×

সিলেটের নিম্নাঞ্চলে আকস্মিক বন্যা, বৃষ্টিতে ডুবল শহর

তুহিন আহমদ, সিলেট

ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের নিচু এলাকাগুলোতে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। এ সব পাহাড়ি ঢলের কারণে জেলার গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এমনকি মঙ্গলবার অর্ধদিনের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে সিলেট শহরের বেশিরভাগ এলাকাও ডুবে যায়। অনেক এলাকার সড়ক, মসজিদ, বিদ্যালয়ে পর্যন্ত জলাবদ্ধতার পানি প্রবেশ করে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট জেলার পর্যটন কেন্দ্র জাফলংয়ে হঠাৎ করেই ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে পিয়াইন নদীতে প্রবল স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে ওই এলাকার জিরো পয়েন্টসহ আশপাশের এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। পানির প্রবল বেগের কারণে নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয়রা। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বহু কাঁচা ঘরবাড়ি।

সিলেটের স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, প্রবল বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। গত কয়েকদিন থেকেই ধীরে ধীরে সিলেটের সব নদীর পানি বাড়ছিল। এরমধ্যে জাফলংয়ে সব ধরনের পর্যটন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্যমতে, সোমবার বিকেল থেকে মঙ্গলবার বিকেল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার লালাখালে ২১৬ মিলিমিটার, গোয়াইনঘাটের জাফলংয়ে ১৩৬ মিলিমিটার, সিলেট শহরে ৯২ মিলিমিটার, সুনামগঞ্জ শহরে ১৬৫ এবং সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের লাউড়ের গড়ে ১৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

সিলেট নগরের ভার্থখলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তায় হাটুঁর সমপরিমান পানি জমে গেছে। সেই পানি মাড়িয়ে অনেকেই চলাচল করছেন। জলাবদ্ধতার এই পানি কোনোদিকে নামতে না পেরে ঘরবাড়িতে প্রবেশ করে। ওই এলাকার অনেক বাড়ির সদস্যরা দরজায় তালা দিয়ে অন্যত্র গিয়ে আশ্রয় নেন। যদিও দুপুর দেড়টার পর বৃষ্টি কমার সঙ্গে সঙ্গে সেই পানিও নেমে যায়।

ভার্থখলা এলাকার বাসিন্দা নূর উদ্দিন স্ট্রিমকে বলেন, সিলেটে ভারী বৃষ্টি হলেই রাস্তাঘাট ডুবে গিয়ে সেই পানি ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে। এতে করে আরও ভোগান্তি বাড়ে নগরবাসীর। দীর্ঘদিনের এই জলাবদ্ধতার যন্ত্রণা থেকে নগরবাসী কোনোভাবেই মুক্তি পাচ্ছেন না। অপরিকল্পিতভাবে ড্রেন করার কারণেই আমাদের এই ভোগান্তিতে পোহাতে হচ্ছে। আগামীতে সঠিক পরিকল্পনা না করলে এই ভোগান্তি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

সব নদীর পানিই বাড়ছে

সিলেটের সব নদীর পানি গত এক সপ্তাহধরে একনাগাড়ে বাড়ছে। বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রে থেকে গত সপ্তাহেও বন্যার পূর্বাভাস জানানো হয়। তথ্যমতে, সিলেটের সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ৩০ সেন্টিমিটার, সিলেট পয়েন্টে ৩৭ সেন্টিমিটার, সুনামগঞ্জের ছাতক পয়েন্টে ৩৬ সেন্টিমিটার ও সুনামগঞ্জ শহর পয়েন্টে ৪৪ সেন্টিমিটার বেড়েছে। অন্যদিকে কুশিয়ারা নদীর পানি জকিগঞ্জের অমলশীদ পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার, বিয়ানীবাজারের শেওলা পয়েন্টে ৪১ সেন্টিমিটার ও মৌলভীবাজারের শেরপুরে ৪২ সেন্টিমিটার বেড়েছে। মনু নদীর পানি মৌলভীবাজার পয়েন্টে ২২ সেন্টিমিটার, পিয়াইন নদীর পানি জাফলং পয়েন্টে ১০২ সেন্টিমিটার, সারিগোয়াইন নদীর সারিঘাট পয়েন্টে ৮৯ সেন্টিমিটার এবং গোয়াইনঘাট পয়েন্টে ৬০ সেন্টিমিটার বেড়েছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে আগামী তিনদিন সুরমা-কুশিয়ারাসহ সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন বলেন, সিলেট ও ভারতের মেঘালয় অঞ্চলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। সিলেটের আকাশে এখনো প্রবল মেঘ জমে আছে এবং বৃষ্টিপাত আরো কিছুদিন অব্যাহত থাকবে। এর ফলে নদীতে পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ বলেন, আমরা তদারকি করছি। আমাদের সব প্রস্তুতি রয়েছে। বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলোর জন্য ইতোমধ্যেই নৌকা ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সংশ্লিস্ট সব উপজেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:

Post Comment