×

রপ্তানি হবে বালু ও মাটি, চূড়ান্ত হচ্ছে নীতিমালা

বাংলাদেশের ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ নদ-নদীর পাড়ে প্রতিনিয়ত জমছে বালু ও মাটি। দেশের নাব্যতা-সংকট নিরসনে নিয়মিত নদী খনন করেও এই অতিরিক্ত সম্পদ ব্যবস্থাপনায় দেখা দেয় একধরনের অনিশ্চয়তা। তবে অবশেষে ভূমি মন্ত্রণালয় ‘বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০২৫’-এর খসড়া চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে—যেখানে বালু ও মাটি রপ্তানির একটি আইনি কাঠামো নির্ধারণ করা হয়েছে।

 আইনি ভিত্তি

২০১০ সালের ‘বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন’-এ বালু ও মাটি রপ্তানির বিধান থাকলেও, তার প্রক্রিয়াগত দিক ছিল অনির্ধারিত। ২০১১ সালের বিধিমালাতেও বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ফলে আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ অকার্যকর রয়ে গিয়েছিল। ২০২৫ সালের এই সংশোধিত খসড়া বিধিমালা সে ফাঁক পূরণ করতে চলেছে।

বিধিমালার মূল দিকগুলো হলো, বালু বা মাটি রপ্তানি ‘কেস টু কেস’ ভিত্তিতে অনুমোদনযোগ্য। পরিবেশ বা নদীর গতিপথের ক্ষতি হবে না—এমন হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়, আইডব্লিউএম এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থার মতামত প্রয়োজন। রপ্তানির আবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। সুপারিশ প্রেরণ কমিটি যাচাই-বাছাই করে অনুমোদনের সুপারিশ দেবে।

অতীত উদ্যোগ নতুন সম্ভাবনা

ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অতীতে সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপসহ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশ থেকে বালু আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু স্পষ্ট নীতিমালা না থাকায় সেসব উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি। নতুন বিধিমালার আলোকে এই প্রক্রিয়াগুলো নতুন গতি পেতে পারে।

নদীগুলোর অতিরিক্ত বালু সরিয়ে দেশে নাব্যতা বজায় রাখা যেমন সম্ভব, তেমনি তা রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করাও সম্ভব—এই দ্বৈত সুযোগকে কাজে লাগাতেই এই আইনি কাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক দৃষ্টান্ত: অন্য দেশগুলো কীভাবে করে

সিঙ্গাপুর: বিশ্বের অন্যতম বড় বালু আমদানিকারক দেশ। নির্মাণ খাতে ভূমি পুনরুদ্ধার (ল্যন্ড রিক্লেমেশন) এবং বড় বড় প্রকল্পে বালু ব্যবহৃত হয়। সিঙ্গাপুর অতীতে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার থেকে বালু আমদানি করত। তবে পরিবেশগত উদ্বেগের কারণে অনেক দেশ সিঙ্গাপুরে রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে।

ভারত: ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্য যেমন গুজরাট, তামিলনাড়ু বালু রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। তবে সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন রায়ে অবৈধ খননের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নেওয়া হয়েছে। ফলে পরিবেশগত ছাড়পত্র ও পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা ছাড়া রপ্তানি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত।

মিয়ানমার কম্বোডিয়া: এসব দেশ থেকে সিঙ্গাপুর দীর্ঘদিন বালু আমদানি করেছিল। কিন্তু পরে পরিবেশ ধ্বংসের প্রতিবাদে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

বালু রপ্তানি বনাম পরিবেশ: সমন্বয় জরুরি

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বালু রপ্তানির মাধ্যমে রাজস্ব আয় সম্ভব হলেও তা পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট করে না—এটা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। ডেল্টা অঞ্চল হিসেবে বাংলাদেশের নদীগুলো ভূগর্ভস্থ স্তর ও নদের ধারা অনুযায়ী সংবেদনশীল। অপরিকল্পিত উত্তোলন নদীভাঙন, সেতু ও বাঁধ ক্ষয় এবং মাছের আবাসস্থলে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে বালু ও মাটি রপ্তানির খসড়া বিধিমালাটি চূড়ান্ত করা হবে। এ-সংক্রান্ত একটি অনলাইন কর্মশালা আজ হওয়ার কথা থাকলে অনিবার্য কারণে তা পিছিয়ে সোমবারে (২০ মে) নেওয়া হয়েছে।

এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:

Post Comment