আবার ৬৪ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
স্ট্রিম প্রতিবেদক
উম্মেদ আলী পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভারতের গুজরাটে বাস করতেন। সেখান থেকে প্রথমে বিমানে, পরে বাসে গুজরাট থেকে ত্রিপুরায় নিয়ে আসা হয়। বুধবার (২১ মে) রাতে হাত-চোখ বেঁধে তাঁর পরিবারের সদস্যসহ আরও অনেককে ফেনী নদীতে ছেড়ে দিলে কোনোমতে বাংলাদেশ সীমান্তে উঠে আসেন। আবার ভারত সীমান্তে ফেরত গেলে বিএসএফ তাঁদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে বলে তিনি জানান।
উম্মেদ আলী ও স্ত্রী-সন্তানসহ এই পরিবারের পাঁচজনকে খাগড়াছড়ির রামগড় থেকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি)। একইভাবে কুমিল্লা ও ফেনী সীমান্ত দিয়ে ৫২ জনকে ঠেলে পাঠালো ভারতের সীমান্তরক্ষী (বিএসএফ)। এ ছাড়া মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার মুরইছড়া সীমান্ত দিয়ে আবার সাতজনকে ‘ঠেলে পাঠানো’ হয়েছে।
বুধবার (২১ মে) রাত থেকে বৃহস্পতিবার (২২ মে) সকাল পর্যন্ত মোট ৬৪টি জনকে বাংলাদেশ সীমান্তে ঠেলে দিয়েছে বিএসএফ। তারা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক হলেও দীর্ঘদিন ধরে ভারতে বসবাস করছিলেন বলেন জানা গেছে। সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার পর থেকেই বিএসএফের পক্ষ থেকে এই ধরনের ঠেলে পাঠানো মুখোমুখি হচ্ছে সীমান্ত রক্ষীরা।
হাত-চোখ বেঁধে ফেনী নদীতে
এদিকে খাগড়াছড়ির রামগড় সীমান্ত দিয়ে পাঁচজনকে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ। বৃহস্পতিবার (২২ মে) সকাল ৬টার মধ্যে উপজেলার রামগড় পৌরসভার ফেনীরকুল চর এলাকার সীমান্ত দিয়ে তাদের বাংলাদেশে ভূখণ্ডে প্রবেশ করানো হয়। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে বিজিবি সদস্যরা তাদের আটক করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে রামগড় উপজেলা প্রশাসন।
একই পরিবারের সদস্য পাঁচজন ভারতের গুজরাটের বাসিন্দা ছিলেন বলে জানা গেছে। তারা হলো মো. উম্মেদ আলী (৪২), তাঁর স্ত্রী সেলিনা বেগম (৩৫) এবং তাদের তিন মেয়ে— রুমি খাতুন (১৫), রুম্পা খাতুন (১২) ও সুমামিয়া খাতুন (৮)।
তবে খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আরেফিন জুয়েল জনান, বিএসএফের ঠেলে দেওয়া পাঁচজন কুড়িগ্রামের সদর থানার চর সুপার কুটি গ্রামের বাসিন্দা বলে ওই এলাকার চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যের সঙ্গে কথা বলে পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। আইনী প্রক্রিয়া শেষে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
জানা যায়, ফেনী নদী পার হয়ে রামগড়-ফেনী সড়কের সোনাইপুল বাজার যাত্রী চাউনিতে অবস্থান করছিলেন ৫ সদস্যদের ওই পরিবার। স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের আটকে রেখে মহামুনি ক্যাম্পকে খবর দিলে বিজিবি সদস্যরা তাদের হেফাজতে নিয়ে যান।
আটক মো. উম্মেদ আলী জানান, তাঁদের প্রথমে বিমানে, পরে বাসে করে গুজরাট থেকে ত্রিপুরায় নিয়ে আসা হয়। বুধবার রাতে হাত-চোখ বেঁধে তাঁর পরিবারের সদস্যসহ আরও অনেককে ফেনী নদীতে ছেড়ে দিলে, কোনো মতে জীবন নিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে উঠে আসেন। আবার ভারত সীমান্তে গেলে সবাইকে মেরে ফেলবে বলে বিএসএফ পক্ষ থেকে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান ।
রামগড়ের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইসমত জাহান তুহিন বলেন, রামগড় সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ‘অনুপ্রবেশকারী’ পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ ও বিজিবির হেফাজতে রাখা হয়েছে। বিজিবির সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে।
তিন সীমান্ত এলাকায় আটক ৫২ জন
কুমিল্লা ও ফেনী সীমান্ত দিয়ে ৫২ জনকে ‘ঠেলে পাঠিয়েছে’ বিএসএফ। বুধবার (২১ মে) মধ্য রাত থেকে বৃহস্পতিবার (২২ মে) ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত তাদের ঠেলে পাঠানো হয়। পরে তাদের আটক করে বিজিবি।
কুমিল্লার ১০ বিজিবি, কুমিল্লা দক্ষিণাঞ্চল ও ব্রহ্মণবাড়িয়ার ৬০ বিজিবি ও ফেনীর ৪ বিজিবির সদস্যরা তাদের গ্রেপ্তার করে। বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক ক্ষুদে বার্তায় এসব তথ্য জানান বিজিবির কুমিল্লা ব্যাটালিয়ন (১০ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মীর আলী এজাজ।
আটক ৫২ জনের মধ্যে ১৯ জন পুরুষ, ১৫ জন নারী ও ১৮ জন শিশু রয়েছে। তারা সবাই বাংলাদেশি বাসিন্দা জানানো হয়েছে, তবে তারা কবে থেকে কীভাবে ভারতে অবস্থান করছিলেন জানা যায়নি।
লে. কর্নেল মীর এজাজ বলেন, ভারত থেকে বাংলাদেশে ‘অনুপ্রবেশের’ সময় বিজিবির টহলদল তাদের আটক করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক ব্যক্তিরা জানিয়েছে, তাদের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ। আটক সবাই বাংলাদেশী নাগরিক, তাদের পরিচয় নিশ্চিত করার কার্যক্রম চলমান আছে। যাচাই-বাছাই শেষে তাদের জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলেও বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
কুলাউড়া সীমান্তে সাতজন আটক
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের মুরইছড়া সীমান্ত দিয়ে শিশুসহ সাতজনকে ‘ঠেলে পাঠিয়েছে’ বিএসএফ। বৃহস্পতিবার (২২ মে) সকাল ৮টার দিকে উপজেলার সীমান্তবর্তী তুতবাড়িসংলগ্ন এলাকা দিয়ে তাদের পাঠানো হয়। স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে বিজিবির সদস্যরা তাদের আটক করেন।
আটক ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন পুরুষ, দুজন নারী ও তিনজন শিশু রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা সবাই কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা বলে বিজিবি সূত্রে জানা গেছে। এর আগে ১৫ মে একই সীমান্ত এলাকা দিয়ে ঠেলে দেওয়া ১৪ জন বাংলাদেশিকে আটক করেছিল বিজিবি।
৪৬ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ এস এম জাকারিয়া বলেন, ‘আটক ব্যক্তিরা সবাই বাংলাদেশি নাগরিক। তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। আমরা তাদের কুলাউড়া থানায় হস্তান্তর করব।’
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. গোলাম আপছার বলেন, বিজিবি আটক ব্যক্তিদের থানায় হস্তান্তর করলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:
Post Comment