সুপারিশ জমা দিল নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন, আপত্তি হেফাজতের
সম্পত্তির উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমান অধিকার নিশ্চিত করার সুপারিশ রেখে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন। পাশাপাশি নারী উন্নয়ন; অধিকার সংরক্ষণ ও প্রচারের জন্য একটি স্বাধীন নারী কমিশনের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
গতকাল শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেন নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্যরা।
কমিশন ১৫টি বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে। এগুলো হচ্ছে- সংবিধান আইন ও নারীর অধিকার, সমতা ও সুরক্ষার ভিত্তি, নারীর অগ্রগতির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা ও জাতীয় সংস্থাসমূহ, নারীর স্বার্থ ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়ন, নারী ও মেয়ে শিশুর জন্য সহিংসতা মুক্ত সমাজ, জনপরিসরে নারীর ভূমিকা জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে, জনপ্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণ, নারীর অগ্রগতির জন্য শিক্ষা, প্রযুক্তি ও দক্ষতা বৃদ্ধি, সকল বয়সী নারীর জন্য সুস্বাস্থ্য, অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ ও সম্পদের অধিকার, শ্রম ও কর্মসংস্থান, নারী শ্রমিকের নিরাপদ অভিবাসন, দারিদ্র্য হ্রাসে টেকসই সামাজিক সুরক্ষা, গণমাধ্যমে নারীর অংশগ্রহণ, চিত্রায়ন ও প্রকাশ, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে নারীর অন্তর্ভুক্তি ও বিকাশ এবং দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনে নারী।
অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি জাতীয় সংসদের আসন সংখ্যা বাড়িয়ে ৬০০ করার সুপারিশ করেছে কমিশন৷ প্রতিবেদনে বলা হয়, “মোট জনসংখ্যা বিবেচনায় সংসদীয় আসন সংখ্যা ৬০০-তে বৃদ্ধি করা, যেখানে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় একটি সাধারণ আসন এবং নারীদের জন্য একটি সরাসরি নির্বাচিত সংরক্ষিত আসন থাকবে।”
এসকল সুপারিশের যেগুলো এখনই বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। প্রতিবেদন সম্পর্কে তিনি জানান, এটি কেবল নারীদের জন্য নয়, বরং একটি সার্বিক বিষয়। এটিকে পাঠ্যবইয়ের মতো বই আকারে ছাপিয়ে বিলি করা হবে। দলিল হিসেবে অফিসে রেখে দিলে হবে না, মানুষের কাছে উন্মুক্ত করে দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, “আমরা যেন এ কাজের মাধ্যমে অন্যান্য দেশের জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারি। পৃথিবীর মেয়েরা এটার দিকে তাকিয়ে আছে। তারা এটা নিয়ে পর্যালোচনা করবে। অনুপ্রাণিত হবে। অন্য দেশের নারীরাও এটা নিয়ে আগ্রহী।”
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভিন হক বলেন, “জুলাইয়ে যারা প্রাণ দিয়েছে, তাদের স্মরণার্থে এমন কিছু করতে চেয়েছি যা মানুষের জন্য কল্যাণকর হবে, সমাজের জন্য কল্যাণকর হবে।”
সুপারিশগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কিছু কাজ বর্তমান সরকার করে যেতে পারবে। কিছু কাজ পরবর্তী নির্বাচিত সরকার করতে পারবে। সেইসাথে, নারী আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষাগুলোও প্রতিবেদনে আলাদা করে তুলে ধরা হয়েছে।
এদিকে আজ রবিবার হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক দলীয় এক সভা শেষে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবি করেন।
কমিশনের প্রস্তাবনায় নারীর প্রতি বৈষম্যের কারণ হিসেবে ইসলামী উত্তরাধিকার ও পারিবারিক আইনকে দায়ী করা হয়েছে অভিযোগে এই দাবি জানানো হয়।
এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:
Post Comment