইয়ের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের সংহতি যেমন প্রতিফলিত হয়েছে, তেমনি ‘গরমের ফল’ তরমুজ নতুনভাবে আবার সামনেও এসেছে। কারণ, গত কয়েক দশকজুড়ে গরমের সময় তরমুজ মানুষের পছন্দের ফল হয়ে উঠেছে। গরম মানেই তরমুজ। এপ্রিলের দাবদাহে কিছুটা প্রশান্তির জন্য তরমুজ বা তরমুজের জুস খান না, এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আবার দিনে দিনে এই বিদেশি ফলটি বাংলাদেশের মানুষের কাছে যেন দেশি ফলে পরিণত হয়েছে। এখন সারা দেশে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ তরমুজ চাষ হচ্ছে।
এসব বাস্তবতায় বৈশাখী শোভাযাত্রায় তরমুজের উপস্থাপনা বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতারও প্রতিফলন বলে অনেকে মনে করছেন। তাই বৈশাখের ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’য় তরমুজের প্রতিকৃতি দেখে শাহবাগে রিকশাচালক আবদুল মজিদ যখন বলে ফেলেন, ‘তরমুজ তো গরমের ফল’, তখন তরমুজ নামের মধ্যপ্রাচ্যের এই ফল যে বেশ কিছু কাল ধরে আমাদের দেশে বৈশাখেরও উপাচার হয়ে উঠেছে, তা কি আর মুখে বলতে হবে!
এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:
Post Comment