ফের বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম, বাজারে অস্বস্তি
বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম এক লাফে লিটারে ১৪ টাকা বেড়েছে। পাম তেলের দামও লিটারে বেড়েছে ১২ টাকা। সরকার করছাড় তুলে নেওয়ায় এই মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার পাশাপাশি, বাজারে পেঁয়াজ, ডিম এবং সবজির দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। আটার দামও কিছুটা বেড়েছে। চাল ও ডালের দাম আগে থেকেই বেশি ছিল এবং দাম কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
সরকার নতুন কারখানা এবং অনুমোদিত সীমার অতিরিক্ত ব্যবহারের ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়িয়েছে। এর ফলে পণ্যের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত শিল্পে অনুমোদিত লোডের চেয়ে ১৪ কোটি ৭৮ লাখ ঘনমিটার গ্যাস অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়েছে। ক্যাপটিভে (কারখানার নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র) ৫ কোটি ৭৬ লাখ ঘনমিটার গ্যাস অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়েছে। এই অতিরিক্ত গ্যাসের দাম নতুন হারে পরিশোধ করতে হবে।
সরকার যখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে, ঠিক সেই সময়ে করছাড় তুলে নেওয়া, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি এবং বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। মূল্যস্ফীতি এখনও ৯ শতাংশের বেশি। সয়াবিন তেলের দাম হঠাৎ করে অনেকটা বাড়িয়ে দেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকেই করছাড় দিয়ে পুরোনো দামে ফিরিয়ে আনার অনুরোধ জানিয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফেসবুক পেজে এই সিদ্ধান্তের পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানানো হয়েছে।
নতুন দাম অনুযায়ী, এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৮৯ টাকা, যা আগে ১৭৫ টাকা ছিল। পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৯২২ টাকা, যা আগে ৮৫২ টাকা ছিল। খোলা সয়াবিন তেল এবং খোলা পাম তেলের দাম লিটারে ১২ টাকা বেড়ে ১৬৯ টাকা হয়েছে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সাথে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের বৈঠকের পর এই নতুন দাম ঘোষণা করা হয়। মিলমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন জানায়, ১৩ এপ্রিল থেকে এই নতুন দাম কার্যকর হবে।
এর আগে, গত ৯ ডিসেম্বর বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৮ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। সরকার শুল্ক-করে ছাড় দিয়ে মূল্যবৃদ্ধি ঠেকিয়ে রেখেছিল। কিন্তু ৩১ মার্চ ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হওয়ায় সয়াবিন তেলের দাম আবারও বাড়ানো হয়েছে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন করছাড় তুলে নেওয়ার কারণ হিসেবে জানান, সরকার প্রতি মাসে প্রায় ৫৫০ কোটি টাকা রাজস্ব ছাড় দিয়েছে। কিন্তু সরকার পরিচালনার ব্যয়ের কথা বিবেচনা করে এভাবে রাজস্ব ছাড় দেওয়ার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, অদূর ভবিষ্যতে দাম কমানো সম্ভব হবে।
পেঁয়াজের দামও তিন দিন ধরে বাড়ছে। পবিত্র রমজান মাসে পেঁয়াজের দাম কম থাকলেও এখন প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টিসিবিও পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কথা জানিয়েছে।
ঈদের পর ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম কিছুটা কমলেও ডিমের দাম বেড়েছে। ফার্মের মুরগির বাদামি এক ডজন ডিম বড় বাজারে ১২০-১২৫ টাকা এবং মহল্লার মুদিদোকানে ১৩০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
চালের দাম অনেক দিন ধরেই বেশি। খোলা আটার দামও কিছুটা বেড়েছে। ডাল ও চিনির দাম আগের মতোই বেশি। সবজির দামও বেড়েছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, কিছু সবজির দাম কমলেও বেশিরভাগ সবজির দাম বেড়েছে।
সরকার রাজস্ব আয় বাড়ানো এবং ভর্তুকি কমানোর দিকে মনোযোগ দিয়েছে। আইএমএফের ঋণ পাওয়ার শর্ত হিসেবেও রাজস্ব আয় বাড়ানো এবং ভর্তুকি কমানো প্রয়োজন। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং ভোক্তা সংগঠন ও শ্রমজীবী নাগরিকদের মতামতের ভিত্তিতে দাম নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে।
এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:
Post Comment