কুয়েট উপাচার্যকে অব্যাহতি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু, ভিন্ন সুর উপ-উপাচার্যের
শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদ ও উপ-উপাচার্য শেখ শরীফুল আলমকে তাঁদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) রাতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঠানো একটি বার্তা অনশনরত শিক্ষার্থীদের পড়ে শোনান। সেখানে বলা হয়, সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর আলোকে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে কুয়েটের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপককে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হবে এবং নতুন উপাচার্য নিয়োগের জন্য একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হবে।
এ ঘোষণার পর তিনি জুস পান করিয়ে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান। প্রায় ৫৮ ঘণ্টা অনশনের পর শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন। \
এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সকালে গণমাধ্যমকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগপত্র গৃহীত হওয়ার প্রক্রিয়া চলমান আছে। তবে দুপুরে তিনি জানান, পদত্যাগ নয়, তাঁদেরকে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে।

ভিন্ন সুর উপ-উপাচার্যের
কুয়েটের উপ-উপাচার্য শেখ শরীফুল আলম গণমাধ্যমকে জানান, তিনি কোন পদত্যাগপত্র দেননি। বরং অব্যাহতি দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকতে এবং অধিকতর তদন্তের দাবি জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন।
তিনি বলেন, “গণমাধ্যমের খবরে দেখছি যে কুয়েটের ভিসি ও প্রো-ভিসিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে এবং অধ্যাপক হারুন অর রশিদকে ভারপ্রাপ্ত ভিসির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে এ-সংক্রান্ত কোনো মেইল এখনো আমি পাইনি। আর আমি পদত্যাগ করিনি বা পদত্যাগের জন্য কোনো চিঠি পাঠাইনি।”
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, ক্যাম্পাসে সংঘর্ষ এবং শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় দোষীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা শ্রেণিকক্ষে ফিরবেন না। সেইসাথে, উপচার্য এবং উপ-উপাচার্য অপসারণের প্রক্রিয়া নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।
এদিকে ক্যাম্পাসে এসেও শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা না করায় বুধবার সংবাদ সম্মেলনে হতাশা প্রকাশ করেন শিক্ষক সমিতির নেতারা।
যা ঘটেছে
ছাত্ররাজনীতি বন্ধের প্রশ্নে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে শতাধিক মানুষ আহত হন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ছাত্রদল ও বহিরাগতরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর এ হামলা চালায় এবং এ সময় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়।
এই ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ, উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে।
২৫ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এছাড়া গত ১৪ এপ্রিল কুয়েটের ১০১তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি, বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হামলার শিকার এবং তাঁদের অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে গত ১৫ এপ্রিল ছেলেদের ছয়টি হলের তালা ভেঙে তাতে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।
যদিও বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০২তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় ওই ৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়া হয়।
এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:
Post Comment