×

মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে টেক্কা দিয়ে ফেলেছে এআই

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এখন আর শুধু প্রশ্ন আর উত্তরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই—এটি মানুষের জ্ঞান তথা বুদ্ধিমত্তাকে ছাড়িয়ে গেছে, এমন তথ্য জানিয়েছে গুগলের গবেষণা শাখা ডিপমাইন্ড। প্রযুক্তিভিত্তিক সাইট জেডিনেট এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে।

বর্তমানে এআই-এর সবচেয়ে আলোচিত দিক হলো “জেনারেটিভ এআই”, যা শুধু মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিতে নয়, বরং নিজে নিজে চিন্তা করে কাজ করার দিকে এগোচ্ছে। ইতিমধ্যে টুরিং টেস্ট বা পরীক্ষামূলক পদ্ধতি পার করে ফেলেছে এআই। কিন্তু ডিপমাইন্ডের গবেষকরা বলছেন, শুধু পরীক্ষায় ভালো করাই যথেষ্ট নয়—এআই-কে অভিজ্ঞতা থেকে শেখার সুযোগ দিতে হবে।

ডিপমাইন্ডের গবেষক ডেভিড সিলভার ও রিচার্ড সাটন বলছেন, এআই-কে যদি পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করতে দেওয়া হয়, তাহলে সেটি নিজে নিজে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারবে এবং আরও দক্ষ হয়ে উঠবে।

তাঁরা লিখেছেন, “যখন আমরা এআই-কে অভিজ্ঞতা থেকে শেখার পূর্ণ সুযোগ দিতে পারবো, তখন অবিশ্বাস্য সব ক্ষমতা জন্ম নেবে।”

সিলভার ও সাটন দুজনই এআই জগতে কিংবদন্তি। সিলভার তৈরি করেছিলেন আলফা জিরো, যেটি দাবা ও গো খেলার মতো গেমে মানুষের চেয়ে ভালো খেলতে পারে। আর সাটন ‘রিইনফোর্সমেন্ট লার্নিং’ নামের শেখার একটি পদ্ধতির অন্যতম আবিষ্কারক, যার ভিত্তিতে তৈরি হয়েছিল আলফা জিরো।

তাঁরা বলছেন, বর্তমানের বড় ভাষা মডেলগুলো (যেমন চ্যাটজিপিটি) শুধু মানুষের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্যই বানানো হয়েছে। কিন্তু এতে এআই নিজে নিজে কিছু শেখার বা বুঝে নেওয়ার সুযোগ পায় না।

তাঁদের প্রস্তাবিত পদ্ধতির নাম “স্ট্রিমস”, যেখানে এআই-কে একটি ধারাবাহিক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে শেখার সুযোগ দেওয়া হয়। মানুষ যেমন জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা থেকে শেখে এবং দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য ঠিক করে, তেমনি এআই-ও যেন সেভাবে শেখে।

তাঁরা বলেন, বর্তমান প্রযুক্তি দিয়েই এ ধরনের স্ট্রিমভিত্তিক এআই বানানো সম্ভব। উদাহরণ হিসেবে তাঁরা ওয়েব ব্রাউজ করতে পারা এআই বা কম্পিউটার ইন্টারফেস ব্যবহার করা এআই-এর কথা বলেন। ভবিষ্যতে এই এআইগুলো নিজে নিজে কাজ করতে পারবে এবং বিভিন্ন সিগনাল (বা ইঙ্গিত) থেকে পুরস্কার নিয়ে বুঝতে পারবে কোন কাজটা ভালো, কোনটা নয়।

পুরস্কারের উৎস কী? সিলভার ও সাটন বলছেন, মানব ডেটার বাইরে বাস্তব জগতেই রয়েছে অসংখ্য সিগনাল—যেমন খরচ, লাভ, স্বাস্থ্য সূচক, জলবায়ু পরিবর্তন, ঘুমের সময়, ভাষা শিক্ষার ফলাফল ইত্যাদি। এআই যদি এসবের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে, তাহলে শেখার সুযোগও অনেক বাড়বে।

তাঁরা উদাহরণ দিয়ে বলেন, একজন ব্যবহারকারী যদি বলেন “আমার ফিটনেস বাড়াও”, তাহলে এআই তার হৃদস্পন্দন, ঘুমের সময় ও হাঁটার পরিমাণ বিশ্লেষণ করে পুরস্কার নির্ধারণ করতে পারবে। আবার কেউ যদি বলেন “আমাকে স্প্যানিশ শেখাতে সাহায্য করো”, তাহলে এআই ব্যবহারকারীর পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে শেখার পথ ঠিক করতে পারবে।

এই পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এটি কেবল প্রশ্ন-উত্তরেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। এআই দীর্ঘ সময় ধরে মানুষের সঙ্গে কাজ করে তার আচরণ বুঝতে পারবে এবং প্রয়োজনে নিজে নিজে পরিবর্তন আনতে পারবে।

তাঁরা বলেন, “এ ধরনের এআই সহকারী ব্যবহারকারীর ঘুম ও খাদ্যাভ্যাস দীর্ঘ সময় ধরে পর্যবেক্ষণ করে উন্নত স্বাস্থ্য পরামর্শ দিতে পারবে। আবার, শিক্ষার্থীদের শেখার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করে দীর্ঘমেয়াদে সাহায্য করতে পারবে।”

তাঁরা আরও বলেন, ভবিষ্যতের এআই এজেন্ট এমন লক্ষ্যও নির্ধারণ করতে পারবে—যেমন নতুন কোনো পদার্থ আবিষ্কার করা বা পরিবেশ থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড কমানো। এই এআই এজেন্ট বাস্তব তথ্য বিশ্লেষণ করে, সিমুলেশন চালিয়ে এবং বাস্তব পরীক্ষার প্রস্তাব দিয়ে কাজ করবে।

তবে এই প্রযুক্তির ঝুঁকিও আছে। সিলভার ও সাটন বলছেন, এই ধরনের এআই যদি নিজে নিজে কাজ করতে থাকে, তাহলে মানুষ কীভাবে তার ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখবে, সেই প্রশ্নও উঠবে। তবে তাঁরা আশাবাদী—এই এআই বুঝতে পারবে কখন তার আচরণে মানুষ বিরক্ত বা অস্বস্তি বোধ করছে, এবং তখন নিজেই তা সংশোধন করতে পারবে।

সবশেষে তাঁরা বলেন, অভিজ্ঞতা থেকে শেখা এআই এত বেশি তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করতে পারবে যে, বর্তমানের সব ডেটা—যেমন উইকিপিডিয়া বা রেডিটের তথ্য—তাও ছোট মনে হবে।

তাঁরা বলেন, “এই পরিবর্তনের ফলে এমন সব ক্ষমতা উন্মোচিত হবে, যা এখনো মানুষের অজানা। এই অভিজ্ঞতাভিত্তিক এআই মানব বুদ্ধিমত্তাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।”

ডেভিড সিলভার এই বিষয়ে সম্প্রতি একটি ডিপমাইন্ড পডকাস্টেও কথা বলেছেন।

এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:

Post Comment