১১৭ বার পেছাল তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ, সাগর-রুনির বিচার কি হবে আসলে?
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আজ মঙ্গলবারও আদালতে জমা পড়েনি। এ নিয়ে এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ ১১৭ বার পেছানো হলো।
ইতোমধ্যে কারাগারে থাকা সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত এক বিচারপতিসহ ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
এই ছয়জন হলেন- বরখাস্ত সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান, সাবেক অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (এডিজি) মশিউর রহমান, প্রাক্তন বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, প্রাক্তন নৌবাহিনী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহেল এবং জোড়া খুনের মামলার অভিযুক্ত হুমায়ুন কবির এবং পলাশ রুদ্র পাল।
আদালত সূত্র জানায়, গত বছরের ৪ নভেম্বর মামলাটির তদন্তভার নেয় পিআইবি। এর আগে ২ মার্চ একই আদালত আজকের মধ্যে পিআইবিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
পিবিআইয়ের এক কর্মকর্তা জানান, এ মামলায় আদালতের অনুমতি নিতে হয়নি এমন অর্ধশতাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাছরাঙার বার্তা সম্পাদক সাগর এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রুনি ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে তাদের ভাড়া বাসায় খুন হন।
ঘটনার সময় এই দম্পতির পাঁচ বছরের একমাত্র ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ বাসাতেই ছিল। পরদিন রুনির ভাই নওশের আলী রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা করেন।
খুনের ঘটনার পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন (প্রয়াত) বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার করা হবে। খুনের দুই দিন পর পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহামুদ খন্দকার বলেছিলেন, তদন্তের ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে।
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেছিলেন রুনির ভাই নওশের আলম। প্রথমে মামলাটি তদন্ত করছিল শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ। চার দিন পর মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার ৬২ দিনের মাথায় ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্টে ব্যর্থতা স্বীকার করে ডিবি। এরপর আদালত র্যাবকে মামলা তদন্তের নির্দেশ দেন। তখন থেকে এ মামলার তদন্ত করছে র্যাব।
এক যুগের তদন্তে কী পেল র্যাব
২০১৭ সালের ১৫ মার্চ র্যাবের পক্ষ থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী মাহিরের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আটজনকে।
র্যাব আরও জানিয়েছিল, তখন ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ডিএনএ নমুনা পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের ফরেনসিক ল্যাবে। ডিএনএ প্রতিবেদনে ঘটনাস্থলে অজ্ঞাত দুই পুরুষের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়। তাঁদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, যে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে পাঁচজন অন্য একটি খুনের মামলার আসামি। তাঁদের বিরুদ্ধে চুরি ও ডাকাতির অভিযোগও রয়েছে। তাঁরা এখনো কারাগারে। বাকি তিনজনের একজন রুনির পূর্বপরিচিত তানভীর আহমেদ, যিনি জামিনে রয়েছেন। ভাড়ার বাসাটির নিরাপত্তারক্ষী এনামুল কারাগারে এবং পলাশ রুদ্র পাল জামিনে রয়েছেন।
এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:
Post Comment