কক্সবাজার উপকূলে ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকছে, পাহাড়ধসের আশঙ্কা
স্ট্রিম প্রতিবেদক
উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে থাকা সুস্পষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে। পাশাপাশি জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ২ থেকে ৩ ফুট বেড়েছে। এই পানি ঢুকে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলের ভাঙা বেড়িবাঁধের ১৫টি এলাকা দিয়ে অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে মহেশখালীতে জোয়ারে ভেসে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে এক ব্যক্তির। এ ছাড়া কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড়ধসের আশঙ্কা রয়েছে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আজ বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বিকেলে আবহাওয়া অধিদপ্তর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তার আশপাশের এলাকায় অবস্থান করা নিম্নচাপের প্রভাবে ঝড়ো-হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এতে কক্সবাজারসহ চার সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সর্তক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে সাগরে অবস্থানরত সব ধরনের নৌযানকে নিরাপদে আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আবদুল হান্নান জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টা কক্সবাজারে ৯২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী শনিবার (৩১ মে) পর্যন্ত আবহাওয়া পরিস্থিতি একই রকম থাকতে পারে। এ ছাড়া সাগর উত্তাল থাকায় কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সতর্ক করে সৈকতে লাল পতাকা টানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
ভাঙা বেড়িবাঁধ, পানি ঢুকে প্লাবিত ২০ গ্রাম
জেলার কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া ও টেকনাফ সমুদ্র উপকূলের অন্তত ১৫টি এলাকায় ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে কমপক্ষে ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নে কবি জসীমউদদীন উচ্চবিদ্যালয়ের পাশে বেড়িবাঁধলাগোয়া বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প। বিদ্যুৎ প্রকল্প ভবনের দক্ষিণ পাশে ৫০ মিটারের মতো ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকছে। এতে ওই ইউনিয়নের পূর্বপাড়া, সন্দ্বীপীপাড়া, হাইস্কুলপাড়া ও শান্তি বাজার এলাকা অন্তত তিন ফুট জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
পার্শ্ববর্তী কৈয়ারবিল ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান শফিউল আলম কুতুবী জানান, তাঁর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়িবাঁধসংলগ্ন মৌলভিপাড়া ও মফজল আহমদপাড়ার অন্তত ২০০ বাড়িতে পানি ঢুকেছে।
একইভাবে উপজেলার উত্তর ধুরং ইউনিয়নের মিয়ারাকাটা ও দক্ষিণ ধুরংয়ের বাতিঘরপাড়া এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আল আজাদ।
কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ক্য থোয়াই প্রু মারমা বলেন, বায়ুবিদ্যুৎ এলাকার বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি ওঠানামা করছে। দ্বীপের ৭-৮ পয়েন্টে বেড়িবাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এসব ভাঙা অংশ দ্রুত মেরামত করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) বলা হয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে ইউএনও ক্য থোয়াই প্রু মারমার সভাপতিত্বে কুতুবদিয়ায় উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক জরুরি সভা হয়েছে। সভায় বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট হওয়া ঝড় মোকাবিলায় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বেড়িবাঁধ ভেঙে যেসব গ্রাম প্লাবিত হয়েছে, সেসব এলাকার লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি সব আশ্রয়কেন্দ্র ও স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কক্সবাজার পাউবো উপবিভাগীয় প্রকৌশলী জামাল মোর্শেদ জানান, ‘কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ১৫টি ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের তোড়ে পানি ঢুকে প্লাবিত হচ্ছে।’
পাহাড়ধসের সতর্কবাতা
জেলার টেকনাফ ও উখিয়ার পাহাড়ে ৩৩টি রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির রয়েছে। এসব আশ্রয়শিবিরে অন্তত ১৩ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। তাদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ রোহিঙ্গা পাহাড়ের ঢাল ও নিচের দিকে ঝুঁকি নিয়ে বাস করছে।
এ ছাড়া জেলার সদর, ঈদগাঁও, রামু, চকরিয়া, মহেশখালী ও পেকুয়ায় স্থানীয় লাখো পরিবার পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। প্রতিবছর বর্ষায় বৃষ্টিতে এসব এলাকায় পাহাড়ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। গত বছরের বর্ষা মৌসুমে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির এবং জেলা বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসে অন্তত ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ তিন পার্বত্য জেলায় অতি ভারীবর্ষণে পাহাড়ধসের আশঙ্কা রয়েছে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:
Post Comment