সরকারি চাকরি ফিরে পাচ্ছেন জুবাইদা রহমান
ঢাকা, ৭ মে: দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফেরার পরপরই তাঁর সরকারি চাকরিতে পুনর্বহালের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সব প্রক্রিয়া শেষে দু–এক দিনের মধ্যেই চাকরিতে পুনরায় যোগদানের আদেশ জারি করা হবে।
জুবাইদা রহমান বাংলাদেশের চিকিৎসক সমাজে মেধাবী ও প্রতিভাবান হিসেবে পরিচিত। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করার পর তিনি লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে মেডিসিনে স্নাতকোত্তর (এমএসসি) ডিগ্রি নেন এবং সেখানে স্বর্ণপদক অর্জন করেন। ১৯৯৫ সালে বিসিএস (স্বাস্থ্য ক্যাডার) পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। পারিবারিক পরিচয়ও তাঁর বিশেষ; তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের কিংবদন্তি সংগঠক এম এ জি ওসমানীর আত্মীয় এবং সাবেক নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের কন্যা।
২০০৮ সালে দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সময় তাঁর স্বামী তারেক রহমান গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁর উন্নত চিকিৎসার জন্য জুবাইদা রহমান যুক্তরাজ্যে যান। তিনি সরকারের অনুমোদন নিয়ে প্রথমে শিক্ষা ছুটি নেন, যার মেয়াদ ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর পর্যন্ত ছিল।
পরে ছুটির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য একাধিকবার আবেদন করলেও বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস এবং ছুটি বিধিমালা অনুসারে পাঁচ বছরের বেশি সময় অনুপস্থিত থাকার অনুমোদন দেয়া হয়নি। ছুটি বিধিমালার (বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস পার্ট–১, রুল ৯(৩) ও এফআর–৮৪) নির্দেশনায় বলা আছে, অধ্যয়নের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের ছুটি মঞ্জুর করা যায়, অতিরিক্ত ছুটি গ্রহণ করলে কর্মচারীর চাকরি স্বয়ংক্রিয়ভাবে অবসান হবে। বিশেষত বাংলাদেশ সার্ভিস রুলসের ৩৪ নম্বর বিধি অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারী যদি ছুটিসহ বা ছুটি ছাড়া একটানা পাঁচ বছরের বেশি সময় কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন এবং সরকার যদি বিশেষ কোনো সিদ্ধান্ত না নেয়, তবে তার চাকরির স্বাভাবিকভাবে অবসান ঘটবে। এই আইনি ভিত্তিতেই জুবাইদা রহমানের সরকারি চাকরি ২০১৩ সালে বাতিল ঘোষণা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এ ছাড়া ছুটির আবেদন বাতিল করার পরও দাপ্তরিক আদেশ যথাসময়ে তাঁকে পৌঁছানো হয়নি। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা ছুটির বাতিলের আদেশ জারি করলেও তা তাঁর ঠিকানায় পৌঁছেছে কি না, এ–সংক্রান্ত কোনো নথি পাওয়া যায়নি। ছুটির আবেদনে বিদেশে অবস্থানের সুনির্দিষ্ট ঠিকানা না থাকা এবং আবেদনপত্রের মধ্যে ছুটির কারণ যথাযথভাবে উল্লেখ না করাও প্রশাসনিক ত্রুটির কারণ হিসেবে উল্লেখযোগ্য ছিল। ফলে অনেকেই মনে করেন, প্রক্রিয়াগত অসঙ্গতির জন্যই জুবাইদার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ দ্রুত নেওয়া হয়েছিল।
এদিকে ডা. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০০৮ সালে একটি মামলা করে, যেখানে তারেক রহমান, জুবাইদা রহমান ও তাঁর মায়ের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। মামলার রায়ে ২০২৩ সালে তাঁকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। তবে ২০২৪ সালে দেশে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত ওই সাজা স্থগিত করে, ফলে দেশে ফেরার আইনগত বাধা দূর হয়।
বর্তমানে জুবাইদা রহমানের চাকরিতে ফেরার প্রক্রিয়াটি বাংলাদেশ সার্ভিস রুলসের একই ৩৪ নম্বর বিধির বিশেষ শর্তের আলোকে এগোচ্ছে। বিধি অনুসারে, সরকার চাইলে বিশেষ বিবেচনায় চাকরিতে পুনর্বহাল করতে পারে। সরকার যদি মনে করে যে কর্মচারীর অনুপস্থিতির সময় বিশেষ পরিস্থিতি বিদ্যমান ছিল এবং কর্মচারীর সেবা এখনো প্রয়োজনীয়, তাহলে চাকরির অবসান আদেশ প্রত্যাহার করে তাকে পুনর্নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। এই সুযোগ নিয়েই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাঁর চাকরিতে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। যুগ্ম সচিব এ কে এম ফজলুল হক জানিয়েছেন, তাঁর চাকরি পুনর্বহালের প্রস্তাব চূড়ান্ত হয়েছে এবং আনুষ্ঠানিক আদেশ শিগগিরই জারি করা হবে।
বর্তমানে জুবাইদা রহমান ঢাকার ধানমন্ডিতে তাঁর বাবার বাসভবনে অবস্থান করছেন, যেখানে তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:
Post Comment