স্ট্রিম প্রতিবেদক

নির্বাচনের ভোটের সময় মার্কা দেখে নয়, ব্যক্তি দেখে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেছেন, ‘ভোটের সময় মার্কা দেখে নয়, ব্যক্তি দেখে ভোট দিন। যে আপনাকে, আপনার সমাজকে এবং দেশকে সেবা দেবে তাঁকেই বেছে নিন; দল বা প্রতীকের মোহে পড়ে নয়।’

২৭ মে মঙ্গলবার বিকালে চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার ওয়ালি খাঁ মোড়ে এনসিপির এক পথসভা শুরুর আগে দেওয়া বক্তব্যে হাসনাত আবদুল্লাহ এসব কথা বলেন। পথসভায় আরও বক্তব্য দেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, যুগ্ম সদস্যসচিব জুবায়েরুল হাসান আরিফ, মো. রাফসান জানি, মীর আরশাদুল হক, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ডা. মাহমুদা আলম মিতু ও মো. আতাউল্লাহ। এনসিপির কেন্দ্রীয় সংগঠক আরমান হোসেন, জেলা সংগঠক ইমন সৈয়দ, হাসান আলীসহ অন্যান্য নেতারাও এ পথসভায় বক্তব্য দেন।

ভোটারদের উদ্দেশ্যে হাসনাত বলেন, ‘আগামী (জাতীয় সংসদ) নির্বাচনে যাঁদের মধ্যে যোগ্য নেতৃত্ব রয়েছে, যাঁরা জনগণের সেবক হতে চান, যাঁরা জাতির কাছে ও দেশের কাছে দায়বদ্ধ— শুধু তাঁদেরই ভোট দেবেন। যদি দেখেন, এনসিপি থেকেও সেই যোগ্যতা কেউ রাখে না, তাহলে আমাদেরও ভোট দেওয়ার প্রয়োজন নেই।’ তিনি বলেন, ‘মার্কা দেখে ভোট দেবেন না। ব্যক্তি দেখে ভোট দিন, যে আপনাকে, আপনার পরিবারকে এবং এই রাষ্ট্রকে সম্মান করবে, উন্নয়ন দেবে, সেবা দেবে।’

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘গত (জাতীয় সংসদ) নির্বাচনে একটা ভোটের দাম কত ছিল? তিন হাজার টাকা? এবার কত নেবেন? টাকার জন্য যদি আমরা আগের রাতে ভোট বিক্রি করে দিই, তাহলে পরবর্তী পাঁচ বছর সেই ভোটে নির্বাচিত নেতা আমাদের নির্যাতন করবে, লুটপাট করবে, দুর্নীতির রাজত্ব কায়েম করবে। আমি যদি ভোটটা টাকার বিনিময়ে বিক্রি না করি, তাহলে কোনো নেতা সাহস পাবে না দুর্নীতি করার।’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আপনাদের মা-বাবা, পরিবারের বড়দের যদি দেখেন ভোট বিক্রি করতে চাচ্ছেন, তাঁদের বাধা দিন। বলুন, যে নেতার কাছে আপনি আজ এক হাজার টাকায় ভোট বিক্রি করছেন, তিনি আগামী পাঁচ বছর আপনাকে শোষণ করবেন, বিচারহীনতা উপহার দেবেন।’

যোগ্য নেতার চেয়ে যোগ্য ভোটার জরুরি 

যোগ্য ভোটারের গুরুত্ব তুলে ধরে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা অনেক সময় ভাবি— কে যোগ্য নেতা? কিন্তু আমরা ভুলে যাই যে আমাদের আগে যোগ্য ভোটার হওয়া দরকার। যদি আমরা সচেতন না হই, তাহলে যোগ্য নেতৃত্ব আসবে কোথা থেকে?’

তিনি আরও বলেন, ‘রাজনীতি কোনো ব্যবসা নয়, এটা দায়িত্ব। যেসব লোক রাজনীতিকে প্রাপ্তির জায়গা বানিয়েছে, তাঁদের দিয়ে এই দেশের কোনো উপকার হবে না।’

‘আপনারা হোন তাসনিম জারার মতো’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘রাজনীতিতে আসুক তাসনিম জারার মতো উচ্চশিক্ষিত, মার্জিত, দেশপ্রেমিক তরুণরা। আমরা চাই না রাজনীতি টেন্ডারবাজদের হাতে চলে যাক, আমরা চাই না রাজনীতি হোক সুবিধাভোগীদের আশ্রয়স্থল।’

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘চট্টগ্রামের চকবাজার (বৈষম্যবিরোধী) আন্দোলনের সময় ছিল হাব (কেন্দ্র)। আজকেও এখান থেকেই নতুন একটা রাজনৈতিক চেতনার শুরু হোক। আমরা চাই না আর কোনো ভাইবোন রাজপথে নামুক আর তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হোক। আর কোনো ফ্যাসিবাদ এই দেশে ঠাঁই পাক, আমরা তা হতে দেব না।’

‘প্রশ্ন করুন আমাদেরও’

রাজনীতিতে টাকার প্রভাব নিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আপনারা যেসব শিক্ষার্থী আমাদের কথা শুনছেন, আপনারা জানেন, আমাদের স্বচ্ছ ইনকামের (আয়ের) উৎস আছে। রাজনীতি করে কিংবা টেন্ডারবাজি করে আমাদের চলাফেরার প্রয়োজন নেই। আমাদেরকে প্রশ্ন করুন, জবাবদিহিতা চান, তবেই একটা সুশাসনের রাজনীতি গড়ে উঠবে।’

চকবাজারের এই সভার পর নগরীর আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এনসিপি পথসভা আয়োজন করবে বলে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এসব জায়গার মধ্যে আছে বহদ্দারহাট, শাহ আমানত সেতু চত্বর, নিউমার্কেট, আগ্রাবাদ, আখতারুজ্জামান সেন্টার ও অলঙ্কার মোড়।

এর আগে এনসিপির নেতারা রবিবার চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ও সোমবার উত্তর জেলায় সাংগঠনিক সফরে গিয়ে একাধিক পথসভায় বক্তব্য রাখেন। এসব সভায়ও দুর্নীতি, ভোটের মূল্য, রাজনৈতিক স্বচ্ছতা ও তরুণ নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়।