শেষ দুই বছর ‘ক্ষমতার চাবি’ ছিল না প্রেসিডেন্ট বাইডেনের হাতে
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁর মেয়াদের শেষ দুই বছরে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিলেন বলে ওঠে এসেছে এক অনুসন্ধানভিত্তিক বইয়ে। প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টারা পরিকল্পিতভাবে তথ্য ছাঁকনের মাধ্যমে তাঁকে প্রভাবিত করতেন বলেও অভিযোগ উঠেছে বইটিতে। এ নিয়ে সিএনএন এর প্রতিবেদন অবলম্বনে লিখেছেন সৈকত আমীন
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে তাঁর মেয়াদের শেষ দুই বছর রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ক্রমেই হারিয়ে ফেলেছিলেন। একটি অনুসন্ধানভিত্তিক বইয়ে এমনই দাবি করেছেন বাইডেন প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ মন্ত্রিসভার সদস্যরা। বাইডেনকে পর্দার আড়ালে রেখে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত তাঁর ‘ ইনার সার্কেল’ বা ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা নিতেন বলে দাবি উঠেছে বইটিতে।
বইটির নাম—অরিজিনাল সিন: প্রেসিডেন্ট বাইডেনস ডিকলাইন, ইটস কাভার আপ, অ্যান্ড হিজ ডিজাস্ট্রাস চয়েস টু রান এগেইন। বইটি লিখেছেন সিএনএনের খ্যাতনামা সাংবাদিক জ্যাক ট্যাপার এবং অ্যাক্সিওসের হোয়াইট হাউস প্রতিনিধি অ্যালেক্স থম্পসন।
বইটিতে উঠে এসেছে এমন সব তথ্য, যা মার্কিন রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বের স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলছে। ২০ মে প্রকাশের অপেক্ষায় থাকা বইটিতে উঠে এসেছে বাইডেনের শারীরিক ও মানসিক অক্ষমতার অজানা অধ্যায়, যা তাঁর নিকটজন ও উপদেষ্টারা দীর্ঘদিন আড়াল করে রেখেছিলেন।
দুইশজনেরও বেশি ডেমোক্রেট নেতা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে লেখা হয়েছে বইটি। যেখানে উঠে এসেছে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অনেক সিদ্ধান্তই তাঁর নিজস্ব বিবেচনার ফল ছিল না। বরং সিদ্ধান্তগুলো প্রভাবিত হতো তাঁর ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের পরিকল্পিত উপস্থাপনার মাধ্যমে।
হোয়াইট হাউসের অভ্যন্তরে থাকা এই শক্তিশালী পরামর্শদাতা গোষ্ঠীর (ইনার সার্কেল) নেতৃত্বে ছিলেন হোয়াইট হাউজের চিফ অব স্টাফ জেফ জিন্টস, সিনিয়র অ্যাডভাইজার অ্যানিটা ডান, এবং কাউন্সেলর স্টিভ রিচেটি।
‘নির্দেশনা নয়, তথ্যই পৌঁছাত না প্রেসিডেন্টের কাছে’
২০২৩ সাল থেকে বাইডেনের চারপাশের ‘ইনার সার্কেল’ এতটাই ছোট হয়ে আসে যে মন্ত্রিসভার সদস্যরাও প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতেন না।
সাক্ষাৎকারে নাম গোপন রেখে বাইডেনের মন্ত্রিসভার এক সদস্য বলেন, ‘২০২৪ সালে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমার যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। আমরা প্রেসিডেন্টকে আর কোনো বিষয়ে সরাসরি জানাতে পারতাম না। বরং হোয়াইট হাউসের সিনিয়র স্টাফদের মাধ্যমে তথ্য পৌঁছানো হতো। তাঁরা কী দেখাবেন, কী লুকাবেন—সেটা ছিল তাঁদের হাতে।’
বাইডেনের ইনার সার্কেলের এই ‘ছাঁকনি’ মন্ত্রিসভার সদস্যদের কাছে অস্বস্তিকর ছিল। নাম গোপন রাখা মন্ত্রিসভার আরেক সদস্য সাক্ষাৎকারে বলেন, প্রেসিডেন্ট সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু যদি তাঁর চারপাশের লোকজন সিদ্ধান্তের রূপ এমনভাবে সাজান, তাহলে সেটা আসল সিদ্ধান্ত হয় না—বরং তাঁকে একধরনের দিকনির্দেশ দেওয়া হয়।”
‘খুশি রাখাই ছিল মূল লক্ষ্য’
লেখকদের অনুসন্ধানে এসেছে, বাইডেনের ঘনিষ্ঠ কর্মীরা তাঁকে খুশি রাখতেই ব্যস্ত ছিলেন। এমনকি তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতির খবরও তাঁকে জানানো হতো না। সাক্ষাৎকারে বাইডেনের মন্ত্রিসভার এক সদস্য বলেন, ‘তাঁর চারপাশের লোকেরা তাঁকে ঠকিয়েছে। প্রতিদিন যারা তাঁকে দেখেছে, তারাই যদি চুপ করে থাকে, তাহলে দোষ কার?’
বইয়ে দাবি করা হয়, বাইডেনের শারীরিক দুর্বলতা এতটাই প্রকট হয়ে উঠেছিল যে, দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হলে তাঁকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে কাজে পাঠাতে হবে কি না, তা নিয়েও অভ্যন্তরীণ আলোচনা হয়।
সাক্ষাৎকারে বাইডেন প্রশাসনের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সরাসরিই বলেন, তিনি (বাইডেন) বয়সজনিত কারণে দিনে চার-পাঁচ ঘণ্টার বেশি সক্রিয় থাকতেন না। ক্লান্ত হলে সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতা ভেঙে যেত।
বইটিতে আরও উল্লেখ রয়েছে, বাইডেনের উপদেষ্টারা ২০২৪ সালের নির্বাচনে তাঁকে আবার প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানোর সিদ্ধান্ত নেন, যদিও সে সময় তাঁর শারীরিক ও মানসিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ ছিল।গত জুনে একটি বিতর্কে তাঁর পারফরম্যান্স অত্যন্ত দুর্বল হওয়ায় নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণার মাত্র তিন সপ্তাহ পর তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।
সিএনএনকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বাইডেনের মুখপাত্র বইটির সমালোচনা করে বলেন, আমরা এখনো এমন কোনো প্রমাণের অপেক্ষায় রয়েছি যা দেখাতে পারে, জো বাইডেন কখনও কোনো গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষম ছিলেন, কিংবা জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছিল, অথবা তিনি তাঁর দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছিলেন। বরং বইয়ে পাওয়া প্রমাণগুলো একেবারে উল্টোটা দেখায়। তিনি ছিলেন এক অত্যন্ত কার্যকর প্রেসিডেন্ট।
এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:
Post Comment