×

নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়েছে: তারেক রহমান

স্ট্রিম প্রতিবেদক 

বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সমাবেশে বিএনপির চার সাংগঠনিক বিভাগ ঢাকা, সিলেট, ফরিদপুর ও ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে বিপুলসংখ্যক তরুণ অংশ নেন। আয়োজকরা দাবি করেন, সমাবেশে প্রায় ১৫ লাখ তরুণ অংশ নিয়েছিল।

রাজধানীর নয়াপল্টনে বুধবার (২৮মে) বেলা দুটার দিকে শুরু হওয়া সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে আনা এবং জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে দেশের তরুণদের নেতৃত্বে এগিয়ে আসতে হবে।

বিএনপি নেতারা বর্তমান সরকারের পদত্যাগ দাবি করে বলেন, একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। ক্ষমতাসীন সরকার বিচারব্যবস্থা ও প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা চালাচ্ছে, যা প্রতিহত করতে হবে তারুণ্যের শক্তিতে।

বিএনপি নেতারা আরও বলেন, আজকের তরুণরাই আগামীর বাংলাদেশ গড়বে। একটি গণতান্ত্রিক, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে এখনই সংগঠিত হওয়ার সময়।

গণতন্ত্রহীনতার অভিযোগ ও তরুণদের আহ্বান
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, তারা ডিসেম্বরে নির্বাচনের জন্য রোডম্যাপ চেয়েছেন, কারও পদত্যাগ নয়। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সরকার দ্রুত ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ পাঠের ব্যবস্থা ও নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করবে। তা না হলে গণতন্ত্র ও নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন শুরু হলে সেটি সরকারের জন্য দুর্ভাগ্যজনক হবে।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আদালতের রায় কার্যকর না হওয়া আইনের শাসনের জন্য হুমকি। গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি ও ফ্যাসিবাদী পুনরুত্থানের চেষ্টা চলছে। তারুণ্যনির্ভর, কার্যকর ও স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনে তরুণদের নেতৃত্বে এগিয়ে আসার সময় এসেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন মানি না। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আমাদের লড়াই চলবে। আজকের এই সমাবেশে তরুণদের উপস্থিতি প্রমাণ করে, পরিবর্তনের সময় এসে গেছে।’

বিএনপি নেতা ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘শুধু সরকারের পরিবর্তন নয়, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কার। একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ ও প্রশাসন ছাড়া গণতন্ত্র সম্ভব নয়।’

বিএনপি নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘যে সরকার জনগণের ভোট চুরি করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়, তাদের উদ্দেশ্য কখনোই দেশ ও তরুণদের ভবিষ্যৎ নয়। আমরা চাই একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন।’

সমাবেশের জমায়েত

যুবদল-ছাত্রদলের নেতারা যা বললেন
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন যুবদল সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না। তিনি বলেন,‘তরুণদের শক্তিই সরকারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। তাই আমাদের আন্দোলন তরুণরাই এগিয়ে নেবে।’

ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন,‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আজ ছাত্রদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। মুক্তচিন্তা, বাকস্বাধীনতা ও সংগঠনের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।’

স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী বলেন,‘আমরা রাষ্ট্র গড়তে চাই, ধ্বংস নয়। গণতন্ত্র চাই, শাসনের নামে শোষণ নয়।’

যা বললেন তারেক রহমান
সমাবেশের শেষ অংশে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ‘এই সরকারের কেউ যদি ক্ষমতায় থাকতে চায় বা রাজনীতি করতে চায়, তাহলে ক্ষমতা ছেড়ে রাজনীতিতে আসুন।’ তিনি অভিযোগ করেন, নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়েছে, তবে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হতে হবে। তিনি বিএনপির নেতাকর্মীদের জনগণের কাছে গিয়ে তাদের কথা মন দিয়ে শুনে সেই অনুযায়ী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান।

ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের শপথে বাধার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখিয়ে শপথে বাধা দেওয়া হচ্ছে, যা স্বৈরতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার ইঙ্গিত দেয়।’ এরপর তিনি স্লোগান দেন—’দিল্লি নয়, পিন্ডি নয়, সবার আগে বাংলাদেশ।’

তারেক রহমান জানান, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ‘ফ্যামিলি কার্ড’ চালু করে ৪ কোটি পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। কৃষকদের জন্য ‘ফারমার্স কার্ড’-এর মাধ্যমে আধুনিক ব্যবস্থাপনা চালু করা হবে, তথ্যপ্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়িয়ে বেকারত্ব দূর করা হবে এবং সরকারি-বেসরকারি খাতের সমন্বয়ে স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন করা হবে। তিনি আরও জানান, প্রতি পাঁচ বছরে ২৫ থেকে ৩০ কোটি বৃক্ষরোপণের লক্ষ্য রয়েছে।

তারেক রহমান বলেন, ‘উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতি শুরু করেছিলেন জিয়াউর রহমান। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্র গঠন করা হবে জনগণের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী।’

এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:

Post Comment