×

শিক্ষা উপদেষ্টার আশ্বাসেও কাজ হয়নি, কুয়েট ভিসির পদত্যাগের দাবিতে অনড় শিক্ষার্থীরা

শিক্ষা উপদেষ্টার আশ্বাসের পরও অনশন প্রত্যাহারে রাজি হননি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) অনশনরত শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।

আজ বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকালে শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার কুয়েট ক্যাম্পাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের দাবি শোনেন এবং তাঁদের অনশন ভাঙতে অনুরোধ করেন। সকাল ৯.৪৫ থেকে ১০.৩০ পর্যন্ত তিনি ক্যাম্পাসে অবস্থান করেন।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার পর সি আর আবরার গণমাধ্যমকে জানান, জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এই গরমের মধ্যে কয়েকজন অনশনরত শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁরা শঙ্কিত। সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য গতকাল তিনজনের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাঁদের সুপারিশ অনুযায়ী একটি আইনি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে তাড়াহুড়োয় কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তা আদালতে টিকবে না।

তবে শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্যের বিপরীতে মুহাম্মদ জাফর ইকবালের উদাহরণ তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বলেন, ২০২২ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন গড়ে ওঠে। সেই সময় শিক্ষার্থীরা মূলত শাবিপ্রবি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছিলেন। অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের আশ্বাসে তাঁরা অনশন ভাঙেন। কিন্তু পরবর্তীতে সেই উপাচার্য আর পদত্যাগ করেননি।

এ বিষয়ে সি আর আববার জানান, ওই ঘটনা নিয়ে তাঁর কিছু বলার নেই। তবে কুয়েটের ঘটনায় তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা। এখানে তিনি কমিটির সুপারিশ মেনে অতি দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের চেষ্টা করবেন।

এমন আলোচনার জবাবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, “আমরা দুইমাস ধরে আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু আমাদের দাবি মানা হচ্ছে না। আমরা এই বিষয়ে আর সময় দিতে চাই না। আমরা লাশ হয়ে গেলেও ভিসির পদত্যাগ ছাড়া অনশন ভাঙব না।”

বর্তমান পরিস্থিতি কী

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা অসমাপ্ত রেখে শিক্ষা উপদেষ্টা ক্যাম্পাস ছাড়েন। এর পরপরই শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় তাঁরা উপাচার্য-বিরোধী নানা স্লোগান দিতে থাকেন।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার (২১ এপ্রিল) বিকেল তিনটায় শিক্ষার্থীরা অনশন শুরু করেন। ৩২ জন শিক্ষার্থী একযোগে অনশনে বসেন। ইতোমধ্যে পাঁচজন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। অনেকেই অসুস্থ অবস্থায় ক্যাম্পাসে চিকিৎসা নিচ্ছেন। স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সামনে সারিবদ্ধভাবে কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এর মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ছাত্রীরা তালা ভেঙে তাঁদের হলে প্রবেশ করেন। এর আগে গত ১৫ এপ্রিল ছেলেদের ছয়টি হলের তালা ভাঙেন শিক্ষার্থীরা।

কুয়েটের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরবাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের নেতাকর্মীদের প্রতীকী অনশন।রাজু স্মৃতি ভাস্কর্যের পাদদেশে বুধবার বেলা ১১ টায়। ছবি: সংগৃহীত

‘চাপ প্রয়োগ’ মানবে না শিক্ষক সমিতি

চাপের মুখে উপাচার্যকে অপসারণ করা হলে তা মেনে নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে কুয়েট শিক্ষক সমিতি। বুধবার বেলা ১টায় ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনে শিক্ষক সমিতির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়।

সম্মেলনে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক হোসেন বলেন, “সরকার একটা কমিটি করেছে। উপাচার্যের যদি কোনো দোষ থাকে, কোনো ভুলত্রুটি থাকে, তাঁরা সরেজমিনে পেলে ব্যবস্থা নেবে; আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু সেটা যদি না হয়, এভাবে কোনো পক্ষের, কোনো গ্রুপের চাপে একজন ভাইস চ্যান্সেলরকে যদি অযৌক্তিকভাবে পদত্যাগ করতে হয়, আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করি। কুয়েট শিক্ষক সমিতি এটা কোনোভাবেই মেনে নেবে না। তাই চ্যান্সেলরের এই মর্যাদার প্রশ্নে, একজন শিক্ষকের মর্যাদার প্রশ্নে আমাদের অবস্থান কঠোর।”

এছাড়া, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসলেও শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষা উপদেষ্টার কোন কথা হয়নি উল্লেখ করে হতাশা প্রকাশ করেন শিক্ষকেরা।

যেভাবে শুরু এই আন্দোলনের

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের প্রশ্নে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদল ও বহিরাগতরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়। এ ঘটনায় শতাধিক মানুষ আহত হন।

উল্লেখ্য, গত ১৪ এপ্রিল কুয়েটের ১০১তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি, এরা হামলার শিকার এবং অন্যায়ভাবে এদের বহিষ্কার করা হয়েছে।

তবে আজ বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০২তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় ওই ৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়ার পাশাপাশি সবগুলো হল আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। যদিও শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যেই প্রতিটি হলে অবস্থান করছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও অনশন

কুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ১৭ জন নেতা-কর্মী অনশনে বসেছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ কর্মসূচি শুরু হয়।

গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক মোফাজ্জল হোসেন সাদাত আজ সকালে অনশনরত অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এর আগে গতকাল রাত ১০.৩০-এর দিকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু শিক্ষার্থী কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। প্রায় দুই ঘণ্টা অবস্থানের পর তাঁরা অবরোধ প্রত্যাহার করেন।

এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:

Post Comment