চিন্তাভাবনা করেই অধ্যাদেশ, দুশ্চিন্তার কিছু নেই: এনবিআর বিলুপ্তি নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাঠামো ও কার্যপদ্ধতি নিয়ে সম্প্রতি পাস হওয়া ‘রাজস্বনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ’কে কেন্দ্র করে সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও এনবিআরের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের অবস্থানের মধ্যে স্পষ্ট বিভাজন দেখা দিয়েছে। একদিকে সরকার বলছে, নতুন অধ্যাদেশে সকল অংশীজনের স্বার্থ সংরক্ষিত রয়েছে, অন্যদিকে এনবিআরের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা এই অধ্যাদেশকে ‘একতরফা’ আখ্যা দিয়ে আন্দোলনের পথে নেমেছেন।
মঙ্গলবার (১৩ মে) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন বলেন, ‘এই অধ্যাদেশে সবার স্বার্থ সংরক্ষিত আছে। যারা বলছে তাদের মতামত নেওয়া হয়নি—তাঁরা হয়ত বিষয়টি ভালোভাবে পড়েননি। আপনারা ভালো করে দেখলেই বুঝবেন এতে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘পলিসি ডিভিশন আর ইমপ্লিমেন্টেশন ডিভিশন একসাথে থাকা কোনো আন্তর্জাতিক চর্চা নয়। পলিসি নির্ধারণের কাজ পেশাদার ও পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ জানা ব্যক্তিদের দ্বারা করা উচিত। এনবিআরের কাজ হলো সেটি বাস্তবায়ন করা। নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়ন এক হাতে থাকলে স্বার্থ সংঘাতের সম্ভাবনা তৈরি হয়।’
তবে তিনি স্বীকার করেন, এনবিআরের সদস্য ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই অধ্যাদেশ প্রণয়ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘হাজার হাজার কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা সম্ভব না হলেও যাদের প্রতিনিধিত্বমূলক ভূমিকা রয়েছে, তাদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে।’
অন্যদিকে এনবিআরের অভ্যন্তরে চলছে চরম অসন্তোষ। ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ‘ নামে গঠিত প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে মঙ্গলবার বিকেলে এনবিআর ভবনে অবস্থান ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। এর আগেই সোমবার সকাল থেকে হাজারো কর্মকর্তা ও কর্মচারী এনবিআর ভবনে জমায়েত হন এবং প্রায় ৯ ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে ধর্মঘট কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
তাদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামত ছাড়াই ‘গোপনে’ অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং তা জনসম্মুখে প্রকাশও করা হয়নি। তারা মনে করছেন, এটি এনবিআরের ‘অস্তিত্ব সংকটে’ ফেলতে পারে।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে:অধ্যাদেশের খসড়া অবিলম্বে বাতিল করা, এনবিআর বিলুপ্তির যে আশঙ্কা করা হচ্ছে তা স্পষ্টভাবে নাকচ করা. অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে নতুন উদ্যোগ গ্রহণ।এই দাবির পক্ষে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ট্যাক্স লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ঢাকা ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশন এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সমর্থন জানিয়েছে।
এনবিআর সূত্র জানায়, ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা। এখন বাজেটের বাকি তিন মাসে প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে না পারলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হবে না। এরই মধ্যে রাজস্ব কর্মকর্তা–কর্মচারীদের মনোযোগে ভাটা দেখা যাচ্ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
অর্থ উপদেষ্টা অবশ্য রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি নিয়ে আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় দুই শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। এটা হতাশাজনক নয়।’
একদিকে সরকার বলছে, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর পেশাদারীকরণ ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে এনবিআরের কাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে, অন্যদিকে কর্মকর্তা–কর্মচারীরা বলছেন, এটি এনবিআরের বিকেন্দ্রীকরণ এবং তাদের পেশাগত নিরাপত্তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ। আসন্ন কর্মসূচি এবং সরকারের অবস্থানের মধ্যে সমন্বয় না হলে রাজস্ব আদায়ের ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হতে পারে।
এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:
Post Comment