×

ভারতে ‘মাওবাদী দমন’ কীভাবে করপোরেট আগ্রাসনের পথ করে দিচ্ছে

আজ ২৫ মে। ১৯৬৭ সালের এই দিনে শুরু হয়েছিল মাওবাদী ধারার নকশালবাড়ি আন্দোলন। অনেকে বলছেন, এখন ভারতে মাওবাদী দমনের নামে চলছে আদিবাসীদের ওপর নিপীড়ন ও নিধনের রাজনীতি। সরকারের দাবি, তারা সন্ত্রাস দমনে সফল। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবন, অধিকার ও সম্পদের রক্ষার পরিবর্তে এই অভিযানগুলো কি করপোরেট স্বার্থ পূরণের হাতিয়ার? মাওবাদী কমান্ডার বাসবরাজুর মৃত্যুর পর এই প্রশ্নটি আবার ফিরে আসছে। নকশালবাড়িতে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা কি আজও প্রাসঙ্গিক? লিখেছেন রাতুল আল আহমেদ 

দীর্ঘদিন ধরেই মাওবাদী গেরিলাদের বিরুদ্ধে দমনমূলক অভিযান পরিচালনা করছে ভারতের সরকার । সবশেষ চলতি মাসের ২১ তারিখ মাওবাদী দল সিপিআই-এর শীর্ষ নেতা নালাম্বা কেশব রাও বা বাসবরাজু সরকারি বাহিনীর ‘এনকাউন্টার’-এ নিহত হন। ওই ঘটনায় বাসবরাজুর সঙ্গে নিহত হন আরও ২৭ জন মাওবাদী কর্মী । ভারত সরকার এই ঘটনাকে মাওবাদী দমনে বড় সাফল্য হিসেবে দেখছে। দাবি করছে , এটা তাদের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের ফল।

তবে সোনি সোরির মতো মানবাধিকার কর্মীদের মতে, এই ‘এনকাউন্টার’ আসলে কোনো সাধারণ বন্দুকযুদ্ধ না। অনেকেই একে মনে করছে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তাঁদের দাবি, মাওবাদী দমনের নামে সরকারের আসল উদ্দেশ্য হলো দণ্ডকারণ্য অঞ্চলের আদিবাসীদের দমন করা, যাতে সেখানকার বনজ ও খনিজ সম্পদ করপোরেটদের হাতে তুলে দেওয়া যায়।

ভারতের বর্তমান মাওবাদী আন্দোলনকে নকশাল আন্দোলনের উত্তরসূরি হিসেবে দেখা হয়। ১৯৬৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের নকশালবাড়িতে ‘লাঙল যার, জমি তার’ স্লোগানে দরিদ্র কৃষকদের বিদ্রোহের মাধ্যমে এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল। কমিউনিস্টব্লকে চীন-সোভিয়েত বিভাজনের সময় মাও সে-তুং-এর আদর্শ অনুসরণকারী বামপন্থী দলগুলো নকশাল আন্দোলনের মূল শক্তি হিসেবে উঠে আসে। শুরুতে পশ্চিমবঙ্গকে ঘিরে আন্দোলন গড়ে উঠলেও, পরে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে ঝাড়খণ্ড, ছত্তীসগড়, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশসহ ভারতের বেশকিছু অনুন্নত ও প্রান্তিক অঞ্চলে। ভারতের বিস্তৃত এই অঞ্চলকে ‘রেড করিডর’ নামেও চিহ্নিত করা হয়।

২০০৯ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার মাওবাদীদের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন গ্রিন হান্ট’ নামে এক বড়সড় অভিযান শুরু করে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং মাওবাদীদের দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, এই দীর্ঘমেয়াদি অভিযানে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী বহু সাধারণ নাগরিককে ‘মাওবাদী’ আখ্যা দিয়ে হত্যা করেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে মাওবাদীরা একাধিকবার সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। মাওবাদীদের আত্মসমর্পণের ঘটনাও ঘটেছে। বিশ্লেষকদের মতে, মাওবাদীরা নিজেদের কৌশলগত অবস্থান থেকে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার চেষ্টা করছে। তবে সরকারের তরফে মাওবাদীদের ‘স্বাভাবিক জীবনে’ ফিরতে দেওয়ার কোনো সদিচ্ছা দেখা যাচ্ছে না।

এই প্রেক্ষাপটে রেণুকার মৃত্যু বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ৩১ মার্চ, ছত্তীসগড়ের বস্তারের জঙ্গলে মাওবাদী লেখিকা রেণুকা পুলিশের ‘এনকাউন্টার’-এ নিহত হন। পুলিশের দাবি, দুই ঘণ্টা ধরে চলা অভিযানের পর তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই অভিযানে কোনো পুলিশ আহত বা নিহত হয়নি। ফলে প্রশ্ন উঠছে, রেণুকাকে কি জীবিত গ্রেপ্তার করা যেত না? রেণুকা ছিলেন একাধিক পরিচয়ের প্রতীক। কারও কাছে তিনি সাহসী লেখক, কারও কাছে নারী মুক্তি আন্দোলনের নেত্রী। তবে রাষ্ট্রের চোখে শুধুই একজন ‘মাওবাদী সন্ত্রাসী’, যাঁর মৃত্যু মানে একটি হুমকির সমাপ্তি।

ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অধিকারকর্মী ইতিমধ্যে ভারতের সরকার ও কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মাওবাদী)-এর মধ্যে অবিলম্বে শান্তি আলোচনা শুরুর দাবি জানিয়েছেন। মাওবাদী দল একাধিক চিঠি ও সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে ইতিমধ্যে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়েছে।  ‘আক্রমণ না হলে একতরফা অস্ত্রবিরতির’ জন্য তাঁরা প্রস্তুত। 

অধিকারকর্মীদের প্রেস কনফারেন্সে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মাওবাদী দলের এই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকারের পক্ষে এখনই অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করা এবং শান্তি আলোচনার পথে এগোনো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই প্রেস কনফারেন্সে তাঁরা চলমান সংঘর্ষের মানবিক ক্ষতি, বিশেষ করে বস্তার ও তার আশেপাশের অঞ্চলের আদিবাসী সম্প্রদায়ের ওপর এর মারাত্মক প্রভাবের কথা তুলে ধরেন। তিন শর বেশি উদ্বিগ্ন নাগরিক ও সংস্থা এই দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করে একটি বার্তায় স্বাক্ষর করেন। 

স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জি. হরগোপাল, সোনি সোরি, বেলা ভাটিয়া, কবিতা শ্রীবাস্তব, ক্রান্তি চৈতন্য ও পরমিন্দর সিং। এই বিবৃতিটি তাঁরা ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে পাঠিয়েছেন।

এসব তোয়াক্কা না করেই সরকার অভিযান চালাচ্ছে কারেগুট্টা পাহাড়ে। যা তেলেঙ্গানা ও ছত্তীসগড় সীমান্তের এক এলাকা। এসব অভিযানে মাওবাদী নিহতের খবর মিললেও, কাউকে জীবিত আটক করার নজির দেখা যায় না। দেখা যায় না সরকারী বাহিনীর কোন ক্ষয়ক্ষতির খবরও।

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ইতিমধ্যে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। বলেছেন, ২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে দেশকে নকশালমুক্ত করা হবে। কিন্তু ‘মাওবাদী সমস্যা’ আসলে সময়সীমা বেঁধে সমাধান করার চেয়ে বেশি জটিল।  

যেখানে মানুষের দারিদ্র্য, শোষণ, করপোরেট আগ্রাসন, জমি হারানো, জীবিকা হারানো, আদিবাসী অধিকার—এতকিছু জড়িত, সেই বাস্তবতা না বুঝতে পারলে ‘মাওবাদী সমস্যার’ যে কোনো সমাধান নেই, তা  সরকার বুঝতে চায় না। সরকারের ভাষ্য, সমস্যার মূল কারণ হলো ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ মানুষগুলো। তাই তাঁদের মেরে ফেললেই সমস্যার সমাধান হবে। এই দৃষ্টিভঙ্গি ভীষণ একপেশে এবং ক্ষমতার অহংকার।

নিরাপত্তা বাহিনীগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লক্ষ্যপূরণ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। প্রায়ই খবর আসে ১৭ জন নিহত, ২২ জন নিহত, ৩১ জন নিহত। জানানো হয় নিহত লোকগুলো ‘মাওবাদী’। তবে খোঁজ নিলেই দেখা যায় এই নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকে একেবারেই সাধারণ আদিবাসী। যারা সরকারি সহিংসতার মধ্যে পড়ে মারা যাচ্ছেন।
হেলিকপ্টার থেকে বোমা ফেলার সময় কি নিশ্চিত হওয়া যায়, কে মাওবাদী আর কে নয়? মাওবাদী দেখতে কেমন, কেউ জানে না।

ভিন্নমত দমন যতকিছু করা যায়, ভারত সরকার বাদ দিচ্ছে না কোনোটাই। কখনো ‘দেশদ্রোহী’ কখনো ‘আরবান নকশাল’ বলে সমাজের কণ্ঠস্বর দমিয়ে ফেলতে চাচ্ছে। যা দেখা গেছে ‘ভীমা কোরেগাঁও’ মামলার ক্ষেত্রেও। বিরোধীদের অভিযোগ, ভিন্নমত দমন করতেই বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) সংশোধনী ২০১৯ (ইউএপিএ) আইন ব্যবহার করে ভারাভারা রাও, অরুণ ফেরেরা, গৌতম নওলাখা, ভার্নন গঞ্জালভেস, সুধা ভরদ্বাজের মতো একটিভিস্টদের গ্রেপ্তার করে সরকার। 

২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ইউএপিএ আইনে ২৪ হাজার ১ শ ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অথচ দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন মাত্র ২১২ জন। ৩৮৬ জন আদালতে বেকসুর খালাস পেয়েছেন। অর্থাৎ, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মাত্র ২ শতাংশ দোষী প্রমাণিত হয়েছে। বাকিরা এখনো বিচারাধীন। তাই অনেকের মতে, ইউএপিএ একধরনের ‘দমনমূলক আইন’। যা মূলত বিরোধীদের দমন করতেই ব্যবহৃত হয়।  

রাষ্ট্রের চোখে যদি শহরের ফ্ল্যাটে বসে কার্ল মার্ক্স পড়া বা আদিবাসী অধিকারের কথা বলাই ‘আরবান নকশাল’ হয়ে ওঠার মানদণ্ড হয়, তাহলে বনবাসী, যারা শুধু নিজেদের জমি আঁকড়ে বাঁচতে চায়, তারাও মাওবাদী হয়ে যায়। এই ট্যাগগুলো সহজে কাউকে বুলেট আর গ্রেপ্তারের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে।

সব মিলিয়ে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণাটি আদিবাসীদের বিরুদ্ধে এক ‘অঘোষিত যুদ্ধের’ ঘোষণা ছাড়া আর কিছু নয়।

এখন প্রশ্ন হলো, কেন এই যুদ্ধ? কেন বারবার সরকারগুলো আদিবাসীদের দমন করে?

এর পেছনে কি পাহাড়-জঙ্গলের বিপুল সম্পদের প্রতি লোভ কাজ করছে? ২০০৫ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের সময় ‘সালওয়া জুডুম’ নামে একধরনের বাহিনী তৈরি হয়েছিল। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিশোধপরায়ণ এক বাহিনী। শেষ পর্যন্ত ২০১১ সালে নিষিদ্ধ হয় সেই বাহিনী। তখনো দণ্ডকারণ্য অঞ্চলে আদিবাসী জমিতে শিল্প প্রকল্পের পরিকল্পনা চলছিল। এখনো খনি স্থাপনের পরিকল্পনা চলছে।

অমিত শাহ এরমধ্যেই ‘অপারেশন কাগার’ শুরু করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, ছত্তীসগড়ের হাসদেও আরাণ্ড অঞ্চলে আদিবাসীদের সম্মতি ভুয়াভাবে তৈরি করে লিজিং অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। সরকারের যে বড় বড় অবকাঠামো প্রকল্পগুলো নিয়ে গর্ব করে, সেগুলোর উদ্দেশ্যও আসলে করপোরেটদের প্রবেশ সহজ করা। আর যেখানে খনির কাজ চলছে, সেখানেই ঘন ঘন তৈরি হচ্ছে নিরাপত্তা ক্যাম্প।

মাওবাদীরা স্বীকার করছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের দলে নতুন সদস্য নিয়োগের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছে। বিশেষ করে ছত্তীসগড়ের দক্ষিণাঞ্চলে আদিবাসী জনগণের সমর্থনও কমে এসেছে। বছরের পর বছর ধরে চলা সংঘর্ষে চরম দুর্ভোগের অভিজ্ঞতা পাওয়া অনেক তরুণ আদিবাসী এখন আর মাওবাদীদের চরমপন্থী এজেন্ডায় আগ্রহী নয়। মাওবাদীরা ভারতের রাষ্ট্রব্যবস্থা সম্পর্কে ভুল বোঝাবুঝি করেছে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে নিছক ‘নাটক’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। যার ফলে বন-জঙ্গলের যে অঞ্চলগুলো একসময় সরকারের নাগালের বাইরে ছিল, সেখানেও তাদের প্রভাব কমে গেছে।

গত জানুয়ারিতে ছত্তীসগঢ়ে বিদ্যুৎ ও সিমেন্টে ৬৫ হাজার কোটি রুপির প্রকল্পের ঘোষণা দিয়েছে আদানি-গোষ্ঠী। এদিকে মোদী সরকার বলছে, ছত্তীসগড়ের মাটির তলা থেকে লৌহ আকরিক, লিথিয়াম ও অন্যান্য মূল্যবান খনিজ উত্তোলন করে আদিবাসীদের উন্নয়নের সুফল পৌঁছে দিতে চায় তারা। বাসবরাজু নিহত হওয়ার পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করছে, মাওবাদী আন্দোলনের শক্তি ভেঙে ফেলা গেছে এবং এখন নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য দুর্গম অঞ্চলে প্রবেশ করা সহজ হবে। কেন্দ্র ও রাজ্যের বিজেপি সরকার পরিকল্পনা করছে, যেখানে বাহিনী পৌঁছাবে, সেখানেই উন্নয়নের কাজ শুরু হবে।

অ্যাক্টিভিস্ট-আইনজীবী সুদা ভরদ্বাজ তাঁর স্মৃতিকথায় লিখছেন, ‘যেসব আইন মানুষকে অধিকার দেয়—বন অধিকার আইন, শ্রম আইন, দলিত, আদিবাসী ও নারী সুরক্ষার আইন, সেগুলো প্রায়শই প্রয়োগ হয় না। কিন্তু যখন মানুষ সেই অধিকারগুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলে, প্রতিবাদ করে, তখনই “ল অ্যান্ড অর্ডার” সক্রিয় হয়ে ওঠে।’ 

রাজ্যের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নেওয়ার বিষয়ে যত ক্ষোভ, হাজার হাজার আদিবাসীর বিনা বিচারে কারাবাস, মিথ্যা মামলা, ধর্ষণ নিয়ে ততটা কথা হয় না। করপোরেশনগুলো যখন একের পর এক অঞ্চল দখল করছে, তখন মানবিক, পরিবেশগত বা আদিবাসী সংস্কৃতির কোনও দিকের গুরুত্ব থাকছে না। কেবল সম্পদ আহরণই প্রধান হয়ে উঠছে। 

প্রশ্ন উঠছে, মাওবাদী দমনের নামে পরিচালিত এই অভিযান মধ্যে কি তবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে? দণ্ডকারণ্য অঞ্চলের আদিবাসী সম্প্রদায়ের জীবনে আঘাত করা, তাদের উচ্ছেদ করা এবং সেই জমি-সম্পদ করপোরেটদের হাতে তুলে দেওয়াই কি সেই উদ্দেশ্য? এটা কি এক ধরনের জাতিগত নিধন যেখানে ‘মাওবাদী’ লেবেলকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে রাষ্ট্র আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে?

অভিযানগুলোতে বারবার মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন ঘটছে বলে অভিযোগ। বিচারবহির্ভূত হত্যা, ভুয়া মামলায় গ্রেপ্তার, নারী-শিশুদের ওপর নিপীড়ন, যৌন সহিংসতা, ভয়ভীতি প্রদর্শন, এমনকি  গ্রামের পর গ্রাম  পুরোপুরি উচ্ছেদ!  

যেকোন তরুণ-তরুণীকে ‘মাওবাদী’ আখ্যা দিয়ে হত্যা বা গ্রেপ্তার, আদিবাসীদের জীবনের অধিকার, জমির অধিকার, সংস্কৃতি, ভাষা ও পরিচিতির অধিকারকে অস্বীকার করে চলা এই দমন-পীড়ন আসলে এক ধরনের রাষ্ট্রীয় নিধনযজ্ঞ।

এটা ঠিক যে শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুর ফলে মাওবাদীরা কার্যত টিকে থাকার লড়াই করছে। সরকার এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে মাওবাদীদের সশস্ত্র সংগ্রাম ত্যাগের জন্য আলোচনায় আসার ডাক নতুন করে দিতে পারত। একের পর এক ‘ধ্বংসের নীতি’ চালিয়ে যেতে থাকলে তা হয়তো নতুন করে আদিবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ জন্ম দেবে। 

মহাশ্বেতা দেবীর অরণ্যের অধিকারে যেমন বলা হয়েছে, ‘জঙ্গলে ছাই উড়ায়ে দিলে জঙ্গল জানবে বিরসা তারে ভোলেনি। ছাই মাটিতে পড়বে, মাটিতে গাছ জন্মাবে, সেই গাছ বড় হবে।’ 

মহাশ্বেতার গল্পের মতোই অরণ্যের আদিবাসীদের যদি প্রকৃত সমস্যার সমাধান না হয়, তবে তা বারবার বিদ্রোহেরই জন্ম দেবে।

এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:

Post Comment