এনবিআরের ভাঙ্গন: বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভেঙে ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ ও ‘রাজস্ব প্রশাসন বিভাগ’ নামে দুটি পৃথক বিভাগ গঠন করে সরকারের জারি করা অধ্যাদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন দাখিল করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জুয়েল আজাদ রোববার (১৮ মে) এই রিট আবেদন করেন।
রিট আবেদনে দাবি করা হয়েছে, এনবিআর ভেঙে নতুন দুটি বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্তটি সংবিধান পরিপন্থী ও সরকারের আইনগত ক্ষমতার বাইরে। রিটে আইন সচিব ও অর্থ সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে এবং অধ্যাদেশটি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, সে মর্মে রুল জারির আবেদন জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অধ্যাদেশের কার্যকারিতা স্থগিত রাখারও আবেদন জানানো হয়।
বিচার বিভাগীয় পর্যবেক্ষণের অপেক্ষা
সূত্র জানায়, রিট আবেদনের শুনানি হতে পারে হাইকোর্টের বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে। রিটকারীর পক্ষে উপস্থাপন করা হয়েছে যে, সংসদীয় প্রক্রিয়া ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামত ছাড়াই একটি সুপ্রতিষ্ঠিত সংস্থা বিলুপ্ত করে প্রশাসনিকভাবে দুটি বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্তটি যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ।
আইনজীবী জুয়েল আজাদ গণমাধ্যমকে জানান, ‘এনবিআর ছিল একটি দক্ষ প্রতিষ্ঠান। প্রয়োজনীয় সংস্কার ও জনবল বাড়িয়ে এর কার্যকারিতা আরও বৃদ্ধি করা যেত অথচ তা না করে হঠাৎ করে অধ্যাদেশ জারি করে দুটি আলাদা বিভাগ গঠন করাটা আইনত ও গণতান্ত্রিকভাবে সঠিক নয়।’
আইনি বিতর্ক
রিট আবেদনে বলা হয়েছে, এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি নতুন বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্তটি একটি দীর্ঘমেয়াদি নীতিনির্ধারণী পদক্ষেপ, যা সংসদীয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নেওয়া উচিত ছিল। অথচ তা করা হয়েছে শুধুমাত্র একটি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে, যা সংবিধানের ৯৩ অনুচ্ছেদের ‘জরুরি প্রয়োজন’ শর্ত পূরণ করে না। এছাড়া, সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন সংসদ, এবং ৫৫(৬) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মন্ত্রিসভা নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সম্মিলিতভাবে দায়বদ্ধ এই দুই ধারার আলোকে রিটকারীর দাবি, এই অধ্যাদেশটি সরকারের আইনগত ক্ষমতার বাইরে এবং গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করে গৃহীত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১২ মে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি অধ্যাদেশ জারি করে এনবিআর বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ ও ‘রাজস্ব প্রশাসন বিভাগ’ গঠনের ঘোষণা দেয়। এই সিদ্ধান্ত প্রকাশের পর থেকেই রাজস্ব প্রশাসন, অর্থনীতি ও সরকারি নীতিনির্ধারণী মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এ সিদ্ধান্ত রাজস্ব ব্যবস্থাপনার ধারাবাহিকতায় বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে।
আদালত যদি রুল জারি করে, তাহলে অধ্যাদেশটির আইনি ভিত্তি বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার আওতায় আসবে এবং নতুনভাবে গঠিত বিভাগগুলোর ভবিষ্যৎ বৈধতা নির্ধারণে তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:
Post Comment