×

রাজনৈতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া সেনাবাহিনীর কাজ নয়: নাহিদ ইসলাম

স্ট্রিম প্রতিবেদক

দেশের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির  (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘সেনাবাহিনী দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তার কাজ নয় রাজনৈতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া।’

আজ শনিবার (২৪ মে) দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর বাংলামোটরের রূপায়ণ টাওয়ারে অবস্থিত দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বে এ কথা বলেন নাহিদ ইসলাম।

জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার, বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ও আগামী জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে দেশে নানা আলোচনা চলছে। এই পরিস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলন করল এনসিপি।

নাহিদ ইসলাম ছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন ।

সংবাদ সম্মেলনে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার, বিভিন্ন সংস্কার ও আগামী জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানান নাহিদ ইসলাম। এ ছাড়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা উচিত বলে উল্লেখ করেন তিনি।

নির্বাচন প্রসঙ্গে

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা মনে করি, এই সরকার একটি গণ-অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে তৈরি হয়েছে। ফলে গণ-অভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা, তা বাস্তবায়নে একটা দায়বদ্ধতা তার রয়েছে। শুধু নির্বাচন আয়োজন নয়; বরং জুলাই গণহত্যাসহ বিগত সরকারের আমলের সব অপরাধ, তাঁদের (জড়িত আওয়ামী নেতা) বিচার এবং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের মধ্যে দিয়েই সরকারকে নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। আমাদের আহ্বান থাকবে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্বে থেকেই রাজনৈতিকভাবে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সমাধানের দিকে যাবেন।’

বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এনসিপির ভূমিকা প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন, ‘বিএনপি সব সময় নির্বাচনের কথা বলছে। আমাদের একমাত্র আকাঙ্ক্ষা নির্বাচন নয়; নির্বাচনের জন্য এমন চাপ প্রয়োগ হলে নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন হবে, সেই দায় ড. ইউনূস নিতে চান না।’

আওয়ামী লীগের আমলের নির্বাচনগুলো নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে দ্রুত স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আয়োজন করা উচিত বলে মন্তব্য করেন অন্তর্তীকালীন সরকারের সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সবাই যাতে দেশের এই পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকে। সব সময় আলোচনার জন্য প্রস্তুত রয়েছে এনসিপি। বাংলাদেশকে বারবার অনৈক্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র। ভারতীয় মিডিয়াতেও প্রচারণা চলছে। আওয়ামী লীগ এই অনৈক্যের পেছনে রয়েছে।’

দুই ছাত্র উপদেষ্টা প্রসঙ্গে

সংবাদ সম্মেলনে বর্তমান সরকারে থাকা দুই ছাত্র উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদের সঙ্গে এনসিপির সম্পর্ক নিয়ে মন্তব্য করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দুই ছাত্র উপদেষ্টার সঙ্গে এনসিপির কোনো সম্পর্ক নেই। তাঁরা সরকারে গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিনিধি। উদ্দেশ্যমূলকভাবে এনসিপির সঙ্গে যুক্ত করে তাঁদের হেয় করা হচ্ছে।’

মানবিক করিডোর সম্পর্কে

সম্প্রতি আলোচিত দেশের দক্ষিণাঞ্জলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক করিডর দেওয়া নিয়ে এনসিপির অবস্থান জানান নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, মানবিক করিডরসহ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে সরকারের বক্তব্যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধোঁয়াশা রাখা উচিত নয়। অন্তর্বর্তীকালী সরকারের সদিচ্ছা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা থাকলে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই বিচার, সংস্কার এবং নির্বাচন সম্ভব।

সেনাবাহিনীর ভূমিকা প্রসঙ্গে

গত বৃহস্পতিবার (২২ মে) রাত দশটার দিকে জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সেনানিবাসের অভ্যন্তরে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ করে আইএসপিআর (আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর)। এই তালিকা আরও আগে দিলে কোনো ধরনের প্রশ্ন উঠত না বলে সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী গণ-অভ্যুত্থান এবং পরবর্তীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তবে ১/১১-এর মতো ঘটনায় ইতিপূর্বে ভালো ভূমিকা রাখেনি।’

রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‌‘আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিভিন্ন সময় দেখেছি সেনাবাহিনীর সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক কখনো কখনো তৈরি হয়। আমরা ১/১১-এর ঘটনা জানি। এসব ঘটনা কিন্তু আমাদের গণতন্ত্রের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য এবং আমাদের সেনাবাহিনী প্রতিষ্ঠান হিসেবে, কারও জন্য কোনো ভালো ফলাফল নিয়ে আসেনি। সে বিষয়টা যেন আমরা সবাই বিবেচনা করি। যার যেটা কাজ, যার যেটা দায়িত্ব, সেটা যাতে সবাই পালন করে।’

সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বে এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সেনাবাহিনীর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আছে। সেনাবাহিনী দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তার কাজ নয় রাজনৈতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া। তার কাজ দেশের প্রতিরক্ষা, দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ক্রাইসিস মোমেন্টে তারা এখন রাস্তায় আছে, আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি দেখতেছে।’

যা বললেন আখতার হোসেন

সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্রান্তিকাল পার করছে। আমরা ১/১১-এর আভাস পাচ্ছি। যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গণ-অভ্যুত্থান, তা অপূর্ণ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে সংস্কার, বিচার, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন ও জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।’

আখতার হোসেন আরও বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে স্থিতিশীলতা জরুরি। সব রাজনৈতিক দলের সহযোগিতার মনোভাব ব্যক্ত করা এখন জরুরি। বাকি বিষয়ে পরবর্তীতে আলোচনা করা যাবে।’

এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:

Post Comment