‘আবাসন আমাদের অধিকার, ভিক্ষা চাই না’: আজ জুমার পর গণ–অনশনের ডাক জগন্নাথের
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা টানা তৃতীয় দিনের মতো রাজধানীর কাকরাইল মসজিদ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি ও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। ১৬ মে শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কাকরাইল মসজিদ মোড়ে জড়ো হয়েছেন। আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর গণ-অনশন করবেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারীদের প্রধান তিন দাবি, ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য ২০২৫–২৬ অর্থবছর থেকে আবাসনবৃত্তি নিশ্চিত করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করে অনুমোদন দেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রকল্প পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা।
পাশাপাশি, আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিও জানানো হয়েছে।
চলছে অবস্থান কর্মসূচি
বৃহস্পতিবার রাতে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদ্দীন গণ-অনশন ও লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘সরকার আমাদের আওয়াজ শুনছে না। আমরা অধিকার আদায়ে রাস্তায় নেমেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরব না।’ একই সঙ্গে ১৪ মে ‘কালো দিবস’ পালনের ঘোষণা দেন তিনি।
শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কাকরাইল মোড়ে জড়ো হন। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে গণ–সমাবেশ শুরুর কথা জানানো হয়। অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের অনেকেই গত রাত সেখানে কাটিয়েছেন। রাস্তায় বসে ‘এক দুই তিন চার, হল আমার অধিকার’, ‘সিন্ডিকেটের কালো হাত ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘মানি নারে মানি না, বৈষম্য মানি না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা গেছে তাঁদের।
আন্দোলনের কারণে কাকরাইল মোড় থেকে মৎস্য ভবন পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে জরুরি যানবাহনের জন্য শিক্ষার্থীরা যাতায়াতের ব্যবস্থা করছেন।
শুরু হচ্ছে গণ-অনশন
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদ্দীন জানান, টানা অবস্থান ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে অনেকে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে পূর্বঘোষিত ১০টার পরিবর্তে সাড়ে ১১টায় সমাবেশ শুরু করা হয়। এরপর জুমার নামাজের পর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একযোগে গণ-অনশন শুরু করবেন।
গত বুধবার শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’ অভিমুখে লংমার্চ শুরু করলে পুলিশ বাধা দেয়। গুলিস্তান ও মৎস্য ভবনে কয়েক দফা বাধা পেরিয়ে কাকরাইল মসজিদ মোড়ে পৌঁছালে অতর্কিতভাবে টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ। এতে শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক আহত হন।
বুধবার রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিনা শরমিনের সঙ্গে শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বৈঠক করেন। তবে কোনো সমাধান আসেনি।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অন্তত ৩০টি বাসে করে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাকরাইল মোড়ে যোগ দেন। শিক্ষক সমিতি ও ছাত্র ঐক্যজোটের পক্ষ থেকে সাবেক ও বর্তমান সব জবিয়ানদের অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, ‘আবাসন আমাদের অধিকার, ভিক্ষা চাই না, ন্যায্য অধিকার চাই। আমাদের ওপর যে হামলা হয়েছে, তা অন্যায়। রক্তচক্ষু দেখিয়ে দাবিকে দমন করা যাবে না।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সংকট ও বাজেট ঘাটতি দীর্ঘদিনের। দ্বিতীয় ক্যাম্পাস বাস্তবায়নের বিষয়টি একনেক পর্যায়ে আটকে আছে। এসব সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে আন্দোলন আরও বিস্তৃত হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:
Post Comment