×

রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার ও দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিতে জোর দিচ্ছে এনসিপি

অন্তর্বর্তী সরকারের নামের পূর্বে ‘নির্বাচনকালীন’ শব্দটি যোগ করার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। নির্বাচন আয়োজন যে অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব, এ বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করতে এমন প্রস্তাবনা দলটির।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংস্কার বিষয়ক সংলাপ করেছে এনসিপি। জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে সকাল সাড়ে ১০টায় এ বৈঠক শুরু হয়।

বৈঠকের বিরতিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এনসিপি নেতারা। তাঁরা বলেন, দৃশ্যমান বিচার এবং সংস্কারের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের দিকে এগোতে হবে। এজন্য যেটুকু সময় প্রয়োজন, তা সরকারকে দেওয়া যেতে পারে।

কোন বিষয়গুলোতে আলোচনা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন জানান, এখন পর্যন্ত সংবিধানের মৌলিক সংস্কার, গণপরিষদ নির্বাচন ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

এনসিপির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ সংবিধান সংস্কারের প্রশ্নে বলেন, “আমরা একটি নির্বাচনই চাচ্ছি, যেটি হবে আইনসভার নির্বাচন। এখানে গণপরিষদের ম্যান্ডেটও থাকবে। এটি সংবিধান পুনর্লিখনের পাশাপাশি পার্লামেন্টের রুটিন কাজও করবে।”

হাসনাত আব্দুল্লাহ আরও জানান, শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। কারণ ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এছাড়া, সংসদের স্থিতিশীলতা, আর্টিকেল ৭০ এবং সাংসদদের স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, গত বৃহস্পতিবার বিএনপির সঙ্গে সংস্কার বিষয়ক বৈঠকে বসেছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সংবিধান পরিবর্তন ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বিষয়ক কিছু সুপারিশে দলটির বেশ আপত্তি রয়েছে। একই ব্যক্তি দুই বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না; একই ব্যক্তি একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলের প্রধান হতে পারবেন না— সংবিধান সংস্কার কমিশনের এই প্রস্তাবগুলো নিয়েও আলোচনা মুলতুবি রয়েছে।

এদিকে আজ আলোচনা শুরুর আগে সূচনা বক্তব্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, সংবিধানে একব্যক্তি কেন্দ্রিক শাসনের বীজ রোপিত আছে। এই রাষ্ট্রকাঠামো বজায় রেখে যে-ই ক্ষমতায় যাক, তার ভেতরেও ফ্যাসিবাদী প্রবণতা থাকবে। তাই সংবিধান পুনর্লিখন, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানো, নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তনে তাঁরা জোর দিচ্ছেন।

সংস্কার প্রশ্নে বিএনপি ও এনসিপির যেসব দ্বিমত রয়েছে সেগুলো কীভাবে সমাধান করা যায়, এমন প্রশ্নের জবাবে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “আলোচনার মধ্য দিয়ে ঐক্যে পৌঁছাতে হবে। ঐক্য তো দলীয় নয় বরং জাতীয় স্বার্থে”।

প্রসঙ্গত, সংস্কার আলোচনার পাশাপাশি নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করতে নিয়মিত নানা কর্মসূচির আয়োজন করছে এনসিপি। গতকাল শুক্রবার রূপায়ন ট্রেড সেন্টারে দলটির অস্থায়ী কার্যালয়ে বেলা তিনটা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত প্রায় নয় ঘণ্টা ধরে দলটির তৃতীয় সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সিদ্ধান্ত হয় জেলা-উপজেলায় দলটির কমিটির আহ্বায়ক হতে বয়স হতে হবে কমপক্ষে ৪০ বছর। তাছাড়া, দলটির বেশ কিছু নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘শৃঙ্খলা ও তদন্ত’ কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

এর আগে, ১৬ এপ্রিল বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে বৈঠক করে দলটি। পাশাপাশি, ১৫ এপ্রিল ইউরোপীয় দেশগুলোর কূটনীতিকদের সঙ্গেও আলোচনায় বসেন তাঁরা। এ সময় তাঁরা দলটির আদর্শ ও অগ্রাধিকারের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি বজায় রাখতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সমর্থনের বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে। বৈঠকে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার উপস্থিত ছিলেন।

এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:

Post Comment