×

ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন: সুখ নেই সুখের বাতি গ্রামে

স্ট্রিম প্রতিবেদক

ব্রহ্মপুত্র নদের কূলঘেঁষা গ্রামটির নাম সুখের বাতি। ইউনিয়ন চর শৌলমারী। গ্রামের বাসিন্দা দুই শতাধিক পরিবার। অধিকাংশই কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তাতে সুখও ছিল, তবে এবারের নদীভাঙন গ্রামের সুখ কেড়ে নিয়েছে। একের পর এক বসতভিটা, আবাদি জমি ও স্থাপনা বিলীন হচ্ছে নদের পেটে।

সুখের বাতি গ্রামে সম্প্রতি ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়ার হুমকিতে রয়েছে গ্রামটি। গত কয়েক দিনে সুখের বাতি গ্রামে ৪২টি বসতভিটা ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে বিলীন হয়েছে। পুরো গ্রামটি ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। একইভাবে শোলমারী ইউনিয়নে ঘুঘুমারী, সোনাপুর ও নামাজের চর এলাকায়ও ভাঙন তীব্র হয়েছে। তবে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় ভাঙন রোধে এখনই ব্যবস্থা নিতে পারছে না বলে জানিয়েছেন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ।

সাম্প্রতিক ভাঙন সম্পর্কে জানান উপজেলার চর শৌলমারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এ কে এইচ এম সাইদুর রহমান। তিনি জানান, গত কয়েকদিনে সুখের বাতি গ্রামে ৪২টি বসতভিটা ব্রহ্মপুত্রে বিলীন হয়েছে। এছাড়া ইউনিয়নে ঘুঘুমারী, সোনাপুর ও নামাজের চর এলাকায়ও ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে এই চারটি গ্রামে ১৪০টি বসতভিটা ও প্রায় ২৫০ বিঘা আবাদি জমি নদীভাঙনে বিলীন হয়েছে। ভাঙন হুমকিতে রয়েছে কয়েকশ বসতভিটা, বিপুল পরিমাণে আবাদি জমি ও স্থাপনা।

এর আগে গত বছরের শেষের দিকে অক্টোবরেও সুখের বাতি গ্রামের ভাঙনের দেখা দেয়। ২৪ অক্টবর দুপুরে শৌলমারী ইউনিয়নের কয়েকশ মানুষ নৌকায় গিয়ে জেলা শহরের সড়কে বিক্ষোভ করেন। পরে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপিও দেন তারা। এর সময় বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা জানান, ভাঙন রোধে ১৭ বছর ধরে তাদের নানারকম আশ্বাস দেওয়া হলেও সরকার কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

ভুক্তভোগীরা যা বলছেন

সুখের বাতি গ্রামের বাসিন্দাদের একজন মহিবর রহমান (৬০)। প্রান্তিক কৃষক মহিববের দুই বিঘা আবাদি জমি সপ্তাহখানেক আগে নদে বিলিন হয়েছে। পরে আট শতাংশের বসতভিটাও বিলীন হয়। সহায়-সম্বল হারিয়ে ছয় সদস্যের পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন সরকারি রাস্তার ওপর।

মহিববের রহমানের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সময়মতো বালুভর্তি জিও ব্যাগ না ফেলায় নদীভাঙনের শিকার হয়েছে সুখের বাতি গ্রামবাসী। আবাদি জমির সঙ্গে জীবিকার পথও হারিয়েছেন তারা। ফলে ক্ষুধা-দারিদ্র্যে দিশাহারা পরিবার নিয়ে ঝড়বৃষ্টির মধ্যে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন, তা তিনি জানেন না।

কৃষক মহিবরের মতো নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন দিনমজুর মোখলেস মিয়া (৫৫)। বসতভিটা হারিয়ে তিনি পরিবার পরিজন নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়ের বাড়িতে। তিনি বলেন, ‘সুখের বাতি গ্রামে একসময় সত্যিই সুখ ছিল। আমরা সুখে বসবাস করছিলাম। কিন্তু নদীভাঙন গ্রামের সুখ কেড়ে নিয়েছে। সুখের বাতি গ্রামে এখন আর সুখ নেই। শুধু রয়েছে কান্না আর দুঃখ।’

গ্রামের বাসিন্দারা জানান, পাঁচ দিন ধরে সুখের বাতি গ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। নদের উদরে চলে যাচ্ছে বসতভিটা, আবাদি জমি ও স্থাপনা।

কী বলছে পাউবো

জেলা পাউবো সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৮ এপ্রিল ভাঙন কবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেন পাউবো রংপুর সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, পরে ১৮ এপ্রিল ওই এলাকা পরিদর্শন করেন পাউবোর ডিজাইন সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ও কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী।

চর শৌলমারী ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান অভিযোগ করেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ ভাঙনকবলিত গ্রামগুলো পরিদর্শন করলেও, ভাঙন ঠেকাতে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না!

তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হয় কুড়িগ্রাম পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় ভাঙন ঠেকাতে তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। তবে এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ পেলে দ্রুতই ভাঙন ঠেকানোর কাজ শুরু করা হবে।’

এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:

Post Comment