×

ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যে অস্থিরতা, কূটনৈতিক সমাধানের তাগিদ

স্ট্রিম প্রতিবেদক 

ভারত বাংলাদেশ থেকে স্থলপথে তৈরি পোশাকসহ ছয় ধরনের পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ১৭ মে ভারতের ডিরেক্টোরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) এক নির্দেশনায় জানায়, এসব পণ্য এখন থেকে শুধু ভারতের নভো সেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে আমদানি করা যাবে।

এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য সচিবের কাছে চিঠি দিয়ে কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ চেয়েছে। সংগঠনটি অন্তত তিন মাসের জন্য নিষেধাজ্ঞা স্থগিত চায় এবং বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রপ্তানি আদেশগুলো নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে রাখার আহ্বান জানিয়েছে।স্থলবন্দরগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি হওয়া পণ্যের পরিমাণ বিপুল। শুধু বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়েই গত ১০ মাসে প্রায় ১২ হাজার ৮১১ কোটি টাকা মূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যার মধ্যে ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি ছিল তৈরি পোশাক। স্থলপথে পরিবহন সময় ও খরচ উভয় দিক থেকেই লাভজনক হওয়ায় রপ্তানিকারকেরা এ পথকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন।

বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামে ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন বা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্টের মাধ্যমে ফলমূল, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা ও আসবাবপত্র রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বাংলাদেশের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের মোট রপ্তানির ৩.৭৫ শতাংশ গেছে ভারতে। ভারত বাংলাদেশের নবম শীর্ষ রপ্তানি গন্তব্য। অপরদিকে বাংলাদেশ ভারত থেকে প্রায় ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে, যা দেশের মোট আমদানির ১৪ শতাংশের বেশি। ভারত থেকে বাংলাদেশের শিল্প খাতে ব্যবহৃত কাঁচামালের বড় একটি অংশ আসে।

ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বাংলাদেশ ভারতীয় পণ্যের অষ্টম শীর্ষ রপ্তানি গন্তব্য।

বর্তমান নিষেধাজ্ঞা কারণে বহু পণ্য সীমান্তে আটকে গেছে, আবার অনেক পণ্যের উৎপাদন চলছে। একই সময়ে খুলে রাখা এলসিগুলো (ইমপোর্ট এলসি) ঝুঁকিতে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, বরং বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা হারানোর ঝুঁকিও তৈরি হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো নড়েচড়ে বসেছে। বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান জানান, ভারতের সঙ্গে সচিব পর্যায়ে গঠিত ফোরামের মাধ্যমে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পাল্টা কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে কূটনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা চলছে।রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ১৮ মে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ২০ মে এই বিষয় নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছে, যেখানে উপস্থিত সব অংশীজন বাংলাদেশ সরকারকে জরুরি আলোচনায় বসার অনুরোধ করেছেন।

বিকেএমইএর চিঠি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিবদের কাছেও পাঠানো হয়েছে। এতে স্পষ্ট, ব্যবসায়ী মহল এই সংকটকে গুরুত্ব সহকারে দেখছে এবং তাৎক্ষণিক সমাধান চায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আসাদুজ্জামান বলেন, ‘স্থলবন্দর ব্যবহার নিয়ে ভারতের এই আকস্মিক নিষেধাজ্ঞা শুধু বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের জন্য নয়, দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের জন্যও বড় ধাক্কা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখন প্রয়োজন সুচিন্তিত কূটনৈতিক উদ্যোগ ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান কাঠামো। দুই প্রতিবেশী দেশের স্বার্থে স্থলবন্দরের কার্যকারিতা ও বাণিজ্য প্রবাহ অব্যাহত রাখা এখন সময়ের দাবি।’

এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:

Post Comment