জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন আপিল শুনানি বুধবার পর্যন্ত মূলতবি
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিলের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানি আজ মঙ্গলবার (১৩ মে) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মুলতবি ঘোষণা করেছে। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ আগামীকাল বুধবার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
সকাল ১০টায় যথাসময়ে শুনানি শুরু হয়। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে আপিলে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিক। তাকে সহায়তা করেন ব্যারিস্টার ইমরান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির ও ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন। এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের ও অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল।
এর আগে, ২০২৪ সালের ৭ মে আপিল বিভাগ আজকের দিনটি (১৩ মে) শুনানির জন্য নির্ধারণ করে। উল্লেখ্য, ১২ মার্চ প্রথম দফায় জামায়াতের আপিলের শুনানি শুরু হলেও তা স্থগিত হয়ে যায় এবং কার্যক্রম আর এগোয়নি। অবশেষে সেই শুনানি ফের শুরু হলেও আজ আবার তা মুলতবি করা হয়।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পেয়েছিল। তবে পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্টের এক ঐতিহাসিক রায়ে বলা হয়, জামায়াতের গঠনতন্ত্র ও কার্যক্রম বাংলাদেশের সংবিধান ও গণতান্ত্রিক ধ্যানধারার পরিপন্থী, ফলে দলটি রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে অযোগ্য। এই রায়ের ফলে নির্বাচন কমিশন ২০১৮ সালের অক্টোবরে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে।
নিষিদ্ধ হওয়ার আইনি ও সাংবিধানিক ভিত্তি
জামাআতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে তিনটি প্রধান অভিযোগ উল্লেখ করা হয়। এক. উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়, জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রে ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠা এবং শরিয়া আইন চালুর যে লক্ষ্য ঘোষণা করা হয়েছে তা বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও মৌলিক মানবাধিকার পরিপন্থী। দুই. দলটির গঠনতন্ত্রে নারীর রাজনৈতিক নেতৃত্বের সুযোগ সীমিত করা হয়েছে, যা নারী ও পুরুষের সমানাধিকারের সাংবিধানিক নিশ্চয়তার পরিপন্থী বলে অভিহিত করে আদালত। তিন. ১৯৭১ সালের ভূমিকা: আদালত পর্যবেক্ষণে আরো উল্লেখ করে, জামায়াতে ইসলামীর পূর্ববর্তী ইতিহাসে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা, যুদ্ধাপরাধে সংশ্লিষ্টতা, এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানবিরোধী কর্মকাণ্ড এই নিবন্ধন বাতিলের পেছনে নৈতিক ও আইনগত ভিত্তি তৈরি করে।
আপিলের প্রক্রিয়া ও বর্তমান অবস্থান
জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধন বাতিলের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন চুপ থাকার পর ২০২৩ সালের শেষ দিকে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাজনৈতিক দল হিসেবে পুনঃনিবন্ধনের দাবিতে। দলটি দাবি করে, তাদের বর্তমান কার্যক্রম শান্তিপূর্ণ ও সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যেই পরিচালিত হচ্ছে এবং তারা গঠনতন্ত্র সংশোধনের মাধ্যমে আদালতের নির্দেশনা মানার চেষ্টা করছে।
তবে রাষ্ট্রপক্ষ এবং নির্বাচন কমিশনের আইনজীবীরা বলেন, গঠনমূলক পরিবর্তন ছাড়াই দলটি পুনঃনিবন্ধনের দাবিতে ফিরে আসছে, যা আইনের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়।
এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:
Post Comment