×

হার্ভার্ডে ট্রাম্পের কূটনীতি: দুই রাজকন্যার হোমওয়ার্কে হস্তক্ষেপ!

স্ট্রিম ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর কন্যা শি মিংঝে এবং বেলজিয়ামের ভবিষ্যৎ রানি, ক্রাউন প্রিন্সেস এলিজাবেথ। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও বিতর্ক তাঁদের শিক্ষাজীবনকে কেন্দ্র করে একটি বড় আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

শি মিংঝে ২০১৪ সালে হার্ভার্ড থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক শেষ করে চীনে ফিরে যান। এরপর দীর্ঘ সময় তিনি আড়ালে ছিলেন। সম্প্রতি মার্কিন অতি-ডানপন্থী ভাষ্যকার লরা লুমার সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করেন, শি মিংঝে এখনো ম্যাসাচুসেটসে অবস্থান করছেন এবং তাঁর নিরাপত্তা রক্ষায় চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির সদস্যরা নিয়োজিত। যদিও এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেওয়া হয়নি, তবু মার্কিন রাজনৈতিক অঙ্গনে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।

শুধু অভিযোগ নয়, লুমার এই ইস্যুতে সরাসরি রিপাবলিকান রাজনীতিবিদদের ট্যাগ করে তাদের বক্তব্য দাবি করেন। রিপাবলিকান রাজনীতিবিদদের মধ্যে রয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, সিনেটর জেডি ভ্যান্স এবং সিনেটর মার্কো রুবিও।

এ বিষয়ে রুবিও বলেন, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকার সীমিত করা উচিত।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই প্রসঙ্গে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, শিক্ষা বিনিময় কখনোই বাধাগ্রস্ত হওয়া উচিত নয় এবং এই ধরণের অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

অন্যদিকে বেলজিয়ামের ক্রাউন প্রিন্সেস এলিজাবেথ হার্ভার্ডে মাস্টার্স প্রোগ্রামে পড়ছেন এবং ফুলব্রাইট স্কলার হিসেবে পেয়েছেন বিশেষ সম্মান । তবে তাঁর শিক্ষাজীবনেও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ডসহ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে, কারণ এই প্রতিষ্ঠানগুলো গাজা যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততার তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
এর জেরে ট্রাম্প হার্ভার্ডের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষমতা সীমিত করার কথা ঘোষণা করেন। এর ফলে এলিজাবেথের মতো শিক্ষার্থীদের ভর্তি ও পড়াশোনা ঝুঁকির মুখে পড়ে।

বেলজিয়ামের রয়্যাল প্যালেস থেকে জানানো হয়েছে, তারা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। রাজপরিবারের মুখপাত্র জেভিয়ার বেয়ার্ট বলেন, অনেক অনিশ্চয়তা রয়েছে, তাই আমরা এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না।

বেলজিয়ামের রাজপরিবার-বিষয়ক বিশ্লেষক উইম ডেহ্যান্ডশুটারের মতে, তিনটি সম্ভাবনা রয়েছে: ক) এলিজাবেথের ডিগ্রি বাতিল হতে পারে। খ) ট্রাম্প প্রশাসন অভিজাত শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা ছাড় দিতে পারে। গ) প্রশাসন সিদ্ধান্ত বদলাতেও পারে।
এদিকে, শি মিংঝের অবস্থান নিয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই। ২০১৫ সালে নিউ ইয়র্কারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, তিনি চীনে ফিরে গেছেন। তবে নতুন করে নাম আসায় যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কে উত্তেজনা আরও বেড়েছে।

এই দুটি ঘটনা উচ্চশিক্ষার আন্তর্জাতিক চরিত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। রাষ্ট্রীয় নীতি, নিরাপত্তা ইস্যু এবং রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে অনেকের শিক্ষাজীবন প্রভাবিত হচ্ছে। একদিকে রয়েছে শি মিংঝে, যার নাম রাজনৈতিক কূটনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। অন্যদিকে রয়েছেন এলিজাবেথ, যার ভবিষ্যৎ শিক্ষাজীবন মার্কিন অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে অনিশ্চয়তার মুখে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি একটি দৃষ্টান্ত—যেখানে শিক্ষা আর শুধু শিক্ষার বিষয় নয়, বরং রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং ক্ষমতার টানাপোড়েনের অংশ হয়ে উঠছে। শিক্ষার স্বাধীনতা কি আসলেই স্বাধীন? এ প্রশ্ন আবারও সামনে এসেছে।

এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:

Post Comment