×

নুসরাত ফারিয়া মুক্ত: যা ঘটল এই ২ দিন

জামিনে মুক্তি পেয়েছেন অভিনয়শিল্পী নুসরাত ফারিয়া। ২০ মে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগার থেকে ছাড়া পান তিনি।

কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ নুসরাতের জামিনের কাগজ কারাগারে এসে পৌঁছায়। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে এবং অন্য কোনো মামলায় আটকের আদেশ না থাকায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ১৯ মে সোমবার নুসরাতকে ঢাকা থেকে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।

২০ মে সকালে জামিন চেয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে আবেদন করেন নুসরাত ফারিয়া। শুনানির পর আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন। শুনানি চলাকালীন নুসরাতের আইনজীবীরা বলেন, মামলায় উল্লেখিত ঘটনার সময় নুসরাত দেশে ছিলেন না।

মুক্তির পর নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘জীবনের সবচেয়ে মুমূর্ষু সময় পার করেছি এই দুইটা দিন। মানসিকভাবে খুবই ভেঙে পড়েছিলাম। তবে এই সময়টাতে যারা সর্বক্ষণ আমার পাশে ছিলেন সেসব মানুষদেরকে মন থেকে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই।’

এ স্ট্যাটাসে ইন্ডাস্ট্রির সহকর্মী, সাধারণ জনগণ ও গণমাধ্যম- যারা তাঁর পক্ষে থেকেছেন, সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

কী আছে মামলায়

যে মামলায় নুসরাত ফারিয়া কারাগারে গেলেন, সেটি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময়কার। আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মামলাটি করেন এনামুল হক (৩৫)। তাঁর অভিযোগ, জুলাই আন্দোলন দমনে যারা অর্থসহায়তা দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম নুসরাত ফারিয়া।

গত ৩ মে ঢাকার সিএমএম আদালতে ২৮৩ জনের বিরুদ্ধে নালিশি মামলা করেন এনামুল। এই মামলায় নুসরাত ছাড়াও ১৬ জন অভিনয়শিল্পীকে আসামি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন অপু বিশ্বাস, আশনা হাবিব ভাবনা ও জায়েদ খান। বাদীর অভিযোগ, এদের দেওয়া অর্থে সশস্ত্র আক্রমণ সংগঠিত হয়।

গ্রেপ্তার ও আদালত

১৮ মে রবিবার সকালে বাংলাদেশ বিমানের থাইল্যান্ডগামী একটি উড়োজাহাজে ওঠার আগে ইমিগ্রেশন পুলিশ নুসরাতকে গ্রেপ্তার করে। উল্লিখিত মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকার বিষয়টি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে ধরা পড়ায় তিনি গ্রেপ্তার হন। পরে তাঁকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে পাঠানো হয়।

১৯ মে সোমবার সকালে নুসরাতকে আদালতে তোলা হয়। সেখানে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী নুসরাত ফারিয়াকে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার অন্যতম সহযোগী বলে উল্লেখ করেন। পিপি বলেন, ‘নুসরাত ফারিয়া শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বায়োপিকে অভিনয় করেছিলেন। পর্দায় তিনি শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। অভিনয় করা কোনো দোষের কিছু নয়। কিন্তু তিনি পরবর্তী সময়ে বলেছিলেন, প্রতিটা ঘরে শেখ হাসিনা রয়েছে। এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে তিনি ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে খুশি করতে চেয়েছিলেন।’

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার মন্তব্য

১৯ মে দুপুরে সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, যারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অপরাধী, তাঁদের বিচার করা সরকারের কর্তব্য।

এ সময় তিনি মন্তব্য করেন, ‘এখন তাঁর নামে যদি কেস থাকে, আপনি কী করবেন?…ছেড়ে দিলে আবার আপনি কিন্তু…বলবেন স্যার আপনি ছেড়ে দিছেন…।’

নেটপাড়ায় যা চলল

নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তারের ঘটনাকে বিব্রতকর আখ্যা দিয়ে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দেন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি লেখেন, ‘আমি বিশ্বাস করি ফারিয়া আইনি প্রতিকার পাবে। এবং এই ধরনের ঢালাও মামলাকে আমরা আরও সংবেদনশীলভাবে হ্যান্ডেল করতে পারব। মনে রাখতে হবে, আমাদের প্রধান কাজ জুলাইয়ের প্রকৃত অপরাধীদের বিচার করা।’

সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান নিজের এক্স হ্যান্ডেলে (সাবেক টুইটার) এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এখন দেখা যাচ্ছে, শুধু আওয়ামী লীগের সমর্থক হওয়া বা দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা যেকোনো ব্যক্তিকে লক্ষ্যবস্তু করা সম্ভব। আমরা এমন এক সময়ে পৌঁছে গেছি, যেখানে এই ধরনের ব্যক্তিরা আর বাংলাদেশে নিরাপদ বোধ করছেন না।

নুসরাত গ্রেপ্তারের পর অনেকে তাঁর পুরনো স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট দিয়ে দাবি করেন যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তিনি ছাত্র-জনতার পক্ষে ছিলেন।

এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:

Post Comment