স্থবির বন্দর ও সচিবালয়: দুই অধ্যাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন
দুইটি অধ্যাদেশ ঘিরে কর্মবিরতি ও আন্দোলনে নেমেছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর একটি হলো ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এবং অপরটি ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’।
এই দুই অধ্যাদেশ ঘিরে দেশের প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় একযোগে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
সচিবালয়ে আন্দোলন
‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’- এর খসড়া অনুমোদনের প্রতিবাদে সচিবালয়ের ভেতরে বিক্ষোভ জারি রেখেছে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ। ২৫ মে রবিবার দ্বিতীয়দিনের মতো সচিবালয়ে বিক্ষোভ করেছেন তাঁরা। এ সময় অধ্যাদেশটিকে ‘নিবর্তনমূলক’ ও ‘কালাকানুন’ আখ্যা দেওয়া হয়। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দপ্তর ছেড়ে মিছিলে নেমে স্লোগান দেন, ‘অবৈধ কালো আইন মানব না, মানব না।’
বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি বদিউল কবীর জানিয়েছেন, অধ্যাদেশটি সম্পূর্ণ প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, এই অধ্যাদেশটি গত ২২ মে বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদিত হয়, যেখানে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
এনবিআর বিলুপ্তি নিয়ে ক্ষোভ, বন্দর কার্যক্রমে অচলাবস্থা
এনবিআর ভেঙে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি নতুন বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর বিরোধিতায় আন্দোলনে নেমেছেন কর্মকর্তারা। ফলে দেশের প্রধান বন্দরগুলোতে আমদানি কার্যক্রমে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে।
এনবিআর কর্মকর্তাদের প্ল্যাটফর্ম ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ ঘোষণা দিয়েছে, ২৬ মে সোমবার থেকে আমদানি-রপ্তানির ছাড়পত্রসহ সব ধরনের শুল্ক কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। কেবল আন্তর্জাতিক যাত্রী পরিবহন এর আওতামুক্ত থাকবে। আপাতত রপ্তানি কার্যক্রম সীমিত থাকলেও, সোমবার থেকে তা সম্পূর্ণ স্থগিত হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
শিল্প নেতারা আশঙ্কা করছেন, চলমান অচলাবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে প্রতিদিন প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। সরবরাহে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কায় বিদেশি ক্রেতারা ইতিমধ্যে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বলে জানিয়েছেন একাধিক রপ্তানিকারক।
আইনি চ্যালেঞ্জ ও সাংবিধানিক প্রশ্ন
গত ২২ মে বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদ ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’ সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দেয়। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ, এতে এমন কিছু ধারা সংযোজন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের শাস্তি ও বরখাস্ত করার সুযোগ সহজ হয়েছে। এই খসড়ায় ‘অসদাচরণ’ ব্যাখ্যায় এমন কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যা প্রচলিত কর্মসংস্থান অধিকার ক্ষুণ্ণ করে।
সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, এই অধ্যাদেশ সংবিধানের ২৯(১) অনুচ্ছেদে বর্ণিত সমতার অধিকার এবং ৩১ অনুচ্ছেদে বর্ণিত ‘আইনের আশ্রয়ে থাকার অধিকার’-এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
অন্যদিকে, গত ১২ মে সোমবার ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ প্রণীত হয়। এর মাধ্যমে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জুয়েল আজাদ হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছেন।
রিটে বলা হয়েছে, এই অধ্যাদেশ সংবিধানের ২৬, ৩১ ও ২৯(১) অনুচ্ছেদের পরিপন্থী এবং কোনো আলোচনাহীন ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া ছাড়াই একতরফাভাবে জারি করা হয়েছে। এতে এনবিআরের ১৯৭২ সালের গঠন আদেশ বিলুপ্ত করা হলেও যথাযথ আইনগত ও অংশীজন পরামর্শের কোনো প্রমাণ নেই। ফলে রিটে অধ্যাদেশের বৈধতা প্রশ্নে রুল চাওয়া হয়েছে এবং কার্যক্রম স্থগিত রাখার আবেদন জানানো হয়েছে।
এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:
Post Comment