যশোরে ঘরে ককটেল বিস্ফোরণে শিশু নিহত, আহত তার ভাই-বোন
ঘরের ভেতরে স্কচটেপ পেঁচানো বলের মতো একটি বস্তু নিয়ে খেলছিল তিন ভাইবোন। এ সময় বিস্ফোরণে তিনজনকে আহত অবস্থায় দেখে আশপাশের লোকজন। তাদের প্রথম স্থানীয় যশোরের ২৫০ শয্যার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়েছে। অপর একজনকেও ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে, অপরজন স্থানীয় হাসপাতালেই ভর্তি।
সোমবার (১৯ মে) সকাল সাড়ে আটটার দিকে যশোর শহরের শংকরপুর এলাকায় শাহাদাতের ঘরে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে সুমি বেগম ও শাহাদাত দম্পতির এক শিশু নিহত ও তার দুই ভাইবোন আহত হয়েছে।
এ ঘটনায় শিশুদের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কুড়িয়ে পাওয়া টেনিস বল সাদৃশ একটি বস্তু বাসায় নিয়ে খেলতে গিয়ে বিস্ফোরণে ওই তিন ভাইবোন হতাহত হয়েছে। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শিশুদের বাবা শাহাদাতের ঘরের মধ্যে একসঙ্গে একাধিক বোমার বিস্ফোরণের শব্দ তারা শুনেছেন। এছাড়া তিনি স্থানীয় ‘সন্ত্রাসী’ মুসার সহযোগী। আর পুলিশ বলছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ে তদন্ত করছে।
নিহত শিশুর নাম খাদিজাতুল কুবরা, তার বয়স পাঁচ বছর। আহত দুজনের মধ্যে তার সহোদর সবুজ আহম্মেদের বয়স সাত বছরের ও সৎবোন আয়েশা সুলতানার বয়স তিন বছর। বিস্ফোরণের পর তাদের রক্তাক্ত অবস্থায় ঘরে পড়ে থাকতে দেখেন স্বজনরা। পরে তাদের যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে এক শিশুর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় প্রথমে খাদিজাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। তবে ঢাকায় নেওয়ার পথে ওই শিশু মারা যায়।
নিহত শিশু খাদিজাতুল কুবরার মা সুমি বেগম জানান, সোমবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে শিশুরা স্থানীয় ছোটনের মোড়ের পাশে একটি মাঠে খেলছিল। এ সময় খাদিজা স্কচটেপ পেঁচানো বলের মতো একটি বস্তু (ককটেল) কুড়িয়ে পায়। পরে সেটা বাসায় এনে আরও দুই ভাইবোনের সঙ্গে খেলার সময় সেটি বিস্ফোরিত হয়। এ সময় ছেলে সবুজ, মেয়ে খাদিজা ও আয়েশাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন স্বজনরা।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ডাক্তার ইমন হোসেন জানিয়েছেন, বিস্ফোরণে খাদিজার মাথা ও মুখমণ্ডলে গুরুতর আঘাত লাগে। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় স্থানান্তরের পরামর্শ করা হয়। পরে সবুজের শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে তাকেও ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। তবে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পথে দুপুর ১২টার দিকে নড়াইল এলাকায় শিশু খাদিজার মৃত্যু হয় বলে জানান প্রতিবেশী আক্তারুজ্জামান।
ককটেল নিয়ে ধুম্রজাল
এদিকে ঘরের ভেতর ‘একাধিক’ ককটেল বিস্ফোরণ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ধুম্রজাল তৈরি হয়েছে। বিস্ফোরিত ককটেলটি সত্যি কি মাঠে কুড়িয়ে পাওয়া গিয়েছিল, না কি আগে থেকেই শিশুদের ঘরে ছিল, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়।
মারা যাওয়া শিশু খাদিজা শহরের শংকরপুর গোলপাতা মসজিদ এলাকার মৃত সুজনের মেয়ে। খাদিজার বাবা সুজন মারা যাওয়ার পর তাঁরই ছোটভাই শাহাদাতের সঙ্গে দুই সন্তানের জননী সুমি বেগমের বিয়ে হয়। সন্তানরা হলো সবুজ আহম্মেদ ও খাদিজাতুল কুবরা। পরে শাহাদাতের সংসারে আয়েশা সুলতানার জন্ম হয়।
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শাহাদাত শহরে রিকসা চালান। ওই সূত্রটি দাবি করে, শাহাদাত ‘বোমা’ গোপনে ঘরের মধ্যে রেখে দেয়। সোমবার সকাল আটটার দিকে ঘরের একাধিক মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটে।
শাহাদাতের নামে শহরে কোনো মামলা নেই বলে থানা সূত্রে জানা গেছে। তবে ঘরে বোমা বিস্ফোরণে পর তিনি হাসপাতালে উৎস্থিত ছিলেন। ঘটনার পর তাঁকে আটক না করে নজরদারিতে রেখেছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি। অপর দিকে মুসা সব সময়ই ক্ষমতাসীন দলের লোক হিসেবে শহরের একদল নিজস্ব লোকজন নিয়ে তৎপর থেকেছেন। এখনও তিনি শহরের তৎপর বলে জানা গেছে।
এদিকে হাসপাতালে সাংবাদিকদের কাছে শাহাদাত জানান, তিনি বোমা বিষয়ে কিছু জানেন না। বাচ্চারা বলের মতো একটি বস্তু কুড়িয়ে পেয়ে খেলছিল। সেটাই বিস্ফোরণ হয়েছে।
কী বলছেন সচেতন ব্যক্তি ও পুলিশ
এদিকে শহরে একটি ঘরে একাধিক ‘ককটেল’ বিস্ফোরণকে একটি সংকেত হিসেবে দেখছেন সচেতন ব্যক্তিরা। তাঁদের একজন যশোর পৌর নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব জিল্লুর রহমান ভিটু। তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা যশোরে যত্রতত্রভাবে ককটেল মজুদ করে রেখেছে, ফলে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কার্যকর ভূমিকা না রাখায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।’
ঘটনার পর পুলিশের তৎপরতা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসনাতের কাছে। তিনি বলেন, ‘পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট কাজ করছে। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ককটেল বিস্ফোরণের বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ওসি হাসনাত বলেন, ‘বিষয়টি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ককটেলটি কিভাবে এলো, তা খুঁজে বের করতে আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ, স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’
এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:
Post Comment