×

যানজট, বৃষ্টি আর আন্দোলনে মেট্রোরেল-যাত্রাও যেন ‘ধৈর্যের পরীক্ষা’

ঢাকা শহরের যানজট, বৃষ্টি আর রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে নগরবাসীর জন্য একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে মেট্রোরেল। যদিও এটি স্বস্তির একটি বিকল্প, তবু বাড়তি চাপ, সীমিত ফ্রিকোয়েন্সি আর যান্ত্রিক সমস্যার কারণে অনেক সময় সেই স্বস্তি রূপ নেয় নতুন দুর্ভোগে। এই নির্ভরতাই যেন কখনো কখনো পরিণত হয় একধরনের অসহায়ত্বে। লিখেছেন সৈকত আমীন

রাজধানী ঢাকা বরাবরই তীব্র যানজটের জন্য পরিচিত। এর সঙ্গে যদি টানা বৃষ্টি বা আন্দোলন যোগ হয়, তাহলে রাস্তায় চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এই পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীবাসীর জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বিকল্প হয়ে উঠেছে মেট্রোরেল (এমআরটি লাইন-৬)। কিন্তু প্রতিদিনের বাড়তি চাপ ও সীমিত পরিষেবার কারণে মেট্রোরেল এখন যাত্রীদের জন্য যেমন আশার প্রতীক, তেমনি একধরনের অসহায় অবস্থারও প্রতিফলন।

চলতি মাসে বৃষ্টি হয়েছে কয়েক দিন। রাস্তায় পানি জমে ধীর হয়েছে যান চলাচল। একই সময় শহরের কিছু এলাকায় রাজনৈতিক কর্মসূচি ও ছাত্র আন্দোলনের কারণে শাহবাগ ও মতিঝিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে।

এই পরিস্থিতিতে মেট্রোরেল হয়ে ওঠে অনেকের শেষ ভরসা। অফিসগামী, শিক্ষার্থী ও জরুরি কাজে বের হওয়া মানুষ মেট্রোরেলের দিকে ছুটে যান। ফলে স্টেশনে জমা হয় লম্বা লাইন। টিকিট কাটতে লাগে দীর্ঘ সময়। এমনকি অনেক সময় ট্রেনে দাঁড়ানোর জায়গাও পাওয়া যায় না।

মেট্রোরেল প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহনের জন্য তৈরি। অর্থাৎ দিনে প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার যাত্রী পরিবহন করার মতো সক্ষমতা রয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ যাত্রী মেট্রোরেলে যাতায়াত করেন। কিন্তু আন্দোলন বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় যাত্রীসংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যায়। তখন পরিস্থিতি সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে।

মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ডিএমটিসিএলর তথ্য অনুযায়ী, এখন ট্রেনগুলো ৮-১২ মিনিট পরপর চলে। ভবিষ্যতে লক্ষ্য হচ্ছে প্রতি ৩ মিনিটে একটি ট্রেন চালানো। কিন্তু এখনো সে অবস্থায় পৌঁছায়নি, ফলে যাত্রীদের চাপ বেড়ে যায়।

বিশেষ করে দিনের ব্যস্ততম সময়গুলোতে সচিবালয়, শাহবাগ, মতিঝিল ও কারওয়ান বাজার স্টেশনে যাত্রীর ভিড় সবচেয়ে বেশি। বৃষ্টির মধ্যে প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করতে হয়। একটি ট্রেন গেলেও পরের ট্রেনেও জায়গা না পেয়ে যাত্রীদের ২০-৩০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

অনেকে এখনো অটোমেটিক টিকিট মেশিন ব্যবহার করতে পারেন না। তাই কাউন্টারে লাইন আরও বড় হয়। এর পাশাপাশি যান্ত্রিক গোলযোগ বা বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তখন যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্টেশনে আটকে থাকতে হয়।

যাত্রী বেশি হলে স্টেশনে শৃঙ্খলা রক্ষা করাও কঠিন হয়। কেউ কেউ ধাক্কাধাক্কি করে ট্রেনে উঠতে যান, এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে। নারী ও শিশু যাত্রীদের জন্য এই পরিস্থিতি আরও কষ্টকর।

মেট্রোরেল এখন ঢাকাবাসীর জীবনের অপরিহার্য অংশ। কিন্তু এ নির্ভরতা অনেক সময় অসহায়ত্বে পরিণত হয়—বিশেষ করে যখন রাস্তায় যানজট, বৃষ্টি ও আন্দোলনের মতো পরিস্থিতি একসঙ্গে দেখা দেয়।

মেট্রোরেলকে ‘স্বস্তির গণপরিবহন’  করতে না পারলে এই পরিবহনের প্রতি  আস্থা একদিন ক্লান্তির পরিণতিও আনতে পারে।

এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:

Post Comment