×

মুক্তিযুদ্ধ, ধর্মীয় সহাবস্থান নিয়ে এনসিপির অবস্থান বিষয়ে যা বললেন নাহিদ ইসলাম

মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, বৈষম্যহীন সমাজ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে ‘নতুন নাগরিক রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম’ (এনসিপি) তাদের নীতিগত অবস্থান তুলে ধরেছে। এক ঘোষণায় দলটি সামাজিক ন্য্যায়বিচার, ধর্মীয় সহাবস্থান, নারীর অধিকার, ভারতীয় আধিপত্যবিরোধিতা এবং নতুন সংবিধান প্রণয়নের অঙ্গীকার প্রকাশ করেছে।

সোমবার (১৯ মে) এনসিপির আহবায়ক নাহিদ ইসলাম নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজের এক পোস্টে এ দলটির ৭ দফা নীতিগত অবস্থান তুলে ধরেছেন।

ঘোষণায় বলা হয়, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ভিত্তি হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের সাম্য, ইনসাফ ও মানবিক মর্যাদার চেতনা এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আকাঙ্কাই এনসিপির পথচলার মূল প্রেরণা। দলটি হিন্দু-মুসলমান-দলিতদের উপনিবেশবিরোধী ও ব্রাহ্মণ্যবাদবিরোধী ঐতিহাসিক সংগ্রামকেও তাদের রাজনৈতিক ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করে।

ধর্মীয় বিষয়ে এনসিপি জানিয়েছে, তারা জনগণের ধর্মবিশ্বাস ও আত্মিক অনুভবকে শ্রদ্ধা করে। দলটি ইসলাম ও বাঙালি মুসলমানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে মূল্যায়ন করলেও ধর্মীয় উগ্রতা, চরমপন্থা ও সাম্প্রদায়িকতার বিরোধিতা করে। এনসিপি ধর্মতান্ত্রিক বা সেকুলারিস্ট মতাদর্শ নয়, বরং আন্তঃধর্মীয় সহাবস্থান ও সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্র চায়।

জাতীয় পরিচয় সম্পর্কে দলটির অবস্থান হলো—জাতি, ধর্ম বা গোত্রের ভিত্তিতে নয়, বরং বঙ্গীয় বদ্বীপের বহুধা ভাষা-সংস্কৃতির সভ্যতাগত পরিচয়ের ওপর ভিত্তি করে জাতীয় সংস্কৃতি গড়ে তোলা।

নারীর মর্যাদা ও ক্ষমতায়নকে দলটি তাদের অন্যতম প্রধান নীতি হিসেবে ঘোষণা করেছে। নারীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও সম্পত্তিতে অধিকার নিশ্চিত করতে তারা নীতিগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে জানায়।

এনসিপি দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের আধিপত্যবাদ ও হিন্দুত্ববাদকে বাংলাদেশের জন্য সাংস্কৃতিক ও ভূরাজনৈতিক হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে। এ বিষয়ে দলটি কঠোর রাজনৈতিক অবস্থানের কথা জানিয়ে বলেছে, বাংলাদেশের উচিত ন্যায্যতা, মর্যাদা ও জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তোলা।

দলটি একটি দুর্নীতিমুক্ত, বৈষম্যহীন ও ইনসাফভিত্তিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, জলবায়ু, শ্রম অধিকারসহ নানা খাতে নীতিনির্ধারণের কথা জানিয়ে এনসিপি বলেছে, বঙ্গোপসাগরকেন্দ্রিক একটি নতুন অর্থনৈতিক জোন গড়ার ভিশন তাদের রয়েছে।

সবশেষে দলটি বলেছে, সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মৌলিক সংস্কার, প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন এবং একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত গড়াই এনসিপির প্রধান রাজনৈতিক কর্তব্য।

এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:

Post Comment