সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে দিনভর কর্মসূচি: উপাচার্যকে ‘ফাদার অব মবোক্রেসি’ আখ্যা ছাত্রদলের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচার চেয়ে ১৮ মে রবিবার বিকাল পৌনে চারটায় রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভে নামে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ সময় তাঁরা ‘সাম্য হত্যার বিচার চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। এতে শাহবাগ এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে সমাবেশ শেষে শাহবাগ ত্যাগ করেন তাঁরা।
এর আগে দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল ক্যাম্পাসে কালো পতাকা মিছিল ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। এ সময় সাম্য হত্যার বিচার চাওয়ার পাশাপাশি ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থতার অভিযোগে উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করা হয়। ছাত্রদলের ঢাবি শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস এ সময় উপাচার্যকে ‘ফাদার অব মবোক্রেসি’ আখ্যা দেন।
মিছিলটি সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হয়ে ভিসি চত্বর ঘুরে কলা অনুষদের সামনে অপরাজেয় বাংলায় এসে শেষ হয়। এছাড়া সাম্যের ‘প্রকৃত’ হত্যাকারীদের ধরতে দুপুর নাগাদ শাহবাগ থানা ঘেরাও করেন আন্দোলনকারীরা।
শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল শাহবাগে প্রতিবাদ সমাবেশ ও দেশব্যাপী কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিল। তাঁদের মূল দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- সাম্য হত্যার সুষ্ঠু বিচার, মূল অপরাধীসহ সব আসামিকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার এবং শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা।
সাদা দলের আল্টিমেটাম
সাম্য হত্যায় ‘প্রকৃত’ অপরাধীদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে একই দিন মানববন্ধন করেছে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিচারপ্রক্রিয়ায় দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত মানববন্ধনে এসব দাবি তুলে ধরেন সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান।
তিনি বলেন, ‘৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রকৃত হত্যাকারীদের বের করতে হবে। অন্যথায় আমরা বৃহত্তর আন্দোলনের দিকে যেতে বাধ্য হবো। আমরা কারও ব্যক্তিস্বার্থে কথা বলছি না- এই হত্যার মোটিভকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে উপাচার্য যেন নিজে গিয়ে কথা বলেন। সরকারের কাছে দৃঢ় অবস্থান নেন। আজকে পাঁচদিন পার হয়ে গেছে। এ সময়ে আমরা কেবল লোক দেখানো গ্রেপ্তার দেখেছি। এটা মানা যায় না। প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।’
মানববন্ধনে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘একজন শিক্ষকের কাছে ছাত্রের লাশ বহন করা সবচেয়ে বেদনার। আজকে আমাদের ছাত্র দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হচ্ছে, আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। ক্যাম্পাস নিরাপদ নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনুরোধ করব- বিশ্ববিদ্যালয়কে নিরাপদ করতে হবে।’
শিক্ষক নেতারা বলেন, সাম্য হত্যার মতো ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। কেবল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নয়, সমগ্র ক্যাম্পাসেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, যেন আর কোনো শিক্ষার্থী দুর্বৃত্তদের হাতে প্রাণ না হারায়।
সাদা দলের সদস্যসচিব অধ্যাপক মহিউদ্দীনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ নাজমুল হোসাইন।
এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:
Post Comment