গ্রেপ্তার নুসরাত ফারিয়া: উদ্বেগ-বিতর্ক, দিনভর যা হলো
স্ট্রিম ডেস্ক
গতকাল রোববার (১৮ মে) সকালে ঢাকার হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়াকে। থাইল্যান্ড যাওয়ার সময় তিনি গ্রেপ্তার হন। ‘মুজিব দ্য মেকিং অব আ নেশন’ সিনেমায় শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করা এই অভিনেত্রী হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
নেটিজেনরা ছাড়াও কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা; প্রখ্যাত সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান ফারিয়ার গ্রেপ্তারে এক্স হ্যান্ডলে উদ্বেগ জানিয়েছেন, লিখেছেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীও।
কেন আটক
ঢাকার হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তারের পর ইমিগ্রেশন পুলিশ জানায়, তাঁর বিরুদ্ধে রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ওই মামলায় তাঁকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে আসামি করা হয়। অভ্যুত্থানের সময় গত ১৯ জুলাই রাজধানীর ভাটারা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন এনামুল হক নামের এক ব্যক্তি। ৩ মে ভুক্তভোগী এনামুল বাদী হয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে মামলা করেন। সেই মামলায় নুসরাত ফারিয়াও আসামি। গ্রেপ্তারের পর প্রথমে তাঁকে ভাটারা থানায় নিয়ে গেলেও পরে সেখানে না রেখে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়ে। ওই মামলায় আজ তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
ফারিয়া যখন আদালতে
আজ সকাল আটটায় নুসরাত ফারিয়াকে আদালতে চত্বরে আনা হয়। সকাল ১০টার দিকে বিচারক সারাহ ফারজানা হক এজলাসে আসেন। তাঁর আদালতে নুসরাত ফারিয়াকে তোলা হয়। আদালতে তিনি ছিলেন বিষণ্ণ। কাঠগড়ার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
শুনানির শুরুতে নুসরাত ফারিয়ার আইনজীবী মোহাম্মদ ইফতেখার হাসান আদালতকে বলেন, ‘ফারিয়া কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্দোলনের পক্ষে লেখালেখি করেছিলেন, সহমর্মিতাও প্রকাশ করেছিলেন।’
নুসরাত ফারিয়াকে যে হত্যা মামলায় আটক করা হয়, সেই হত্যার সময় তিনি বিদেশে ছিলেন বলে তাঁর আইনজীবী দাবি করেন।
তাঁর বক্তব্যের বিপরীতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী নুসরাত ফারিয়াকে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার অন্যতম সহযোগী বলে উল্লেখ করেন।
পিপি বলেন, ‘নুসরাত ফারিয়া শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বায়োপিকে অভিনয় করেছিলেন। পর্দায় তিনি শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। অভিনয় করা কোনো দোষের কিছু নয়। কিন্তু তিনি পরবর্তী সময়ে বলেছিলেন, প্রতিটা ঘরে শেখ হাসিনা রয়েছে। এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে তিনি ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে খুশি করতে চেয়েছিলেন।’
ওমর ফারুক ফারুকী আরও বলেন, তাঁরা আরও অভিনেতাদের খুঁজছেন। এ সময় তিনি হাসিনার আমলের সংসদ সদস্য নায়ক ফেরদৌসের কথা উল্লেখ করে বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসন আমল দীর্ঘায়িত করতে এই অভিনয় শিল্পীরা সহযোগিতা করেছেন।
আজ শুনানি হলেও জামিনের আদেশ দেননি আদালত। ২২ মে পরবর্তী আদেশের তারিখ ধার্য করা হয়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা যা জানালেন
সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, ফারিয়ার বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ হয়নি, তাই তিনি কিছু বলতে পারবেন না।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এখন তাঁর নামে যদি কেস থাকে, আপনি কী করবেন?…ছেড়ে দিলে আবার আপনি কিন্তু…বলবেন স্যার আপনি ছেড়ে দিছেন…।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের যাঁরা অপরাধী, তাঁদের বিচার অবশ্যই হবে। এই বিচার করাটা এই সরকারের ম্যান্ডেট। দেশের মানুষ এ বিষয়ে সরকারকে সমর্থন করে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ফারুকীর স্ট্যাটাস ও ডেভিড বার্গম্যানের উদ্বেগ
নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তারের ঘটনা নিয়ে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাস দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি লিখেছেন, নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তারের ঘটনা তাঁদের জন্য বিব্রতকর। তা ছাড়া সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বিদেশ চলে যাওয়ায় বিমানবন্দরের নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সমালোচনার মুখে পড়েন। সেই সমলোচনার ভয়ে অতিরিক্ত নারভাসনেস থেকে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ফারুকী লেখেন, ‘আমি বিশ্বাস করি ফারিয়া আইনি প্রতিকার পাবে। এবং এই ধরনের ঢালাও মামলাকে আমরা আরও সংবেদনশীলভাবে হ্যান্ডেল করতে পারব। মনে রাখতে হবে, আমাদের প্রধান কাজ জুলাইয়ের প্রকৃত অপরাধীদের বিচার করা।‘
তবে আজ সংবাদ সম্মেলনে ফারুকীর এই স্ট্যাটাস নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা কী করেছেন, তা তিনি জানেন না। এটা যাঁর যাঁর ব্যক্তিগত মত। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সবার আছে।
এদিকে সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান এক্স হ্যান্ডেলে ইংরেজিতে লিখেছেন, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করা নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার দেশের জন্য গভীরভাবে উদ্বেগের মুহূর্ত। এখন দেখা যাচ্ছে, শুধু আওয়ামী লীগের সমর্থক হওয়া বা দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা যেকোনো ব্যক্তিকে লক্ষ্যবস্তু করা সম্ভব। আমরা এমন এক সময়ে পৌঁছে গেছি, যেখানে এই ধরনের ব্যক্তিরা আর বাংলাদেশে নিরাপদ বোধ করছেন না—যেখানে ভিত্তিহীন অভিযোগে নির্বিচার গ্রেপ্তার বৈধ।
এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:
Post Comment