×

ভারত–পাকিস্তান সংঘাত: ‘রাফাল’ হারে না, এ কথা আর চলে না

২০০১ সালে ফরাসি নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়ে দ্রুতই আধুনিক যুদ্ধবিমানের প্রতীক হয়ে উঠেছিল রাফাল। আফগানিস্তান থেকে সিরিয়া—সবখানে সাফল্যের নজির গড়া এই জঙ্গি বিমান এবার ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে প্রথমবারের মতো যুদ্ধক্ষেত্রে ভূপতিত হওয়ার মুখে পড়েছে। পাকিস্তানের দাবি অনুযায়ী, তারা ভারতের তিনটি রাফাল গুলি করে ভূপতিত করেছে, যা রাফালের ‘অপ্রতিরোধ্যতা’র ভাবমূর্তির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এর ফলে বড় ধাক্কা খেয়েছে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান দাসো অ্যাভিয়েশনের শেয়ারমূল্যও। লিখেছেন সৈকত আমীন

২০০১ সালে ফরাসি নৌবাহিনীতে যুদ্ধ বিমান হিসেবে অভিষেকের পর আকাশ পথে আক্ষরিক অর্থেই যেন ম্যামথ হয়ে উঠেছিল দাসো এভিয়েশনের তৈরি ‘রাফাল’। ম্যামথ ছিল অপ্রতিরোধ্য, বিশালদেহী। যুদ্ধ বিমান রাফালও যেন তাই। বিশেষ এই জঙ্গি বিমানকে কোনো যুদ্ধেই যেহেতু পরাস্ত করা যায় না, ফলে অচিরেই ন্যাটোভুক্ত দেশ ছাড়াও মিশর, কাতার ও ভারতের মতো দেশগুলোর আকাশ প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে অপরিহার্য হয়ে ওঠে অপ্রতিরোধ্য বিমানটি।

হ্যাঁ, আফগানিস্তান, লিবিয়া ও সিরিয়ায় যুদ্ধে ব্যবহৃত রাফালের ঝুড়িতে এত দিন ছিল শুধু সাফল্যের মালা। কিন্তু সম্প্রতি পাক-ভারত সামরিক সংঘাতে রাফালের ভূপাতিত হওয়ার মধ্য দিয়ে মিথ হয়ে গেছে সেই ম্যামথের কথা। তাই বলা চলে, ‘রাফাল’ হারে না, এ কথা আর চলে না।

গত ২২ এপ্রিল ভারত–শাসিত কাশ্মীরে পহেলগামের হামলায় নিহত ২৬ নিহতের ঘটনায় শুরু থেকেই পাকিস্তানকে দায়ী করে আসছিল ভারত। এ পরিস্থিতিতে হামলার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত যুদ্ধ ঘোষণা করে। ৭ মে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ‘অপারেশন সিদুঁর’ পরিচালনা করে মোট নয় স্থানে হামলা চালায় দেশটির বিমান বাহিনী।

এই অপারেশনের সময় পাকিস্তানের সেনাবাহিনী পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপতিত করার দাবি করেছে। এর মধ্যে রয়েছে তিনটি ফরাসি রাফাল, একটি করে রুশ নির্মিত সুখোই-৩০ আর একটি মিগ-২৯।

পাকিস্তানের এই দাবির বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে এখন অব্দি কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ৭ মে রাফাল প্রস্তুতকারী দেশ ফ্রান্সের উচ্চপদস্থ এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনকে জানিয়েছেন, ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি রাফাল যুদ্ধবিমান ভূপতিত করেছে পাকিস্তান। এটিই হতে পারে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রথমবারের মতো কোনো ফ্রান্স নির্মিত অত্যাধুনিক রাফাল ধ্বংস হওয়ার ঘটনা।

যুদ্ধক্ষেত্রে প্রথমবার হলেও এর আগে অবশ্য তিনবার উড্ডয়নরত অবস্থায় ভূপতিত হওয়ার ইতিহাস রয়েছে ফরাসি এই জঙ্গি বিমানের।

আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরুর পর রাফালের প্রথম ভূপতিত হওয়ার রেকর্ড পাওয়া যায় ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে। ফ্রান্সের নেউভিকে পাইলটের দিকভ্রান্তির কারণে ভূপতিত হয় একটি রাফাল।
এরপর ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে ফ্রান্সের পারপিগনানে দুটি রাফাল বিমানবাহী রণতরীর অপারেশনের সময় দুর্ঘটনায় পতিত হয়। ওই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় একজন বৈমানিকের। সবশেষ ২০২৪ সালের আগস্টে ফ্রান্সের কোলম্বে-লেস-বেলসে প্রশিক্ষণ মিশনের সময় দুটি রাফাল মধ্যবর্তী সংঘর্ষে পড়ে এবং দুজন বৈমানিক মারা যান।

এদিকে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরোধে রাফালের পতনের ঘটনায় শেয়ার বাজারে বিমানটির প্রস্তুতকারী সংস্থা দাসো অ্যাভিয়েশনের স্টক মূল্য ৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। যা মূলত রাফালের সক্ষমতার ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা হারানোর ফল।

সংঘর্ষের আগপর্যন্ত ভারতীয় বিমানবাহিনীর বহরে ছিল ৩৬টি রাফাল। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ভারত সরকার ফরাসি সরকার সঙ্গে আরও ২৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি করে, যা ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতীয় নৌবাহিনীর হাতে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। এর আগে ভারত ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান অর্ডার দিয়েছিল বলে জানিয়েছে ফ্রান্সের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান দাসো এভিয়েশন। তাদের তথ্য অনুযায়ী, রাফাল একটি ডবল ইঞ্জিনচালিত যুদ্ধবিমান, যা বিমানবাহী জাহাজ কিংবা স্থলঘাঁটি—উভয় স্থান থেকেই উড়াল দিতে সক্ষম।

ভারত–পকিস্তান সংঘাতে মৃত্যু, ধ্বংস আর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বেশ। তবে রাফালের মহিমাও যে অমর নয়, তা খুব ভালোভাবেই বোঝা গেছে।

এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:

Post Comment