মেয়েদের সঙ্গে আপনি ফ্লাট করেন? জানেন তো ফ্লার্ট কী?
ছেলেটা মেয়েটার সঙ্গে ফ্লার্ট করছে, এ কথা শুনে অনেকে বলবেন,মেয়েটাকে উত্যক্ত করছে ছেলেটা। আসলেই কি তাই? জানাচ্ছেন শতাব্দিকা ঊর্মি
রিনি তার বান্ধবী নেহাকে বলছে, `ছেলেটা দুইদিন ধরে এত ফ্লার্ট করতেছে, কী আর বলব!’ নেহা মুচকি হাসল। ওদিকে একদিন সুমি তার রুমমেটকে বলল, ‘ছেলেটা এত খারাপ, বুঝলি! কী সব ভয়ংকর ভয়ংকর ফ্লার্ট করে সারাদিন!’ কেউ গানের ভাষায় বলে, ‘তোমার জন্য মরতে পারি, ও সুন্দরী তুমি গলার মালা’, কেউবা আবার শরীরে জ্বালাধরানো ফ্লার্ট ও করে।
রিনি বা নেহার মতো দেশের অধিকাংশ নারীদেরই এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। এখন বেশির ভাগ নারীর জীবনেই ‘ফ্লার্ট’ ব্যাপারটা বেশ পরিচিত ঘটনা।
কিন্তু ফ্লার্ট আসলে কীভাবে ঘটে? তা বলার আগে বলা দরকারফ্লাট বিষয়টা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে।
কীভাবে বুঝব ফ্লার্ট
‘ফ্লার্ট’ শব্দের অর্থ ‘আন্তরিক কোনো অভিপ্রায় ছাড়া আমোদের জন্য ভালোবাসা দেখানো’, সোজা বাংলায় যাকে বলাযায় প্রণয়চাতুর্য। ইংরেজিতে ফ্লার্টকে দুইরকমভাবে ব্যাখ্যা করা যায়—ক্রিপি ফ্লার্ট, নন-ক্রিপি ফ্লার্ট। ক্রিপি ফ্লার্টের মধ্যে থাকে এক ধরণের উত্যক্ততা। আর নন-ক্রিপি ফ্লার্টে উত্যক্ত ভাব থাকে অনুপস্থিতি। বিপরীতে এতে থাকে মিষ্টি কথার ফুলঝুরি। আবার খাস বাংলায় ফ্লার্ট বোঝাতে কেউ কেউ একে বলেন ‘লুচ্চামি’, অনেকে বলেন ‘টাংকি মারা’। ‘লুচ্চামি’ বোঝালে তাতে নেতিবাচকতা থাকে বেশি। আর ‘টাংকি মারা’র ক্ষেত্রে সেটা হয়তো কিছুটা দুষ্টামির মতো হালকা হয়ে ওঠে।
ফ্লাট এমন একটি শব্দ, বাংলা ভাষায় যার পরিভাষা খোঁজা একটুমুশকিলই বটে। কারণ বাংলা সংস্কৃতিতে মানুষের এই সব নন-বাইনারি অনুভূতি কখনই খুব ইতিবাচক হয়ে ওঠেনি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুই ভাষাতাত্ত্বিক এডওয়ার্ড সাপিও বেঞ্জামিন লি উরফ নিম্নবর্গের মার্কিনিদের ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণাকরেছেন। তাঁদের মতে, ভাষারসঙ্গে নির্দিষ্ট ভাষাভাষী মানুষের সংস্কৃতি ও অভিজ্ঞতার সম্পর্ক থাকে, যা আবার ভাষার সীমাবদ্ধতাও নির্ধারণ করে। তাই ফ্লাটের বাংলা অর্থখুঁজতে গেলে আমাদের ওই ‘ভাষার সীমাবদ্ধতা’র মুখোমুখি হতে হয়।
তো ফ্লার্ট কী, তা বুঝতে হলে পাশ্চাত্যে ও প্রাচ্য সংস্কৃতিও একটু বোঝা দরকার। পাশ্চাত্যে ফ্লার্ট বা ডেইট শুধুই আর্কষণের বিষয়, প্রতিশ্রুতির নয়। কেননা সাধারণভাবে পশ্চিমে মানব-মানবীর আকর্ষণ বা যৌনতাকে খুব সাধারণভাবে ফ্রয়েডের বৈজ্ঞানিক দর্শনের আলোকেই দেখা হয়।
কিন্তু প্রাচ্যে ব্যাপারটা ভিন্ন।দীর্ঘ সময় ধরে এখানকার সংস্কৃতিটাই এমন যে এখানে যৌনতা বা আকর্ষণ তৈরি হওয়ার আগেই শিশুরা বুঝে ফেলে ব্যাপারটা গোপন, অশ্লীল বা নেতিবাচক কিছু। বিশেষত, নারী ও মেয়েশিশুর জন্য বিষয়গুলো আরও শক্তপোক্ত করা হয়।
তাই কারও মুখে ভালোবাসা- ভালোলাগার কথা শুনলেই প্রথমে মাথায় আসে বিয়ের প্রসঙ্গ। এ বাস্তবতায় ভালোবাসা বা মন জয় করার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় শর্ত, প্রতিদান, পরিচয়। মূলত সংস্কৃতিগত কারণেই কোনো সম্পর্কে ফ্লার্টের সময়টা মোটামুটি একটা নেতিবাচক অবস্থা হিসেবেই ধরে নেওয়া হয়।
ফ্লার্ট প্রতিরোধের উপায়
সবার আগে বুঝতে হবে, ফ্লার্ট আসলেই নেতিবাচক কি না। আর কোনটাকে ফ্লার্ট বলে বিবেচনা করব। উত্যক্তকর পরিস্থিতি বা অস্বস্তিকর প্রশংসাকে ফ্লার্টের মধ্যে ফেলা যাবে কি না, এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে সচরাচর একটা দ্বিধা কাজ করে।
ভিন্ন ভিন্ন মানুষের কগনিটিভ পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রশংসা ভিন্ন ভিন্নভাবেই গৃহীত হতে পারে। এক্ষেত্রে ব্যক্তির সামাজিকীকরণ তথা বিবর্তিত মানসিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বুঝে নিতে হবে কোন কথাটা তার সঙ্গে যাচ্ছে, আর কোনটা যাচ্ছে না। অপরপক্ষের মানুষকে সেই অনুযায়ী বোঝাতে হবে।
কোনো কোনো সময় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়যে ফ্লার্ট করতে করতে ব্যক্তি তাঁর সামাজিক আচরণের সীমা লঙ্ঘন করে ফেলেন। যা অন্যপক্ষের মধ্যে অনাগ্রহ, অস্বস্তি ও বিরক্তি তৈরি করে।
এ থেকে মুক্তির সবচেয়ে সহজ উপায় হলো যিনি ফ্লার্ট করছেন তা বিষয়টি বোঝানো।এরপরেও পরিস্থিতির পরিবর্তন না ঘটলে দরকার হবে ওই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগে কমিয়ে আনা।
তবে পুরুষের ক্ষেত্রে যোগাযোগ বন্ধ করাটা কার্যকর হলেও নারীর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা তেমন নয়। অনেক সময়ই ‘না’ বোধক কথা বা প্রত্যাখ্যান পুরুষের অহমে আঘাত করে। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবেপুরুষটি ক্ষমতাতান্ত্রিক যৌনহিংসার কারণে নারীর স্লাটশেমিং পর্যন্ত করতেও পিছ পা হয় না।তাই এসব ক্ষেত্রে নারীর জন্য ‘না মানে না’ অথবা ‘No means no’ তে দাঁড়িয়ে থাকাটাই চাপের হয়ে ওঠে।
তাই ফ্লার্ট প্রতিরোধ করা চেয়ে কীভাবে কথা বললে অন্যপক্ষ ফ্লার্ট করার সুযোগ পাবে না, এই ভাবনা ভাবাই বোধকরি বেশি কাজের।
এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:
Post Comment