×

কমলগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স: যন্ত্রপাতির থাকলেও জনবলসংকটে মেলে না চিকিৎসা

স্ট্রিম প্রতিবেদক

সাত বছর আগে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। কিন্তু এখনো ৩১ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে কার্যক্রম। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ সহায়ককর্মী প্রয়োজনের তুলনায় কম হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে সেবাদান। টেকনিক্যাল পারসন না থাকায় হাসপাতালে আধুনিক যন্ত্রপাতির সুবিধা পাচ্ছে না সেবা নিতে আসা ব্যক্তিরা। গ্যারেজে পড়ে থাকছে অ্যাম্বুলেন্স।

জেলা সদর থেকে কমলগঞ্জ উপজেলার দূরন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার। উপজেলার তথ্যবাতায়ন অনুযায়ী, সেখানকার বাসিন্দা প্রায় ৩ লাখ। এ সব মানুষের চিকিৎসার অন্যতম ভরসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। প্রতিদিন প্রায় অর্ধশত রোগী হাসপাতালে ভর্তি ছাড়াও বহির্বিভাগে ২০০-৩০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু লোকবলসংকটে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয় ডাক্তারদের। এ ছাড়া প্রায়শ হাসপাতালে জরুরি ওষুধ না থাকায় বাইরে থেকেই কিনে খেতে হচ্ছে রোগীদের।

পদ শূন্য, পড়ে আছে যন্ত্রপাতি
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, হাসপাতালের চারটি কনসালটেন্ট পদে তিনটি এখনো শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে শূন্য রয়েছে মেডিসিন, সার্জারি ও এনেসথেসিয়া বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট পদ। এ ছাড়া কনসাটেন্ট খাদিজা রহমান শিল্পী (গাইনী) কমলগঞ্জ থেকে বেতন-ভাতা তুললেও বর্তমানে তিনি প্রেষণে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দি মেডিকেল কলেজে কর্মরত রয়েছেন।

এদিকে মেডিকেল কর্মকর্তা পদ দুটি, জুনিয়র কনসানটেন্ট (মেডিসিন) একটি পদ শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া হাসপাতালে সিনিয়র স্টাফ নার্স পদে পাঁচটি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (এসআই) পদে একটি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওগ্রাফি) পদে একটি পদ শূন্য আছে। একইভাবে কার্ডিওগ্রাফার একটি, ওয়ার্ড বয় একটি ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর একটি পদ শূন্য রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চিকিৎসা জন্য ২০১৩ সালে কোটি টাকা ব্যয় করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি ডিজিটাল এক্স-রে যন্ত্র, ২০১৪ সালে ডিজিটাল আলট্রাসনোগ্রাফি যন্ত্র ও ২০২০ সালে ইসিজি যন্ত্র সরবরাহ করা হয়। কোটি টাকার এ সব চিকিৎসা যন্ত্র সরবরাহ করার পরও কোনো টেকনিশিয়ান না থাকায় রোগীদের সুবিধা দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। একইভাবে হাসপাতালে দুইটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও চালকসংকটের কারণে একটি অ্যাম্বুলেন্স গ্যারেজেই পড়ে থাকে।

ভুক্তভোগীদের বিরূপ অভিজ্ঞতা
সোমবার (২৬ মে) কথা হয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মিনাল সিংহ, আফিয়া, রহিম মিয়া, মালেকা বিবির সঙ্গে। তাঁরা বলেন, জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হলে হাসপাতালে করানো সম্ভব হয় না। ফলে বেশি টাকা খরচ করে বেসরকারি ডায়াগনেস্টিক ও মেডিকেল সেন্টারে পরীক্ষা করাতে হচ্ছে। এ ছাড়া হাসপাতালে ভর্তি রোগী থাকার ওয়ার্ডগুলোর বিছানা চাদর, বালিস, গিলাফ নোংরা হয়ে আছে। বাথরুম (শৌচাগার) নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। হাসপাতালের পেছনের অংশে ময়লা-আর্বজনার স্তূপ জমে থাকায় নোংরা পরিবেশ বিরাজ করছে। ফলে সারাক্ষণ মশা-মাছির উপদ্রব লেগেই আছে।

বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা একাধিক ব্যক্তি জানান, প্রায়ই হাসপাতালে ওষুধ থাকে না। ডায়াবেটিকসের জরুরি ওষুধ বছরের চার মাস থাকলে, আট মাসই থাকে না, ফলে বাইরে থেকে কিনে খেতে হয়।

কী বলছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা
নাম প্রকাশে না করার শর্তে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত এক চিকিৎসক বলেন, ‘আমরা অনেক কষ্ট করে রোগীদের সেবা দিচ্ছি। পর্যাপ্ত ডাক্তার না থাকায় অতিরিক্ত সময়েও ডিউটি করতে হয়।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবলসংকটের কথা স্বীকার করেন কমলগঞ্জ স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘৩১ শয্যা থেকে অবকাঠামোগত ৫০ শয্যায় উন্নিত করলেও পুরোনো সরঞ্জাম দিয়ে চলছে চিকিৎসা। প্রয়োজনীয় জনবল এখনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তারপরও আমরা আন্তরিক থাকায় রোগীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছি। জনবল বৃদ্ধি করা হলে আরও ভালো সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।’

মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া আরও বলেন, ‘ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য চিকিৎসক সংকট আছে। এছাড়া এক্স-রে, ইসিজি, ডিজিটাল আলট্রাসনোগ্রাম যন্ত্র আছে। তবে টেকনিশিয়ান (সনোলস্টি/রেডিওগ্রাফার) না থাকায় যন্ত্রগুলো চালুর জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।’ ওষুধের না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে ওষুধ চলে আসবে, তখন রোগীদের ভোগান্তিতে থাকতে হবে না।’

এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:

Post Comment