×

যেসব প্রযুক্তিতে ডুবে আছে জেন-জি

২০২৪ সালে সবচেয়ে বেশি চর্চিত শব্দগুলোর একটি হলো ‘জেন-জি’। ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে যাঁদের জন্ম, তাঁদের ডাকা হচ্ছে জেন-জি নামে। জন্মলগ্ন থেকেই প্রযুক্তি এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাঁদের কাছে প্রযুক্তি শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, নিত্যদিনের জীবনের স্বাভাবিক অংশও বটে। কোন কোন প্রযুক্তিতে এখন তাঁদের আগ্রহ বেশি? জানাচ্ছেন মিনহাজ রহমান পিয়াস

স্মার্টফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জনপ্রিয়তা যত বেড়েছে, এই প্রজন্মের কাছে ততই বৃদ্ধি পেয়েছে স্মার্টফোন ও বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের প্রতি আগ্রহ। ভিডিও কন্টেন্ট, গেমিং, শিক্ষা—সব ক্ষেত্রেই এসবের ব্যবহার এখন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউটিউব, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটকসহ নানান ধরনের প্ল্যাটফর্মে তরুণ প্রজন্মের সরব উপস্থিতিই জানান দেয় তাঁরা কতটা সক্রিয়।

বিশ্বজুড়ে ১৫-২৪ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে ৭৫ শতাংশ তরুণ এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করে। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টারের প্রতিবেদন ২০২৪ অনুযায়ী, ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের মধ্যে ৯৩ শতাংশ ইউটিউব, ৩৩ শতাংশ ফেসবুক, ৫৯ শতাংশ ইনস্টাগ্রাম, ৬৩ শতাংশ টিকটক এবং ৬০ শতাংশ স্ন্যাপচ্যাট ব্যবহার করে। বাংলাদেশে ৭৯ শতাংশ তরুণই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়।

স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম

প্রযুক্তির উৎকর্ষ, সহজলভ্যতা এই প্রজন্মকে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মমুখী করেছে। এখানে রয়েছে একটি ওটিটি (ওভার দ্য টপ) প্ল্যাটফর্মেই নামমাত্র মূল্যে বিশ্বসেরা সব সিনেমা দেখার সুযোগ। হলগুলোর অব্যবস্থাপনা, বৈশ্বিক ছবি দেখার প্রতিবন্ধকতাকে এড়িয়ে ঘরে-বাইরে যেকোনো জায়গায় বসেই সেগুলো উপভোগের ব্যবস্থা তরুণদের প্রভাবিত করেছে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের দিকে ঝুঁকতে। বৈশ্বিক জনপ্রিয়তায় শীর্ষে থাকা হালের নেটফ্লিক্সের পাশাপাশি আছে অ্যামাজন প্রাইম, ডিজনি প্লাস, প্যারামাউন্ট প্লাস, এইচবিও। বাংলাদেশের নিজস্ব ওটিটির মধ্যে অন্যতম হলো চরকি, টফি ও বঙ্গ। মার্কিন নিউজ কন্টেন্ট পাবলিশার কোম্পানি বিজনেসওয়্যারের হিসাবে ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ওটিটি বাজারের মূল্য দাঁড়াবে ১৯ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ২৩ লাখ ৬৬ হাজার ৯০০ কোটি।

এআই ও চ্যাটবট

এআই প্রযুক্তির ব্যবহার বর্তমান সময়ের এক জনপ্রিয় ধারা। এআইয়ের ব্যবহারে শীর্ষে রয়েছে চ্যাটজিপিটি। এটি এমন এক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক চ্যাটবট, যা ওপেনএআই তৈরি করেছিল ৩০ নভেম্বর ২০২২ সালে। চ্যাটজিপিটি দিয়ে কী করা যায়, এ প্রশ্নের উত্তর থেকে বরং চ্যাটজিপিটি দিয়ে কী করা যায় না, তার উত্তর বের করা সহজ। যেকোনো বিষয়ের ওপর ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ, সংজ্ঞা, গবেষণাভিত্তিক প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, যেকোনো ভাষা থেকে অনুবাদ, ব্লগ, প্রবন্ধ, রিপোর্ট, কবিতা বা গল্প লেখা, ভিডিও স্ক্রিপ্ট বা বক্তব্য তৈরি, বিভিন্ন বিষয়ের সারাংশ তৈরি, গাণিতিক সমস্যা সমাধান করে চ্যাটজিপিটি। আবার ব্যবসায়িক ই-মেইল, চিঠিপত্র বা প্রস্তাবনা লেখা, নীতিমালা বা সাংগঠনিক ডকুমেন্ট তৈরি, রিপোর্ট, প্রেজেন্টেশন, প্রজেক্টের পরিকল্পনা লিখতে সহায়তা করা, কোড লেখা ও ব্যাখ্যা (এইচটিএমএল, পাইথন, জাভাস্ক্রিপ্ট) ইত্যাদি, ওয়েবসাইট ডিজাইন বা বাগ খুঁজে বের করা, অ্যাপ বা গেম তৈরির আইডিয়া এবং রোডম্যাপ, গ্রাফিক্স ডিজাইন, চ্যাটজিপিটির মাধ্যমে সবকিছুই এখন এক ক্লিকেই হয়। তাইতো জেন-জিদের পছন্দের শীর্ষে চ্যাটজিপিটির অবস্থান। চ্যাটজিপিটির নির্মাতা ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান ‘নিউইয়র্ক টাইমস’-এর ডিলবুক সম্মলন ২০২৪-এ জানিয়েছিলেন, ‘আমাদের পণ্য এখন ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে আমাদের ৩০ কোটির বেশি সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছে, যারা প্রতিদিন ১০০ কোটির বেশি বার্তা পাঠাচ্ছে।’

চ্যাটজিপিটির পাশাপাশি মাইক্রোসফটের জেমিনি, ক্লাউড এআই, চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ডিপসিকও রয়েছে তরুণদের পছন্দের তালিকায়।

ই-লার্নিং ও অনলাইন কোর্স: বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় ই-লার্নিং জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সময় এবং অর্থ দুই-ই সাশ্রয় করছে ই-লার্নিং। পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে বসে তরুণেরা তাঁদের একাডেমিক প্রয়োজন বা স্কিল ডেভলপমেন্টের জন্য বেছে নিচ্ছেন বিভিন্ন অনলাইন কোর্স। গুগল কোর্স, কোর্সেরা, ইউডেমি কিংবা বাংলাদেশের খান একাডেমি, টেন মিনিটস স্কুল ইত্যাদি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে স্বশিক্ষায় আগ্রহী হচ্ছে জেন-জিরা।

প্রযুক্তি জেন-জিদের জন্য কতটা উপকারী বা ক্ষতিকর, তা নিয়ে যদিও অনেক বিতর্ক আছে। তবুও সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে প্রযুক্তির ব্যবহার ও জ্ঞান দুইই তাদের জন্য জরুরি।

 

এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:

Post Comment