×

যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন, দীর্ঘমেয়াদী সংঘাতের দ্বারপ্রান্তে ভারত-পাকিস্তান

৭ মে শুরু হওয়া ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং তার জবাবে ১০ মে পাকিস্তানের ‘অপারেশন বুনইয়ান-উল-মারসুস’ দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশীকে নিয়ে এসেছে দীর্ঘমেয়াদী সংঘাতের দ্বারপ্রান্তে। অর্ধশত মৃত্য, যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ, এবং সীমান্তে তীব্র গোলাগুলির ঘটনায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশ দুটির সাধারণ মানুষের জীবন।

ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’

২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। এই ঘটনায় শুরু থেকেই পাকিস্তানকে দায়ি করে আসছিল ভারত। হামলাকারীরা পাকিস্তানের আশ্রয়ে আছে, এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ৭ মে ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালায় ভারত।

ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অভিযানে পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে (পিওকে) অবস্থিত জৈশ-ই-মোহাম্মদ ও লস্কর-ই-তৈয়বার নয়টি সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়। অভিযানে প্রায় ১০০ জন জঙ্গি নিহত হয় বলেও দাবি করে ভারত। তবে ভারতের দাবি উড়িয়ে দিয়ে পাকিস্তান জানায়, ভারতের আক্রমণে ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ৪৬ জন আহত হয়েছেন।

পাকিস্তানের ‘অপারেশন বুনইয়ান-উল-মারসুস’

ভারতের হামলার জবাবে পাকিস্তান ১০ মে ‘অপারেশন বুনইয়ান-উল-মারসুস’ শুরু করে, যার লক্ষ্য ছিল ভারতের সামরিক অবকাঠামো। ইসলামাবাদের দাবি, তারা ভারতের ২০টিরও বেশি কৌশলগত স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী আরও দাবি করে, এই হামলায় ভারতের একটি রাফাল যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা হয়েছে।

তবে ভারত এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে জানায়, রাফাল বহর অক্ষত রয়েছে এবং পাকিস্তানের দাবি ‘তথ্যযুদ্ধের’ অংশমাত্র। ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ৫০টিরও বেশি পাকিস্তানি ড্রোন গুঁড়িয়ে দিয়েছে তাঁরা। 

এদিকে, জম্মু, পাঠানকোট, উধমপুর ও পুঞ্চে দু’পক্ষের মধ্যে গোলাগুলিতে ভারতে ১৬ জন বেসামরিক নাগরিক ও একজন বিএসএফ সদস্য নিহত হয়েছে। পাকিস্তানের হামলায় জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলে বেশ কয়েকটি বাড়ি ও যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

যুদ্ধবিরতির ঘোষণা ও পরে লঙ্ঘন

সংঘর্ষের চতুর্থ দিনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছিলেন দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে তিনি এটি জানানোর পরই ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশের পক্ষ থেকেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

ডোনাল্ড ট্রাম্প তার পোস্টে লিখেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এক দীর্ঘ রাতের আলোচনার পর আমি আনন্দের সাথে ঘোষণা করছি যে ভারত ও পাকিস্তান একটি পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।”

কিন্তু মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তান জম্মুর আখনুর সেক্টরে গোলাবর্ষণ শুরু করে, যাতে একজন বিএসএফ সৈনিক নিহত ও সাতজন আহত হয়। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরি যুদ্ধ বিরতি লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন ভারতের সেনাবাহিনী এই হামলার কঠোর জবাব দেবে। 

পরে ভারত পাকিস্তানের নয়টি বিমানঘাঁটি ও দুটি রাডার স্থাপনায় পাল্টা হামলা চালায়। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দুই দেশের সংঘাত চলমান রয়েছে। 

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগ

১০ মে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পর এক বিশেষ সামরিক ব্রিফিংয়ে শেষে জানানো হয়, ভারতীয় বাহিনী সম্পূর্ণ সতর্ক এবং যেকোনো ধরনের উসকানির জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়—বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরব—দুই দেশকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে। 

এদিকে চলমান সংঘাতে জম্মু ও কাশ্মীরে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের জীবন। বন্ধ রয়েছে  ৩২টি বিমানবন্দর। এছাড়া বহু স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। হাজারো মানুষ আশ্রয় নিচ্ছেন বাংকারে। ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যুৎ ও খাদ্য সরবরাহ।

যুদ্ধ বিরতি লঙ্ঘন ও হামলা পাল্টা-হামলার ঘটনায় দীর্ঘমেয়াদী সংঘাতের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে পরমাণু শক্তিধর এই দুই দেশ। দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের উত্তেজনায় বাড়ছে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ। বিশ্লেষকরা বলছেন, এখনই না থামলে পরিস্থিতি যেতে পারে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কূটনৈতিক সমাধানই একমাত্র টেকসই পথ।

এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:

Post Comment