×

ভারত-পাকিস্তান সংঘাত: বাংলাদেশের সীমান্তের কী পরিস্থিতি

ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের ঘটনার জেরে গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে পাকিস্তানের অন্তত আটটি জায়গায় হামলা চালিয়েছে ভারত। এর পরিপ্রেক্ষিতে পাল্টা হামলার আশঙ্কায় সাধারণ নাগরিকদের সচেতন করতে দেশজুড়ে গতকাল বুধবার অসামরিক মহড়া অনুমোদন করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে যে যুদ্ধে জড়ায়, সে সময়ে সর্বশেষ এমন মহড়া করেছিল তারা।

‘অসামরিক প্রতিরক্ষা জেলা’ (সিভিল ডিফেন্স ডিস্ট্রিক্ট) হিসেবে ভারতের ২৭টি রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে মোট ২৫৯টি অঞ্চলে এই মহড়া হবে। এই তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের ৩১টি এলাকা রয়েছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো বার্তায় বিমান হামলার সময়ে রাজ্যগুলোতে সতর্কতামূলক সাইরেনব্যবস্থা কাজ করে কি না তা যাচাই করতে বলা হয়েছে। বিবৃতে বলা হয়, রাতে হামলার ক্ষেত্রে যুদ্ধবিমানের খবর পাওয়ামাত্র সমস্ত আলো নিভিয়ে ‘ক্র্যাশ ব্ল্যাকআউট’ করে শত্রু বিমানবাহিনীকে বিভ্রান্ত করে দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে। এ ছাড়া হামলার মুখে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভবন, সেতু, তেলের ডিপো, রেলস্টেশন বা বিমানবন্দরের মতো অবকাঠামো ঢেকে দেওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে রাজ্যগুলো নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।

ভারতের এই সিদ্ধান্তের পর বাংলাদেশের সীমান্তেও সতর্কতা তৈরি হয়েছে। দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের ও পাশে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বালুরঘাট এলাকা। রাজ্যটির এক সংবাদকর্মী নাম না প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, স্থলবন্দরে লোকবল বৃদ্ধি করেছে ভারত। সেই সঙ্গে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে। হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে যাঁরা ভারতে যাচ্ছেন, স্ক্যানারের মাধ্যমে তাদের কঠোরভাবে তল্লাশি করে প্রবেশ করার নিয়ম করেছে বিএসএফ ও কাস্টমস কর্মকর্তারা।

দিনাজপুর সীমান্ত এলাকাটি জয়পুরহাট ২০ বিজিবির অধীন। সীমান্তের অবস্থা জানতে ২০ বিজিবির সিইও লেফটেনেন্ট কর্নেল আরিফুল দৌলার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি।

কুমিল্লার বিবির বাজার স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগতলার শ্রীমন্তপুর এলাকায় যাতায়াত করা যায়। বিবির বাজার স্থলবন্দর ফাঁড়ির এক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, স্থলবন্দরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও কার্যক্রম অন্য যে কোনো সময়ের মতো স্বাভাবিক আছে। তবে নিরাপত্তা বাড়ানোর পরিকল্পনা হিসেবে পুলিশ ফোর্স বাড়ানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে চাহিদা দেওয়া হয়েছে।

একই অবস্থা যশোরের শার্শা উপজেলায় অবস্থিত দেশের অন্যতম বেনাপোল স্থলবন্দরের। জেলার চৌগাছা, শার্শা উপজেলা ধরে দুই দেশের সীমান্ত অবস্থিত। শার্শা এলাকার বিজিবি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সীমান্ত এলাকায় এই সময় বিশেষ টহল দেখা যায়নি। সীমান্তের ওপারেও বিশেষ তৎপরতা চালাচ্ছে না বিএসএফ।

বেনাপোল স্থলবন্দর ও সীমান্ত এলাকার বিজিবির সুবেদার মিজানুর রহমান বলেন, সীমান্ত এলাকায় ফসলিজমি ও সীমানা ঘেঁষে চলাচল না করতে স্থানীয়দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে এটা বাড়তি কিছু নয়, নিয়মিত কাজেরই অংশ।

এর আগে ভারতের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী (বিএসএফ) নতুন ১৬টি ব্যাটালিয়ন গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। সরকারের সূত্রের বরাতে ৪ মে এক প্রতিবেদনে দেশটির বার্তা সংস্থা (পিটিআই) জানিয়েছে, বিএসএফ ১৬টি নতুন ব্যাটালিয়ন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। এসব ব্যাটালিয়নে ১৭ হাজারের বেশি নতুন সদস্য নিয়োগ দেওয়া হবে। ভারত-বাংলাদেশ এবং ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরও জোরদার করার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া ভারত সরকার দুটি নতুন সেক্টরাল হেডকোয়ার্টার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাকিস্তান সীমান্তে নজরদারির কেন্দ্র হিসেবে কাজ করার জন্য একটি জম্মুতে, অপরটি বাংলাদেশ সীমান্ত ঘিরে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের জন্য মিজোরামে স্থাপন করা হবে।

এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:

Post Comment