×

সংশোধিত ওয়াক্‌ফ আইন কি ভারত রাষ্ট্রের প্রতি মুসলমানদের আস্থার সংকট তৈরি করছে

ভারতের সাম্প্রতিক ওয়াক্‌ফ আইন সংশোধনকে ঘিরে দেশটির মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। আজ ২০ মে ভারতের শীর্ষ আদালত এই আইনের সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা আবেদনের শুনানিতে কী নির্দেশ দিতে পারে? ধর্মীয় সম্পদের নিয়ন্ত্রণ, অমুসলমান সদস্যদের বোর্ডে অন্তর্ভুক্তি এবং ঐতিহ্যগত ওয়াক্‌ফ ব্যবস্থার ওপর রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ—সব মিলিয়ে এটি কি শুধু আইনি পরিবর্তন, নাকি বৃহত্তর রাজনীতিরই প্রতিফলন? লিখেছেন রাতুল আল আহমেদ   

ভারতের সংসদের দুই কক্ষেই তুমুল তর্ক-বিতর্কের পর গত ৮ এপ্রিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সংশোধিত ওয়াক্‌ফ আইন কার্যকর করে। ভারতের মুসলমান সম্প্রদায় ও বিরোধী দলীয় নেতাদের মতে, এই আইন মূলত ভারতের মুসলমানদের ক্ষমতাকে ছেঁটে ফেলে দেশটির বর্ধিষ্ণু হিন্দুত্ববাদকে আরও বাড়বাড়ন্ত হওয়ার সুযোগ দেওয়ার রাষ্ট্রীয় আইনি ব্যবস্থা।

ভারতীয় ন্যাশনাল কংগ্রেসের নেতা ও লোকসভার সদস্য শশী থারুর ইতিমধ্যেই এই আইনকে ‘অসাংবিধানিক’ দাবি করেছেন। সংশোধিত আইনটিতে ওয়াক্‌ফ কমিটিতে কেবল অমুসলমানদের যুক্ত হওয়ার সুযোগই দেওয়া হচ্ছে না, একই সঙ্গে ঐতিহ্যগতভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসা সম্পত্তি যেমন গোরস্থান, ঈদগাহ–যেগুলো ওয়াক্‌ফ হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে, সেগুলোকেও ‘যথাযথ প্রমাণের অভাবে’ সরকার অধিগ্রহণ করার পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।

বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট সরকার যদিও এই বলে আশ্বস্ত করেছে যে তারা কোনো সম্পত্তি অধিগ্রহণ করবে না, কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা আমাদের অভয় দেয় না। 

ওয়াক্‌ফ বিল আইনে পরিণত হওয়ার পর দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে বড়সড় কয়েকটি ঘটনা ঘটে গেছে। ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হন। এ ঘটনায় প্রমাণ ছাড়াই ভারত সরকার পাকিস্তানকে দায়ী করে। পাকিস্তানের ওপর একগুচ্ছ প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেয় ভারত, এর ভেতর উল্লেখযোগ্য সিন্ধু পানিচুক্তি থেকে একতরফাভাবে নিজেকে সরিয়ে আনা।

একই সঙ্গে ৭ মে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে পাকিস্তানে বিমান হামলা চালায় ভারত। পাল্টা হামলা চালায় পাকিস্তান ‘অপারেশন বুনিয়ান-উল মারসুস’ নামে। এ পরিস্থিতিতে এই আইনের প্রয়োগ ভারতের রাজনীতিতে কী প্রভাব রাখতে চলেছে এবং বাংলাদেশের সামাজিক-রাজনৈতিক পরিসরে কী প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে, এর সুলুকসন্ধান চলবে এই লেখায়।

যেভাবে এল ওয়াক্‌ফ

আরবি শব্দ ‘ওয়াক্‌ফ’-এর শাব্দিক অর্থ রুদ্ধ করে রাখা বা স্থির রাখা। মুসলমান সমাজে ওয়াক্‌ফ একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় প্রত্যয়, যার মাধ্যমে একজন মুসলমান তাঁর সম্পত্তিকে আল্লাহর নামে দান করে জনকল্যাণে উৎসর্গ করেন। ওয়াক্‌ফকৃত সম্পত্তি বিক্রয়, হস্তান্তর বা উত্তরাধিকারে প্রদানযোগ্য নয়। এটি স্থাবর কিংবা অস্থাবর সম্পত্তি হতে পারে এবং মসজিদ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল, আশ্রয়কেন্দ্র ইত্যাদি জনসেবামূলক খাতে ব্যবহৃত হয়।

ইমাম আবু ইউসুফ ওয়াক্‌ফকে সংজ্ঞায়িত করেছেন মূল সম্পদকে স্থির রেখে তার উপকার জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হিসেবে।

দক্ষিণ এশিয়ায় ওয়াক্‌ফের প্রথম প্রামাণ্য উল্লেখ পাওয়া যায় দ্বাদশ শতকে। মোহাম্মদ ঘোরি তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে পাঞ্জাবের মুলতানে দুটি গ্রাম মসজিদের উদ্দেশ্যে ওয়াক্‌ফ হিসেবে দান করেন। পরে দিল্লি সালতানাত এবং মুঘল সাম্রাজ্যের সময়েও রাজকীয়ভাবে বিভিন্ন সম্পদ ওয়াক্‌ফ করা হয়। পাশাপাশি সাধারণ মানুষও ব্যক্তি উদ্যোগে তাঁদের সম্পদ ওয়াক্‌ফ করতেন। তবে এই ওয়াক্‌ফ দান সব সময় লিখিত আকারে হতো না; অনেক ক্ষেত্রেই লোকপরম্পরায় এ সম্পদের ব্যবহার চলত।

ব্রিটিশ শাসনামলে প্রথমবারের মতো ওয়াক্‌ফ ব্যবস্থাকে কাঠামোবদ্ধ আইনের আওতায় আনা হয়। ১৯১৩ সালে ওয়াক্‌ফ আইন প্রণয়ন ও ওয়াক্‌ফ বোর্ড গঠনের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর ভারত ও পাকিস্তান আলাদা ওয়াক্‌ফ বোর্ড গঠন করে। এরপর ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশের পর স্বতন্ত্র ওয়াক্‌ফ বোর্ড গঠিত হয় এখানেও।

মুসলমানদের ওয়াক্‌ফের মতো দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও ধর্মীয় উদ্দেশ্যে সম্পদ দানের প্রচলন রয়েছে। হিন্দুদের ক্ষেত্রে এই ধরনের দানকে দেবোত্তর সম্পত্তি বলা হয়। দেবোত্তর দানকেও প্রথমবারের মতো আইনগত কাঠামোর আওতায় আনে উপনিবেশিক ব্রিটিশ সরকার, ভারতীয় ট্রাস্ট আইন ১৮৮২-এর মাধ্যমে।

ওয়াক্‌ফের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি মোতওয়াল্লি এবং দেবোত্তর সম্পত্তির দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি সেবায়েত নামে পরিচিত। ব্রিটিশরা আইন প্রণয়নের মাধ্যমে মোতওয়াল্লি ও সেবায়েতদের ক্ষমতা কাঠামোবদ্ধ করার পাশাপাশি অনেকাংশে সীমিত ও সংকুচিত করে ফেলে।

সংশোধিত ওয়াক্‌ফ আইন কি ‘হিন্দুরাষ্ট্র’ গঠনের পথে আরেকটি ধাপ

ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও তাদের আদর্শিক অভিভাবক রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) ‘অখণ্ড ভারত’ ধারণার ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দর্শন গড়ে তুলেছে, যার কেন্দ্রে রয়েছে ‘হিন্দু শ্রেষ্ঠত্ববাদ’-এর ধারণা। এই ধারাবাহিকতায় বিজেপি সরকার ভারতীয় মুসলমানদের সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা খর্ব করার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

এই প্রবণতার বহিঃপ্রকাশ বেশ আগ থেকেই প্রতিফলিত হচ্ছে বহু ঘটনার মাধ্যমে। ১৯৯২ সালে ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভেঙে রামমন্দির নির্মাণ, জ্ঞানবাপী মসজিদ ঘিরে চলমান বিতর্ক, জম্মু ও কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল এবং সর্বশেষ ২০১৯ সালের নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন (সিএএ) প্রণয়ন—যেগুলোর মধ্যে দিয়ে মুসলমানদের সাংবিধানিক অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।

আবার ভারতীয় সমাজে কিছু অংশে মুসলমানবিদ্বেষ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে অনেক ক্ষেত্রে জনপরিসরের কথকতায় মুসলমানদের ‘হত্যাযোগ্য’ করে তোলার ঘটনাও দেখা যাচ্ছে। গোমাংস বহনের বা সংরক্ষণের অভিযোগে প্রকাশ্যে মুসলমান নাগরিকদের পিটিয়ে হত্যার একাধিক ঘটনাও ঘটেছে সাম্প্রতিক সময়ে।

উত্তরপ্রদেশে বিজেপি সরকারের ‘বুলডোজার রাজনীতি’র মাধ্যমে প্রতিবাদী মুসলমানদের ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়ার ঘটনায় সেদেশের উচ্চ আদালত ইতিমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আদালতের মন্তব্যে উঠে এসেছে, রাষ্ট্রের আচরণ আইনের শাসন ও ন্যায়ের ভিত্তি থেকে বিচ্যুত হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে বিজেপি সরকার ওয়াক্‌ফ আইনের যে সাম্প্রতিক সংশোধনী এনেছে, তা ভারতীয় মুসলমানদের জন্য আরেকটি গুরুতর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিতর্কিত এই ওয়াক্‌ফ আইন সংশোধনীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এতে প্রথমবারের মতো ওয়াক্‌ফ বোর্ডে অমুসলমান সদস্য যুক্ত করার সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে ভারতীয় সংখ্যালঘু মুসলমানদের ধর্মীয় ব্যাপারে সংখ্যাগুরু অমুসলমান সদস্যরাও সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।

একই সঙ্গে নতুন আইনে কোনো সম্পত্তি ওয়াক্‌ফ করতে হলে ওয়াক্‌ফকারীকে অন্তত পাঁচ বছর মুসলমান হওয়ার প্রমাণ দিতে হবে সরকারকে। আর এ ঘটনার মধ্য দিয়ে ব্যক্তির ধর্মপালনের মতো ব্যক্তিগত পরিসরেও রাষ্ট্র নাক গলানো শুরু করছে বলে অনেকে মনে করছেন।

এই আইনের আরও একটি কৌশলগত দিক হলো, রাষ্ট্রকে ঐতিহ্যগতভাবে ওয়াক্‌ফ (ওয়াক্‌ফ বাই ইউজার) হিসেবে ব্যবহৃত সম্পত্তির মালিকানা চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ করে দেওয়া। ফলে যেসব সম্পত্তি যেমন গোরস্থান এর মধ্যেই লোকপরম্পরায় ওয়াক্‌ফ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, রাষ্ট্র চাইলে সেগুলোকে চ্যালেঞ্জ করে দখল করতে পারবে। এছাড়াও ওয়াক্‌ফ ঘোষণার ক্ষেত্রে লিখিত প্রমাণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে আইনে। 

এই তিনটি বিষয় ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে তৈরি করেছে গভীর উদ্বেগ। কারণ, মুসলমান সমাজ ওয়াক্‌ফ সম্পত্তিকে ধর্মীয় সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে, যা তাদের আত্মপরিচয়ের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অনেক ক্ষেত্রেই এই সম্পত্তি প্রজন্মের পর প্রজন্ম মৌখিক বা ধর্মীয় দস্তাবেজের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়ে এসেছে। তবে সংশোধীত এই নতুন আইন সেই ঐতিহ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তার মালিকানা ছিনিয়ে নেওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে।

বিজেপি ও আরএসএসের ‘হিন্দু ভারত’ নির্মাণ করার যে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, ওয়াক্‌ফ আইন সংশোধন তারই আরেকটি ধাপ বলেই সংশ্লিষ্টজনদের অনুমান। এক্ষেত্রে মুসলমানদের জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান ও সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারানোর অর্থ শুধু আর্থিক ক্ষতি নয়, বরং তাদের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পরিচয়ের ওপরও আঘাত। বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার যেখানে একদিকে ‘সবকে সাথ, সবকা বিকাশ’-এর বার্তা দিচ্ছে, সেখানে এই ধরনের আইন মুসলমানদের মনে রাজনৈতিক বৈষম্যের ধারণা আরও দৃঢ় করতে পারে।

ভোট ব্যাংক কি আরও এক দিকে ঝুঁকবে

আগামী ২০২৬ সালের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন এখন বিজেপির ‘পাখির চোখ’। এক চতুর্থাংশেরও বেশি মুসলিম ভোটার অধ্যুষিত এই রাজ্যের ভোট ব্যাংক শুরু থেকেই ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুলে’র মাধ্যমে আলাদা করতে চাইছে বিজেপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো। ফলে নতুন ওয়াক্‌ফ আইন পশ্চিমবঙ্গের ভোটারদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। স্বভাবতই এর ফায়দা নিতে চাইবে রাজনৈতিক দলগুলো।

এই আইনের পেছনে যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কাজ করছে, তা হলো মুসলিম ভোট ব্যাংককে ধ্বংস করে বিজেপির মতো হিন্দুত্ববাদী দলকে শক্তিশালী করা। পশ্চিমবঙ্গে মুসলমান ভোটের বিভাজন ঘটানো গেলে এখানে বিজেপির ভোট ব্যাংক আরও বড় হতে পারে।

ভারতের এই সাম্প্রদায়িক ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মধ্যেই পেহেলগামে সশস্ত্র হামলা একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই হামলার প্রেক্ষিতে ভারত-পাকিস্তান যেমন পাল্টাপাল্টি আক্রমণ করেছে, তেমনই ভারতে সাধারণ কাশ্মীরী ও মুসলমানের ওপর নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে। 

ফলে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে যে হামলা পাল্টা হামলা ভারতের মানুষের ভেতর উগ্র জাতীয়তাবোধ বাড়িয়ে তুলতে পারে। যা ব্যবহার করে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি ভারতের মুসলমানদের আরও কোণঠাসা করার চেষ্টা চালাবে। ফলে মুসলমান সম্প্রদায় আরও প্রান্তিক হয়ে উঠতে পারে ভারতের রাজনীতিতে। 

বাংলাদেশে প্রভাব ও চ্যালেঞ্জ

ভারতের ওয়াক্‌ফ আইন সংশোধন শুধু আভ্যন্তরীণ আইনি ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, বরং আন্তর্জাতিক মুসলমান সম্প্রদায়, বিশেষত প্রতিবেশী বাংলাদেশের মুসলমানদের মধ্যেও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। ভারতের এই আইনি পরিবর্তন, যেখানে অমুসলিম সদস্যদের ওয়াক্‌ফ বোর্ডে অন্তর্ভুক্তির সুযোগ রাখা হয়েছে, অনেক মুসলমানের কাছে ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্য এবং স্বশাসনের ওপর হস্তক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়ছে। এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশের মুসলমানদের মধ্যে উদ্বেগ ও আলোচনা শুরু হতে দেখা গেছে, যা সামাজিক অস্থিরতার সম্ভাবনাও তৈরি করতে পারে। 

ওয়াক্‌ফ আইনের সাম্প্রতিক সংশোধন নিয়ে ভারতে শুরু হওয়া বিতর্ক দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, যা বিষয়টিকে আরও জটিল এবং সংবেদনশীল করে তুলেছে। টুইটার (বর্তমানে এক্স), ফেসবুক ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা মত ও প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পাচ্ছে। একদিকে মানবাধিকারকর্মীরা এই আইনের অসাংবিধানিক দিক তুলে ধরছেন, অন্যদিকে ধর্মীয় সংগঠন ও ব্যক্তিরা এর বিরোধিতা করে ধর্মীয় অধিকার হরণের আশঙ্কা প্রকাশ করছে। এ ক্ষেত্রে ভুয়া সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। 

এর পাশাপাশি সীমান্তবর্তী অঞ্চলে যদি ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, তা সরাসরি দুই দেশের নিরাপত্তা ও সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। ভারতের অভ্যন্তরীণ নীতির এই ধরনের ধর্মীয় রূপান্তর, বিশেষত মুসলমানদের ধর্মীয় সম্পদ এবং পরিচিতির ওপর প্রভাব ফেললে, তা বাংলাদেশে প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে বাধ্য। 

ভারত কি তার গণতান্ত্রিক চরিত্র হারাতে বসছে 

ভারতের সাম্প্রতিক ওয়াক্‌ফ আইন সংশোধন সাদাচোখে কেবল একটি ধর্মীয় কাঠামোর সংস্কার বলে মনে হলেও আদতে এটি হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রকাঠামো নির্মাণের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের অংশ বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। আর বিজেপি নেতৃত্বাধীন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার যেভাবে একের পর এক আইনি সিদ্ধান্তের মাধ্যমে মুসলমানদের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করছে—তা একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক প্রকল্পের অংশ, যেখানে মুসলমানদের ‘অপর’ হিসেবে চিহ্নিত করে সংখ্যাগুরু জাতীয়তাবাদের মধ্যে তাদের অবস্থানকে দুর্বল করা হচ্ছে। এ প্রক্রিয়া শুধু ভারতের অভ্যন্তরেই নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ায় ধর্মীয় সহনশীলতার ধারণাকেও আঘাত করছে।

বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী রাষ্ট্রে, যেখানে ধর্মীয় আবেগ প্রবল এবং ভারতের সঙ্গে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গভীর, সেখানে এই ধরনের সিদ্ধান্ত আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও কূটনৈতিক সম্পর্কেও প্রতিকূল প্রভাব ফেলতে পারে। এখন ভারত গণরাজ্যের মালিক তথা ভারতীয় নাগরিকগণ তাদের ধর্মনিরপেক্ষতা ও বহুত্ববাদের যে দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, সেটিকে টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে কতদূর যেতে পারে সেটাই দেখার বিষয়।

 

এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:

Post Comment