×

বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধ, বেকার হয়ে পড়েছেন হাজারো শ্রমিক

প্রতিনিধি, সুনামগঞ্জ

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের মাহারাম গ্রামের বাসিন্দা নাসির উদ্দিন। স্ত্রী, সন্তান, মা, ভাইবোন মিলে ১২ জনের সংসার। তিন ভাই যাদুকাটা নদীতে শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালান।  নাসির উদ্দিনের বাবা-দাদাও যাদুকাটা নদীতে সনাতন পদ্ধতিতে বালু-পাথর উত্তোলনের কাজে জড়িত ছিলেন। যাদুকাটা নদীতে বালু-পাথর উত্তোলনের কাজে জড়িত নদীর তীরের প্রায় ২০ গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ।

গত ১৪ এপ্রিল থেকে উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে নদী থেকে বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন আদালত। এর পর থেকে নাসির উদ্দিন বেকার হয়ে পড়েছেন। তাঁর পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। নদীতে বালু-পাথর উত্তোলন ছাড়া আর কোনো পেশার সঙ্গে পরিচিত না থাকায় নাসির উদ্দিনের মতো হাজারো শ্রমিক এখন বেকার অবস্থায় আছেন।

সুনামগঞ্জের সর্ববৃহৎ বালুমহাল যাদুকাটা নদীতে বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় কর্মহীন অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন ৫০ হাজার শ্রমজীবী । নদীতীরে মানুষজন যুগযুগ ধরে সনাতন পদ্ধতিতে বালু-পাথর উত্তোলনে অভ্যস্ত হওয়ায় এই পেশা ছাড়া তাই অন্য পেশায় পারদর্শী না।

বর্তমানে আইনি জটিলতার কারণে বালু মহালটি বন্ধ। কর্ম না থাকায় বেকার অবস্থায় অভাব-অনটনে দিন পার করছেন নদীর ওপর জীবিকানির্বাহ করা পরিবারগুলো।

প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নদীতে সনাতন পদ্ধতিতে বালু-পাথর উত্তোলন করেন শ্রমিকরা।

সারা দিনের পরিশ্রমের পর ৮ শ থেকে ১ হাজার টাকা রোজগার করে সংসারের ব্যয়, ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা, চিকিৎসাসহ নানা প্রয়োজন মিটিয়ে থাকেন তাঁরা। সম্প্রতি যাদুকাটা নদীটি দুই ভাগে ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। কিন্তু বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধ চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করে একটি মহল।

এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত নদী থেকে বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করেন এবং ইজার কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশনা প্রদান করেন উচ্চ আদালত। আদালতের নির্দেশনায় নদীতে হঠাৎ বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে নদীতে জীবিকা পরিবারগুলো। নদী বন্ধ থাকায় কর্মহীন অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন তাঁরা। মানবিক দিক বিবেচনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নদীটি খুলে দিতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এলাকাবাসী।

নদীতে সনাতন পদ্ধতিতে সাধারণ শ্রমিকেরা কাজ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে চলে। কিন্তু এটি বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে হাজারো শ্রমিক।

তাহিরপুর উপজেলার মাহারম গ্রামের বাসিন্দা আবদুল কুদ্দুছ বলেন, ‘যাঁরা নদীর তীর কেটে বালু উত্তোলন করেন, তাঁদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক। আমরা আজ তাঁদের কারণে মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমরা চাই সব সময়ের মতো হাত দিয়ে বালু-পাথর উত্তোলন করে সংসার চালাই।‘

গত দেড় মাস ধরে নদীতে বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় অনেকে কাজের সন্ধানে বের হয়ে গেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

ঘাগরা গ্রামের আতিকুল ইসলাম জানালেন, ‘আমার বাপ-দাদাও এই নদীতে কাজ করে সংসার চালাতেন। আমরা দিনে আনি দিনে খাই। আমদের চাহিদাও অল্প। বড়বড় রাঘব বোয়ালদের জন্য আজকে আমাদের কষ্ট করতে হচ্ছে।‘

নদীতীরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন চরম বিপাকে। শ্রমিক নির্ভর ক্ষুদ্র ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিকরাও দোকান বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন।

যাদুাকাটা নদী শ্রমিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হাকিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কাজ চাই। নদীতে কাজ করে ভাত খেতে চাই। আমরা সরকারের কাছে আর কিচ্ছু চাই না।‘

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলছে, উচ্চ আদালতে বিষয়টি নিয়ে মামলা থাকায় বালু উত্তোলন বন্ধ আছে। তবে শ্রমিকদের জন্য নেই কোনো বিকল্প ব্যবস্থা। সেটির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে অবহিত করা হয়েছে।

এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:

Post Comment