×

ইশরাকের শপথ জটিলতা: যা হয়েছে, যা হচ্ছে

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে দেওয়া রায় ও গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে লিভ টু আপিল করা হয়েছে। ২৬ মে সোমবার আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) দায়ের করা হয়।  

চলতি বছরের ২৭ মার্চ ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে রায় দেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল। এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। 

এই রায় ও গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে ১৩ মে আদালতে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মামুনুর রশিদ। কিন্তু শুনানি শেষে গত ২২ মে আদালত রিটটি খারিজ করে দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধেই আজ লিভ টু আপিল দায়ের করা হলো।  

আজ বা আগামীকাল চেম্বার আদালতে লিভ টু আপিলের শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন লিভ টু আপিলকারী জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন। 

কেন এখনো শপথ হচ্ছে না

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণার ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চেয়ে গত ২২শে এপ্রিল চিঠি দেয় ইসি। কিন্তু মন্ত্রণালয় কোনো মতামত দেওয়া আগেই গেজেট প্রকাশ করা হয়। 

এ ব্যাপারে ২৮ এপ্রিল আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের মতামত চাইলেও, মতামত দেওয়ার অপেক্ষা না করেই গেজেট নোটিফিকেশন করেছে, আমাদের জন্য অপেক্ষা করে নাই। এখানে আমাদের বলার কিছু নাই।’ এরপর গত ১৩ মে এই রায় ও গেজেটের বিরুদ্ধে আদালতে রিট করা হয়।  

১৯ মে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে শপথ না হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ তুলে ধরেন। তিনি লেখেন, ‘প্রথমত, আর্জি সংশোধন অবৈধ মর্মে হাইকোর্টের রায় লঙ্ঘন করে নির্বাচন কমিশন ট্রাইব্যুনাল এই রায় প্রদান করেছে। দ্বিতীয়ত, নির্বাচন কমিশন শুনানিতে অংশগ্রহণ না করায় একপাক্ষিক রায় হয়েছে এবং পরবর্তীতে কমিশন আপিলও করেনি। তৃতীয়ত, আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হলেও, মতামত দেওয়ার আগেই এবং একই সাথে দুইজন নাগরিকের পাঠানো আইনি নোটিশ উপেক্ষা করে রাত ১০টায় গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন।’ 

সমর্থকদের আন্দোলন 

ইশরাক হোসেনের শপথের দাবিতে ১৪ মে থেকে আন্দোলন করছেন তাঁর সমর্থকেরা। এ সময় নগরভবনের সামনের রাস্তা ও কাকরাইল মোড় দখল করে আন্দোলন করেছেন তাঁরা। বর্তমানে নগরভবনের দাপ্তরিক কাজ ও নাগরিক সেবা প্রায় পুরোপুরি বন্ধ আছে।   

ইশরাককে শপথ পড়াতে আজ নগরভবন থেকে আন্দোলনকারীরা ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন। এই অবস্থান কর্মসূচির প্রধান সমন্বয়ক মশিউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিলাম, যার ২৪ ঘণ্টা শেষ হয়েছে। কিন্তু দাবি মেনে নেওয়া হয়নি। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি ইশরাক হোসেনকে মেয়রের শপথ পড়ানো না হয়, তাহলে আবার কঠিন থেকে কঠিনতর আন্দোলনে নামব। আন্দোলনের মাধ্যমে ঢাকাবাসী তাঁকে মেয়রের পদে বসাবে।’

ইশরাক-আসিফের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য

১৯ মে আসিফ মাহমুদ নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে লেখেন, ‘যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে বরং গায়ের জোরে (শপথ) আদায় করার উদ্দেশ্যেই নগর ভবন বন্ধ করে মহানগর বিএনপি এই আন্দোলন চালাচ্ছে। ফলে সিটি কর্পোরেশনের দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হওয়াসহ জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।’ 

ইশরাক হোসেনের কার্যক্রমকে আক্রমণাত্মক ও অপমানজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এসকল জটিলতা নিরসন হলে স্থানীয় সরকার বিভাগের শপথ দিতে কোন সমস্যা নেই। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার বিরুদ্ধে ইশরাক হোসেনের এই আক্রমণাত্মক ও অপমানজনক কার্যক্রমের কোন কারণ খুঁজে পেলাম না! আবার কেও বলবেন না যে এটা সাধারণ জনগণ করছে। কারণ বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন দলের নির্দেশনা এবং গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী দলীয় নেতাকর্মীরাই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।’

আসিফের পোস্ট দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই ইশরাক নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে লেখেন, ‘মেয়র ফেওর কিছু না। অন্তর্বর্তী সরকারের কতিপয় বাক্তির অন্তরে ক্ষমতার লোভ ও এটি চিরস্থায়ী করার কুৎসিত সত্যটা বের করে আনাটাই ছিলো মুখ্য উদ্দেশ্য।’ 

এর দুই দিন পর ২১ মে কাকরাইল মসজিদের সামনে এক অবস্থান কর্মসূচিতে দুই ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেন ইশরাক। তাঁদের বিরুদ্ধে অন্যায্য হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘এই সরকারের মধ্যে নতুন দলের কয়েকজন রয়ে গেছে। এই দলের প্রতি আমাদের অনেকে আশাবাদ ছিল। তাঁদের দুজন উপদেষ্টা এই সরকারে থেকে অনেক কিছুতে হস্তক্ষেপ করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে মেয়র হিসেবে আদালতের দেওয়া রায়ের ওপর তাঁরা হস্তক্ষেপ করছে। এখনই স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের পদত্যাগ দাবি করছি। তাঁদের সঙ্গে আমার কোনো ব্যক্তিগত পরিচয় নেই, কোনো শত্রুতা নেই।’ 

মেয়র না হলেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিতে চান ইশরাক 

২৩ মে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে ইশরাক হোসেন বলেন, শপথ কেবল আনুষ্ঠানিকতা। বরং ‘জনতার মেয়র’ হিসাবে আগামী কোরবানির ঈদের আগে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি তাঁর দায়িত্ব।   

তিনি আরও বলেন, উত্তরে মেয়র না থাকায় সেখানকার প্রশাসন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের দায়িত্ব পালনে তিনি সহায়তা করবেন। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে সাবেক কাউন্সিলর ও বিগত নির্বাচনের প্রার্থীদের সমন্বয়ে জোনভিত্তিক একটি মনিটরিং টিম গঠন করা হবে বলেও তিনি এ পোস্টে জানান। 

 

এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:

Post Comment